সুমন তরফদার। কলকাতা সারাদিন।
ধর্ষণ-বিরোধী কঠোর আইন চেয়ে ফের নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লিখলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আগেরবার যে চিঠি লিখেছিলেন, সেটার জবাব প্রধানমন্ত্রী নিজে না দেওয়ায় হতাশাপ্রকাশ করে ‘সমাজের বৃহত্তর স্বার্থে’ শুক্রবার পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, ‘ধর্ষণ এবং ধর্ষণ ও খুনের মতো জঘন্য অপরাধের বিরুদ্ধে যাতে কেন্দ্রীয় আইন নিয়ে আসা হয়, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করা যায় এবং সেই আইনে যাতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিচারপ্রক্রিয়া শেষ করার নিয়ম থাকে, সেই বিষয়টি বিবেচনা করে দেখার জন্য আপনাকে ফের আমি আন্তরিকভাবে আবেদন জানাচ্ছি।’ সেইসঙ্গে ধর্ষণে অভিযুক্তদের বিচারপ্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য রাজ্য সরকারের তরফে কী কী পদক্ষেপ করা হয়েছে, তারও খতিয়ান তুলে ধরেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী।
রাজ্যের ‘ব্যর্থতা’ তুলে ধরেছিল কেন্দ্র, পালটা মমতার
রাজ্য সরকারের পদক্ষেপ নিয়ে মমতা যে খতিয়ান তুলে ধরেছেন, সেটা আদতে কেন্দ্রীয় নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রী অন্নপূর্ণা দেবীর চিঠির উত্তর হিসেবে দিয়েছেন বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল। আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসকের (স্নাতকোত্তরের দ্বিতীয় বর্ষের পড়ুয়া) ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনার পরে গত ২২ অগস্ট মোদীকে চিঠি লিখে ধর্ষণ-বিরোধী কঠোর আইন প্রণয়নের আর্জি জানিয়েছিলেন মমতা। সেটার পালটা জবাব দিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রী অন্নপূর্ণা।
যেটা করার কথা, সেটা করেনি রাজ্য, অভিযোগ অন্নপূর্ণার
কেন্দ্রীয় নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রী দাবি করেছিলেন, ধর্ষণের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে কঠোর শাস্তির বিধান আছে ভারতীয় ন্যায় সংহিতায়। যা ২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে দেশজুড়ে কার্যকর হয়েছে। তাছাড়াও মমতা ধর্ষণ-বিরোধী কঠোর আইন প্রণয়নের আর্জি জানালেও তাঁর রাজ্যেই সব ফাস্ট ট্র্যাক স্পেশাল কোর্ট চালু করা হয়নি। তিনি দাবি করেছিলেন যে কেন্দ্র-রাজ্যের যৌথ প্রকল্পের আওতায় পশ্চিমবঙ্গ ১২৩টি ফাস্ট ট্র্যাক স্পেশাল কোর্ট (শুধু পকসো মামলার জন্য ২৩টি, পকসো ও ধর্ষণ মামলা মিলিয়ে ১০৩টি) খোলার অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। ২০২৩ সালের জুনের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত একটি কোর্টও চালু করা হয়নি।
‘৪৮,৬০০টি ধর্ষণে ও পকসো মামলা পড়ে….’
তিনি আরও দাবি করেছিলেন , ২০২৩ সালের ৮ জুন চিঠি দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফে জানানো হয়েছিল যে সাতটি ফাস্ট ট্র্যাক স্পেশাল কোর্ট চালু করতে চাইছে। পরিবর্তিত লক্ষ্যমাত্রা হিসেবে পশ্চিমবঙ্গে ১৭টি ফাস্ট ট্র্যাক স্পেশাল কোর্ট চালু করার অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল।
কিন্তু ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত স্রেফ পকসো আইনের মামলার শুনানির জন্য নির্দিষ্ট ছ’টি আদালত চালু করা হয়েছে। ৪৮,৬০০টি ধর্ষণের মামলা এবং পকসো মামলা পড়ে থাকলেও বাকি ১১টি ফাস্ট ট্র্যাক স্পেশাল কোর্ট চালুর বিষয়ে কোনও উদ্যোগ দেখায়নি রাজ্য সরকার।
রাজ্য কী কী করেছে? খতিয়ান মমতার
আর আজ পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী যে চিঠি পাঠিয়েছেন, তাতে তিনি দাবি করেছেন যে পকসো মামলার শুনানির জন্য ১০টি বিশেষ কোর্ট তৈরি করেছে রাজ্য সরকার। পুরো রাজ্যের টাকায় ৮৮টি ফাস্ট ট্র্যাক স্পেশাল কোর্ট চলছে। শুধুমাত্র পকসো মামলার জন্য চলছে ৬২টি কোর্ট। এইসব মামলার বিচারপ্রক্রিয়া শেষের বিষয়টি পুরোপুরি আদালতের হাতে আছে। সেইসঙ্গে ১১২ এবং ১০৯৮ হেল্পলাইন নম্বর আছে। জরুরি পরিস্থিতির জন্য ‘ডায়াল ১০০’ নম্বরও রয়েছে বলে জানান পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী।
সেইসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেন, কেন্দ্রীয় নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রী যে চিঠি পাঠিয়েছেন, তাতে গুরুত্ব সহকারে তাঁর আবেদন বিচার করা হয়নি। বরং একেবারে থোড় বড়ি খাড়া, খাড়া বড়ি থোড় মার্কা উত্তর দেওয়া হয়েছে। বিষয়টা যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, সেটা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বিচার করেননি বলে দাবি করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী।