সুমন তরফদার। কলকাতা সারাদিন।
হোয়াট বেঙ্গল থিংকস টুডে, ইন্ডিয়া থিঙ্ক টুমোরো। মহামতি গোখলের এই বক্তব্য কতখানি সত্যিই তা প্রমাণিত হলো আরো একবার।
বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ধর্ষণ এবং নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে যে কঠোর আইনের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে একাধিকবার চিঠি দিয়েছেন তা অবশেষে মেনে নিতে বাধ্য হলেন প্রধানমন্ত্রী নিজে।
সুপ্রিম কোর্টের অনুষ্ঠানের মঞ্চে দাঁড়িয়ে স্বীকার করে নিলেন দেশে এই মুহূর্তে নারী নির্যাতন বিরোধী যে সমস্ত আইন রয়েছে তা যথেষ্ট নয়।
সেইসঙ্গে মমতার দাবি মেনেই প্রকাশ্য মঞ্চ থেকে স্বীকার করে নিলেন দ্রুত বিচার প্রয়োজন এই ধরনের অপরাধের ক্ষেত্রে।
মহিলাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দেশে একাধিক আইন রয়েছে। কিন্তু এই আইনগুলিকে আরও মজবুত, সক্রিয় করতে হবে। দেশজুড়ে মহিলাদের উপরে নির্যাতন এবং ধর্ষণের মতো ঘটনা অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষিতে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর সুরেই দেশে নতুন কঠোর আইন প্রবর্তনের পক্ষের সওয়াল করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। প্রসঙ্গত গতকাল এবং গত সপ্তাহে পরপর দুটি চিঠি প্রধানমন্ত্রীকে পাঠিয়েছেন মমতা। দুই চিঠিতেই মমতা বারে বারে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানিয়েছেন দেশজুড়ে মহিলাদের বিরুদ্ধে অত্যাচার এবং ধর্ষণের মতো ঘৃণ্য ঘটনার প্রতিরোধে সংসদে কঠোরতম আইন প্রবর্তনের প্রয়োজন রয়েছে।
আজ দিল্লিতে সুপ্রিম কোর্টের ৭৫ বর্ষপূর্তি উপলক্ষে একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দেশের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় সহ সুপ্রিম কোর্টের অন্যান্য বিচারপতিরাও। সেখানেই নরেন্দ্র মোদি বলেন, সমাজের প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে মহিলাদের উপরে নির্যাতন এবং অত্যাচারের ঘটনা। মহিলাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে মহিলাদের বিরুদ্ধে হওয়া অত্যাচারের দ্রুত বিচারের প্রয়োজন। আজ নারীর বিরুদ্ধে একের পর নৃশংস ঘটনা ঘটছে। পাশাপাশি শিশুদের নিরাপত্তা সমাজের কাছে গুরুতর উদ্বেগের বিষয়। মহিলাদের উপরে নির্যাতন ও শিশুদের সুরক্ষা সমাজে চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে। ২০১৯ সালে ফাস্ট ট্রাক কোর্ট আইন পাস হয়, যার অধীনে উইটনেস ডিপোজিশন সেন্টার তৈরি করা হয়েছে। জেলার মনিটরিং কমিটিও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। মহিলাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এই কমিটি যাতে আরও শক্তিশালী হয় এবং দ্রুত বিচারপ্রক্রিয়া শেষ হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রীর কাছে লেখা প্রথম চিঠিতে মমতা গত সপ্তাহেই দাবি তুলেছিলেন ধর্ষণের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রবর্তন করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে উদ্যোগ গ্রহণ করার। তারপরেই মহারাষ্ট্রের একটি জনসভা থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বিষয়টিকে ঢাকা দেওয়ার জন্য সাফাই দিয়েছিলেন ব্রিটিশ আমলের ভারতীয় দণ্ডবিধি পরিবর্তন করে তার সরকার যে ভারতীয় ন্যায় সংহিতা নামে নতুন আইন প্রবর্তন করেছে গোটা দেশে তাতে নাবালিকা ধর্ষণের ঘটনায় মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। কিন্তু তারপরেই মমতা তাঁর লেখা দ্বিতীয় চিঠিতে আরো একবার এই আইনের সংকীর্ণতা তুলে ধরে দ্রুত বিচারের জন্য নতুন আইন প্রবর্তন এবং কঠোরতম শাস্তির বিধান রাখার দাবি তোলেন। মমতা প্রধানমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে দাবি করেছিলেন ১৫ দিনের মধ্যে মহিলাদের উপরে অত্যাচার বা ধর্ষণের ঘটনায় বিচার প্রক্রিয়া শেষ করার ব্যবস্থা করতে হবে নতুন আইনে।
সুপ্রিম কোর্টের অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে দেশের প্রধান বিচারপতির পাশে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর নাম না করলেও কার্যত সেই দাবিকেই সমর্থন জানিয়ে বলেন, বিচার শেষ হবে, সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, ততই জনগণের সুরক্ষা নিশ্চিত হবে। বিগত ১০ বছরে বিচারব্যবস্থার পরিকাঠামো উন্নয়নে এবং দ্রুত যাতে ন্যয় বিচার হয়, তা নিশ্চিত করতে একাধিক পদক্ষেপ করা হয়েছে।