এসএসকেএম-এ কাঁচি কেলেঙ্কারির অভিযোগ ঘিরে প্রশ্নের মুখে রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা। মূলত এসএসকেএম-এ প্রসূতি বিভাগে অপারেশন থিয়েটারে রোগীর পেট কাটতে গিয়ে ভাঙে মরচে ধরা কাঁচি ! ভাঙা কাঁচির ছবি পোস্ট করে মঙ্গলবারই প্রতিবাদে সরব হয়েছে জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রন্ট।
এই ঘটনায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘এর জন্য দায়ী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়’।
শুভেন্দু বলেন, ‘জং ধরা কাঁচি পাওয়া যাচ্ছে এসএসকেম-এ। যাকে নিয়ে আমরা গর্ব করি, যে পশ্চিমবঙ্গের সবচেয়ে ভাল হাসপাতাল। আর সেখানেই জং ধরা কাঁচি পাওয়া গিয়েছে! আমাদের তো বলার কিছু নেই। ১৩ বছর পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় স্বাস্থ্য বাজেট হয় না। এরাজ্যে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে গিলোটিনে পাঠানো হয়েছে। এজন্য দায়ী রাজ্যের অপদার্থ-অযোগ্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী, যিনি সন্দীপ ঘোষের মাথার উপরে হাত ছিল, সেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।”
ভুলে ভরা আবাস যোজনার তালিকা
এ বছর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিশেষ জোর দিয়েছিলেন আবাস যোজনার তালিকা প্রস্তুতিতে। অনেক রকম সতর্কতা অবলম্বন করার নির্দেশ এসেছিল নবান্ন সূত্রে। এর পরেও ‘ভুল’ ধরালেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর দাবি, “আবাস যোজনার তালিকা ভুলে ভরা। ১৭টা টিম পাঠিয়েছিল ভারত সরকার। অযোগ্যরা পেয়েছে, যোগ্যরা পায়নি।”
এর প্রেক্ষিতে শুভেন্দু বলেন, “তিনি আবাস যোজনার বাড়ি দিতে চান, নাম বাদ গিয়েছে। যে নাম এসেছে তৃণমূলের লোকের। বিস্তারিত দিতে পারি।”
আবাস যোজনার ঘরের তালিকা প্রস্তুতিতে নিযুক্ত অজস্র সরকারি কর্মচারী এবং বিশেষজ্ঞরা। সেখানেও ‘গলদ’ দেখলেন বিরোধী দলনেতা। তাঁর কথায়, “সার্ভে যারা করতে যাচ্ছেন, জানি। চোর নেতারা যাচ্ছে। টাকার অফার দেওয়া হচ্ছে। সবাই ভাবছে লুটে নাও।”
এর পরই ভোটের কথা মনে করিয়ে তৃণমূলকে আক্রমণ শুভেন্দুর। তিনি বলেন, “১৫ মাস সরকার আছে। কালিয়াচকে দড়ি দিয়ে বেঁধে রেখেছে। মথুরাপুরে তালা লাগানো হয়েছে। জালি বিডিও অনেক আছে। অনেকে আছে যাদের চাকরি যাবে। বলছি মেল করুন আদালতে যাব। আন্দোলন করুন, আটকে রাখুন এদের। যে ভাবে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ছে সরকারকে বিড়ম্বনায় ফেলবে। মমতা সাত লক্ষ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন। আবার নেবেন।”
সম্প্রতি সিপিএম নেতা তন্ময় ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে যে শ্লীলতাহানির অভিযোগ ওঠে তা নিয়েও বক্তব্য রয়েছে শুভেন্দুর। তাঁর কথায়, “মমতা বন্দোপাধ্যায় সিপিকে বল দিয়েছে। লোক দেখানো করছে। আমি বলছি তন্ময় ভট্টাচার্যকে হেপাজতে নিয়ে তরুণীর সামনে বসিয়ে জেরা করাক। ইন্ডিপেন্ডেন্ট এজেন্সি কে দিয়ে দিন। না হলে অনেক দায়িত্বশীল মহিলা অফিসার আছেন। ইনভেস্টিগেশন শেষ করুন। আরজিকর থেকে জয়নগর কালী মেখে বসে থাকা তৃণমূল মহিলা-দরদী সাজছে।”
এদিন শুভেন্দু বলেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পুলিশ কমিশনারকে বলে দিয়েছেন, তন্ময় ভট্টাচার্যকে গ্রেফতার করবেন না। এগুলো যা করছে লোক দেখানো। আমি দাবি করছি, যদি অভিযোগের এতটুকু সত্যতা থাকে তাহলে তন্ময় ভট্টাচার্যকে গ্রেফতার করে হেফাজতে নিয়ে অভিযোগকারিনীর সামনে বসিয়ে জেরা করা হোক। আর যদি অভিযোগ মিথ্যা হয় তাহলে আইন যেন আইনের পথে চলে। আর সিপিএমের বড় নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই কেসটা নিরপেক্ষ সংস্থার হাতে দিয়ে দিন। যদি না ছাড়তে চান তাহলে এই রাজ্যে অনেক নিরপেক্ষ মহিলা আই পি এস আছেন তাদের কারও নেতৃত্বে একটা সিট গঠন করে তদন্ত করুন। তৃণমূল মিছিল করছে কেন? তন্ময়বাবু দোষী হলে পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করুক। পুলিশ তো তৃণমূলেরই হাতে। আরজি কর থেকে জয়নগরের ঘটনায় তৃণমূল মুখে যে ভাবে চুনকালি মেখেছে তা এভাবে ধোয়া যাবে না।’
শুভেন্দুর দাবি, রাজ্যের ৭২টি জায়গায় জমি দিচ্ছেন না মমতা। জমি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। না হলে সরাসরি অধিগ্রহণ করতে উদ্যোগ নিয়েছে। তাঁর কথায়, “সম্প্রতি ৪১ জনকে ধরেছেন। গোটা ভারতবর্ষে রোহিঙ্গা পাঠানোর দায়িত্ব মমতা নিয়েছেন। হিন্দুদের হোমল্যান্ডের ৯টা জেলা হাতছাড়া হয়েছে। আগামী দিনে সনাতনীদের হবে না। বিভিন্ন জায়গায় মা দূর্গার মূর্তি ভাঙা হয়েছে।”