সুমন তরফদার। কলকাতা সারাদিন।
শাহজাহান কাণ্ডের পরে প্রথমবারের জন্য সন্দেশখালি সফরে যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধায়। গত লোকসভা নির্বাচনের আগে কার্যত একাধিকবার সংবাদ শিরোনামে উঠে এসেছিল এই এলাকা। এলাকার তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহানের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে মারধর থেকে শুরু করে মহিলাদের উপর অত্যাচার। একের পর এক মারাত্মক অভিযোগে সরগরম হয়ে উঠে রাজ্য রাজনীতি। যদিও ভোটের ফলাফলের ক্ষেত্রে শাহজাহান কান্ডের কোন প্রভাব পড়েনি। বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রের নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয় পেয়েছিল তৃণমূল।
সেই সন্দেশখালিতেই পা রাখছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আগামী ৩০ ডিসেম্বর সেখানে যাবেন তিনি। দুপুর একটায় সন্দেশখালিতেই একটি সরকারি অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে প্রশাসনিক প্রধানের। তাঁর এই সফর খুবই তাৎপর্যপূর্ণ হতে চলেছে বলেই মনে করা হচ্ছে। সরকারি মঞ্চ হলেও সেখান থেকেই বিরোধীদের জবাব মুখ্যমন্ত্রী দিতে পারেন বলেই মনে করা হচ্ছে।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে নবান্নে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই সন্দেশখালি যাওয়ার কথা বলেন। নবান্ন থেকে মুখ্যমন্ত্রী জানান, “এবছর ৩০ ডিসেম্বর আমি সন্দেশখালি যাব। সাধারণ মানুষের কাছে সরকারি পরিষেবা তুলে দেওয়া হবে। নির্বাচনের আগে অনেকে জিজ্ঞেস করেছিল, দিদি আপনি সন্দেশখালি গেলেন না। আমি বলেছিলাম পরে যাব। ৩০ ডিসেম্বর বেলা ১ টায় সরকারি অনুষ্ঠানে থাকবো। লক্ষ্মীর ভান্ডার, বাংলার বাড়ি সহ নানা প্রকল্প আছে। প্রায় ২০ বাজার মানুষকে ওই সেভা থেকে সরকারি পরিষেবা তুলে দেওয়া হবে। আমি মঞ্চ থেকে বড় জোর ১০০ জনের হাতে তুলে দিতে পারব।”
প্রসঙ্গত, নির্বাচনের আগে রেশন দুর্নীতি মামলার তদন্তে সন্দেশখালি গিয়ে তৃণমূলের দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা শেখ শাহজাহানের অনুগামীদের হাতে মার খেতে হয় সিবিআই অফিসারদের। এই ঘটনার ঠিক কয়েকদিনের মাথায় সেখানকার মহিলারা গর্জে ওঠেন।
এরপরেই থাকছে ১লা জানুয়ারি তৃণমূলের প্রতিষ্ঠা দিবস। ২৬ পূর্ণ হয়ে ২৭ এ পা দিচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস। ওই দিন প্রতি বছরের মতোই থাকবে রক্তদান শিবির। তৃণমূল সুপ্রিমো এই প্রসঙ্গে জানান মমতা বলেন, “পয়লা জানুয়ারি সরকারি ছুটির দিন। ওই দিন আমাদের দলেরও প্রতিষ্ঠা দিবস। ২৬ পূর্ণ করে ২৭ এ পা দিচ্ছে। আমি দলের কথা কখনও এখানে বলি না। তবে আমরা যেহেতু বলি মা-মাটি-মানুষের সরকার। আবার দলের তরফেও ওই দিন আমরা মা-মাটি মানুষ দিবস পালন করি। তাই একথা বললাম।” একই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী এও জানান, প্রতি বছরের মতো এবারও দলের প্রতিষ্ঠা দিবসে রাজ্যুড়ে অসংখ্য রক্তদান শিবিরের আয়োজন করবেন দলের কর্মীরা এবং সাধারণ মানুষ। ওই শিবির থেকে অন্যান্য বারের মতো এবারেও ১ লক্ষ প্যাকেট রক্ত সংগ্রহ করা হবে। যা দুর্ঘটনাগ্রস্ত এবং অসহায় মানুষের সেবায় ব্যবহত হবে। এদিনের অনুষ্ঠান থেকে আসন্ন বর্ষবরণ উপলক্ষ্যে রাজ্যবাসীকে আগামী হ্যাপি নিউ ইয়ারের শুভেচ্ছা জানিয়ে মমতা বলেন, “সকলে ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন।”
আগামী ৬ জানুয়ারি গঙ্গাসাগর যাচ্ছেন মমতা। তাঁর গঙ্গাসাগর সফর প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, “প্রথমে ভারত সেবাশ্রম সংঘে যাব। তারপর কপিল মুনির আশ্রমে যাব। ৮ তারিখে মিলেনিয়াম পার্কে একটা মেলা হয় সেখানে যাব। ওখানে একটা ই ভেসেল তৈরি হয়েছে। ওটাও সেদিন উদ্বোধন হবে। এছাড়া আইটিসি একটি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স হাব করছে। ওরা অনুরোধ জানিয়েছে। আমি সময় বের করতে পারছি না।” এছাড়া ফেব্রুয়ারিতে থাকছে বেঙ্গল বিজনেস সামিট। হবে ৫ ও ৬ তারিখে।
পুরীর আদলে দিঘায় তৈরি হচ্ছে জগন্নাথ মন্দির। আগামী ২৯ জানুয়ারি থেকে সেখানে শুরু হবে পুজো পাঠ। ৩০ তারিখ মন্দিরের উদ্বোধন করবেন মুখ্যমন্ত্রী। এছাড়াও জানুয়ারিতে পৌষমেলা থেকে সরস মেলা, কৃষি মেলা, পিঠে পুলির মতো একাধিক মেলার আয়োজন রয়েছে রাজ্যজুড়ে। তারপরই ফেব্রুয়ারির ৫ ও ৬ তারিখ কলকাতায় অনুষ্ঠিত হবে বিশ্ববাণিজ্য সম্মেলন।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, “দুর্গাপুজোকে ঘিরে যেমন খুচরো বাজারের এবং গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা হয়ে ওঠে তেমনই বড়দিন থেকে গোটা জানুয়ারি মাস, নানা মেলা হয়। প্রচুর মানুষ কেনাকেটা করে, এতে প্রান্তিক মানুষের আয় বাড়ে। মনে রাখবেন, ছোট দোকানদারগুলোও কিন্তু পিলার অফ দ্য ইকোনমি।”