সুহানা বিশ্বাস। কলকাতা সারাদিন।
কয়েকদিন আগেই যেভাবে ওড়িশার সিমলীপাল জঙ্গল থেকে বাংলায় বাঘ চলে এসেছিল এবং গত তিন চার দিন ধরে আরো একটি বাঘ বাংলার সীমান্তবর্তী জঙ্গলে চলে এসেছে তা নিয়ে ওড়িশা সরকারের ব্যর্থতা তুলে ধরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “একটা বাঘ পাঁচটা জেলা পেরোল। পাঁচদিন আতঙ্ক ছিল। স্কুলও বন্ধ ছিল। যেই না আমরা বনবিভাগ, প্রশাসন সকলে মিলে উদ্ধার করলাম, সঙ্গে সঙ্গে ফেরত দাও ফেরত দাও বলে ফোন আসতে শুরু করল। ফেরত দিয়ে দিলাম। তোমরা তো ফরেস্টের দেখভাল করবে। যাতে তোমাদের বাঘ আমাদের এখানে ঢুকে না পড়ে। আমাদের গ্রামে আতঙ্ক না ছড়ায়।”
নতুন করে ফের বাঘ এসেছে বলে দাবি মমতার। মুখ্যসচিবকে তাঁর নির্দেশ, “আবার যে বাঘ এসেছে, ওড়িশার সরকারকে বলব রেসকিউ অপারেশন করে নিয়ে যেতে। কারণ আমাদের লোকেরা পাঁচ রাত না ঘুমিয়ে থেকেছে। পাঁচ জেলা বন্ধ, স্কুল বন্ধ, এখন আবার সেই আতঙ্ক। আতঙ্ক আমরা সহ্য করব, আর যেই উদ্ধার করবে, আবার একটা পাঠিয়ে দিয়েছে।”
ওড়িশার সরকারকে নিশানা করে মমতার আরও বক্তব্য, “পাঠালে চিরকালের জন্য পাঠান। আমরা রেখে দেব। তোমাদের জায়গা না থাকলে, আমরা রেখে দিচ্ছি। তোমাদের রাখার জায়গা নেই, বাঘ নিয়ে গিয়ে জলে রেখে দিলে। জল পেরোতে কতক্ষণ। আবার একটা চলে এসেছে। এটা কী হচ্ছে? ওড়িশার সরকারকে দোষারোপ না করে অনুরোধ করব, আপনাদের টিম পাঠিয়ে বাঘ উদ্ধার করে নিয়ে যান। সবসময় আমাদের দোষারোপ করবেন না।”
বাঘিনী উদ্ধারের জন্য পাঁচদিন পাঁচ জেলার মানুষ অনেক দুর্ভোগ সয়েছে বলে অভিযোগ মুখ্যমন্ত্রীর। ওড়িশার সরকারকে মানবিকতার খাতিরে রাজ্যে এসে তাদের বাঘ উদ্ধার করে নিয়ে যেতে আবেদন মুখ্যমন্ত্রীর। প্রসঙ্গত, বাঘিনী জিনাত যাওয়ার পর তার পিছু নিয়ে নাকি পুরুলিয়ার সীমানায় আরও একটি বাঘ চলে এসেছে। পুরুলিয়া সংলগ্ন ঝাড়খণ্ড সীমানায় রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের পায়ের ছাপও মিলেছে বলে জানিয়েছে ঝাড়খণ্ডের বন দফতর।
সোমবার গঙ্গাসাগরের অনুষ্ঠান মঞ্চে দাঁড়িয়ে বাংলার সীমানায় বাঘের আনাগোনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “এখানকার মানুষেরা একদিকে বাঘ এবং অন্যদিকে কুমিরের সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে আছেন। এই দেখুন না, একটা বাঘ ৫টা জঙ্গল, ৫টা জেলা পেরল। ৫ দিন আতঙ্কে ছিল। ছোটদের স্কুল বন্ধ ছিল। যে-ই আমরা উদ্ধার করলাম, আমাদের প্রশাসন ও বনবিভাগ সকলে মিলে, ওমনি দিনরাত ফোন আসছে। ফেরত দাও। ফেরত দাও। ফেরত দাও। আর দিয়ে দিলাম।”
ওড়িশা বনদপ্তরের বিরুদ্ধে এরপর ক্ষোভ উগরে দিয়ে মমতা আরও বলেন, “আবার একটা চলে এসেছে। তোমরা তো তোমাদের জঙ্গলের খেয়াল রাখবে। যাতে তোমাদের বাঘ আমাদের এখানে না ঢুকে পড়ে। আমাদের গ্রামে আতঙ্ক না ছড়ায়। এমনিতেই হাতির সংখ্যা বেড়ে গিয়েছে। হাতি নিয়ে নানা দেশে নানা পরিকল্পনা থাকে। হাতির জন্মের হার অনেক বেশি। খাদ্য দিতে দিতে সমস্যা। ধান খেতে ভালোবাসে, চলে যাচ্ছে। রাস্তায় চলে এল। বনকর্মীদের সামলাতে হয়। ওড়িশা সরকারকে বলব, উদ্ধার করে নিয়ে যেতে। এখন আবার যদি সেই আতঙ্ক সহ্য করতে হয়। যেভাবে বনকর্মীরা বাঘ ধরেছে, তা মডেল।”
মমতা আরও বলেন, “বাঘকে পাঠালে চিরকালের জন্য পাঠান, রেখে দিচ্ছি। তোমাদের নিজেদের রাখার জায়গা নেই। নিয়ে গিয়ে জলে ছেড়ে দিলে। এটা কী হচ্ছে। আমি ওড়িশা সরকারকে দোষারোপ না করে, অনুরোধ করব। দয়া করে বনকর্মী পাঠিয়ে বাঘকে ফেরত নিয়ে যান। শুধু আমাদের দোষারোপ করবেন না। আমাদের বাসিন্দারা ভোগান্তি সহ্য করবে না।” মানুষের জীবন রক্ষায় বনকর্মীদের আরও সজাগ থাকার নির্দেশও দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।