শোভন গায়েন। কলকাতা সারাদিন।
“আমাকে রক্তাক্ত করেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুলিশ। এই রক্ত গুছিয়ে রাখলাম।” এভাবেই পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে আহত হওয়ার পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাজ্য পুলিশের উদ্দেশ্যে হুঁশিয়ারি দিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তুমুল উত্তেজনা হাওড়ার বেলগাছিয়ায়। পুলিশের সঙ্গে বচসায় জড়ালেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। ধাক্কাধাক্কিতে পুলিশ তাঁকে রক্তাক্ত করেছে বলে অভিযোগ শুভেন্দু অধিকারীর।
হাওড়ার বেলগাছিয়ায় একাধিক বাড়িতে ক্রমশ বাড়ছে ফাটল। বিরাট বিপদের আশঙ্কায় রীতিমতো আতঙ্কে ভুগছেন এলাকার বাসিন্দারা। একদিকে জলসংকট এবং অন্যদিকে ভিটেমাটি হারানোর ভয়। সোমবার সকাল থেকে দফায় দফায় হাওড়ার বেলগাছিয়ার ওই এলাকায় বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
১৯ তারিখ থেকে হাওড়ার বেলগাছিয়ার ভাগাড়ে ধ্বস নেমেছিল। এক্ষেত্রে জলের পাইপ ফেটে বিপত্তি তৈরি হয় বলে অভিযোগ তাদের। সমস্যা সমাধানে কলকাতা ও উত্তরপাড়া পুরসভা থেকে পাঠানো হয় জলের ট্যাঙ্কার। তবে ভাগাড়ের ধ্বসের ফলে রীতিমতো ফাটল তৈরি হয় এলাকার বেশ কিছু রাস্তায়। এমনকী বেশ কিছু বাড়ি ঘরেও ফাটল দেখা যায়, ভেঙে পড়ে কাঁচাবাড়ি। এলাকার তীব্র জলসংকট মেটাতে হাওড়া ও কলকাতা পুরসভার যৌথ উদ্যোগে জলের ট্যাংকার যায় ঘটনাস্থলে। এলাকার বাসিন্দাদের আশঙ্কা এই ভাগাড় পরিষ্কারের নামে এবার তাদের বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা হবে।
সোমবার ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। এলাকায় বিজেপির তরফে রান্না করে খাওয়ার পরিবেশন করা হয় বাসিন্দাদের। শুভেন্দু সেই খাবার সরবরাহ করেন। তখনই ওঠে জয় শ্রীরাম স্লোগান। এদিকে, এলাকায় ঘুরতে পুলিশ তাকে বাধা দিয়েছে বলে অভিযোগ। পুলিশের সঙ্গে রীতিমতো ধস্তাধস্তি শুরু হয়ে যায় বিরোধী দলনেতার। ধস্তাধস্তির সময় তিনি রক্তাক্ত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন শুভেন্দু অধিকারী। তিনি এদিন বলেন, “আমাকে রক্তাক্ত করেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুলিশ। এই রক্ত গুছিয়ে রাখলাম। আমাকে মেরেছে। আমি বিরোধী দলনেতা। এখানেও তো মানুষজন থাকে। কী অবস্থা দেখুন।”
সকালেই পরিদর্শন সেরেছেন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। এদিকে, বিকেলে বেলগাছিয়ার ভাগাড়ে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী যেতেই আটকায় পুলিশ। বাড়ি বাড়ি ঘুরতে বাধা দেওয়া হয়। পুলিশের সঙ্গে সহযোগিতা করার কথা বলা হলেও শুভেন্দু অধিকারীকে হেনস্থা করা হয় বলে অভিযোগ।
পাশাপাশি শাসকদলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে শুভেন্দুর অভিযোগ, “হিন্দু বলে হাওড়ার ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য করছে না সরকার। রোহিঙ্গা থাকে না তাই রিলিফ নেই, হিন্দু থাকে তাই রিলিফ নেই।” শুভেন্দুর আরও অভিযোগ, “২ হাজার বেআইনি বাড়ি রয়েছে হাওড়া জুড়ে। গরিবদের লুঠ করছে মমতার সরকার।” এরপরই বাড়ি বাড়ি পরিদর্শনের মাঝ পথে ব্যারিকেড দিয়ে বিরোধী দলনেতাকে আটকায় পুলিশ। শুভেন্দুর সঙ্গে কার্যত ধস্তাধস্তি হয় পুলিশের। এরই মাঝে গুলাম মোর্তাজা নামে এক পুলিশ আধিকারিক শুভেন্দুর হাতে আঘাত করেন বলে অভিযোগ।
এরপর হাত তুলে ক্ষতচিহ্ন দেখাতে থাকেন শুভেন্দু। বলেন, “মমতার পুলিশ মারল, দেখুন। সাধারণ মানুষকে নিরাপত্তাটুকু দিতে পারে না। আর গরিব অসহায়দের পাশে দাঁড়াতে দিচ্ছে না। বুদ্ধদেব মমতাকে প্রোটেকশন দিত। আর মমতা বিরোধী দলনেতাকে মার খাওয়াচ্ছেন। লম্পট মন্ত্রী এসেছিল, পালিয়েছে ওদিকে। সরকার মারা গিয়েছে, এটা প্রমাণ হচ্ছে।” পুলিশের সঙ্গে বচসায় জড়ান বিধানসভায় বিজেপির মুখ্য সচেতক শঙ্কর ঘোষও। সরকারের তরফে কেবল একটা স্কুলেই ত্রাণের ব্যবস্থা করেছে, পর্যাপ্ত ব্যবস্থা করা হয়নি বলে দাবি শঙ্কর ঘোষের।
সরকার কিছুই করেনি বলে অভিযোগ শুভেন্দুর। তিনি বলেন, “কাল থেকে লোকগুলিকে খাবার তো দূর, জলও দেওয়া হয়নি। আমি অবিলম্বে তাদের প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় ঘর দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। অবিলম্বে ২০ হাজার টাকা করে দিন রাজ্য সরকার। হিন্দু বলে করছে না, রোহিঙ্গা হলে করত।”
এদিকে বেলগাছিয়ায় ধসকাণ্ডের প্রতিবাদে হাওড়া পুরসভা অভিযান করে বিজেপি। শুভেন্দু অধিকারী আহত হতেই বিধানসভায় অ্যাম্বুল্যান্স নিয়ে হাজির হন বিজেপি নেতা সজল ঘোষ।