সুমন তরফদার। কলকাতা সারাদিন।
‘আগে আপনারা দেখুন, আপনাদের দলের ভিতরেই কিছু হয়নি তো?’ গত সোমবার উত্তরবঙ্গের নাগরা পাঠায় বন্যা পরিস্থিতি দেখতে গিয়ে বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মুর আক্রান্ত হওয়ার ঘটনায় এভাবেই নতুন তত্ব সামনে আনলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
সোমবার উত্তরবঙ্গে গিয়েছিলেন তিনি। মঙ্গলবার শিলিগুড়ি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খগেন মুর্মুর সঙ্গে দেখাও করেন। বুধবার ফিরে এসে কলকাতা বিমানবন্দর দাঁড়িয়ে তিনি একথা বলেন। বিজেপির উদ্দেশ্যেই মমতা বলেন, ‘আগে আপনারা দেখুন, আপনাদের দলের ভিতরেই কিছু হয়নি তো?
কারণ ওই এলাকা বিজেপির। এমপি-এমএলএ সবই বিজেপির। তদন্ত চলছে।’ আগেই মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করেছিলেন, বিজেপি ৩০টা কনভয় নিয়ে সেখানে গিয়েছিল। মানুষ তা ভালভাবে নেননি।
সেই বিষয়টি নিয়ে এদিন আরও একবার বলেন, ‘উত্তরবঙ্গে এখন যা পরিস্থিতি, তাতে এখন প্রশাসন কি করবে, উদ্ধারকার্য করবে নাকি, যাঁরা ৪০-৫০ টা গাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন, ওদের পিছনে দৌড়বে? কোনটা বেশি জরুরি? যখন কোনও বিপর্যয় হয়, তখন কোনও নেতাকে সেখানে যেতে নেই। আমিও সেখানে গিয়েছিলাম। কিন্তু এতো কনভয় নিয়ে যাইনি। কেবল ২-৩টি গাড়ি ছিল। আমিও শান্তিপূর্ণভাবে কাজ করেছি। আমিও দুর্গতদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছি, ত্রাণ বিলি করেছি।’ প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার দুধিয়ায় ত্রাণ শিবিরে দুর্গতদের সঙ্গে দেখা করেন মমতা।
ঘূর্ণিঝড় ও বন্যার কারণে দুর্যোগ বিপর্যস্ত উত্তরবঙ্গ থেকে বাগডোগরা-কলকাতা রুটে বিমান ভাড়া আকাশ ছুঁয়েছে। এই ভাড়া ১৮ হাজার টাকা পর্যন্ত পৌঁছে যাওয়ায় ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর অভিযোগ, এক রাজ্যে ছাড়, অন্য রাজ্যে এমন বিপুল ভাড়া বৈষম্যমূলক। তিনি এই অব্যবস্থার জন্য সরাসরি কেন্দ্রের অসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রককে কাঠগড়ায় তুলেছেন।
‘ছটপুজোয় বিহারে ছাড়, অথচ বিপর্যস্ত উত্তরবঙ্গ থেকে বিমানের ভাড়া ১৮০০০, এটা বৈষম্য নয়’? প্রশ্ন মমতার
প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ধুঁকছে গোটা উত্তরবঙ্গ। সেই আবহে ফের বৈষম্যের অভিযোগ তুললেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিপর্যেয়ের মধ্যেও বাগডোগরা থেকে বিমানের যে ভাড়া হাঁকা হচ্ছে, তার নিন্দা করলেন মমতা। ছটপুজোয় যেখানে বিমানভাড়ায় বিশেষ ছাড় দেওয়া হচ্ছে, সেই সময় বিপর্যস্ত উত্তরবঙ্গ থেকে বিমানের ভাড়া কেন এত বেশি নেওয়া হচ্ছে, প্রশ্ন তুললেন তিনি। তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘খুবই দুর্ভাগ্য়জনক বিষয় যে, বিহারে নির্বাচন আছে বলে ছটপুজোয় বিমানের ভাড়ায় ছাড় দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, ওই সময় বিমানের ভাড়া বাড়ানো যাবে না। এটায় আমি খুশি। কোনও দুঃখ নেই। কারণ আমার এখানেও ছটপুজো হয়। কিন্তু একটা দুর্ভোগ, দুর্যোগ হয়ে যাওয়ার পর, বাগডোগরা থেকে কলকাতায় ফেরার ভাড়া কেন আজ ১৮ হাজার টাকা করে দেওয়া হল বলতে পারেন? আর যাঁরা বিমান পাচ্ছেন না, কলকাতা থেকে ঘুরে দিল্লি হয়ে যাচ্ছেন, তাঁদের প্রায় ৪২ থেকে ৪৫ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। ভাবতে পারেন? এটা কি বৈষম্য নয়? বাইরের মানুষ যাঁরা এসেছিলেন, ফিরে যাচ্ছেন। যাঁরা বেড়াতে গিয়েছিলেন, ফিরছেন। আমি পর্যটকদের ভলভো বাসে নিয়ে এসেছি। তাঁরা সকলেই কিন্তু নিরাপদ। যাঁরা থাকতে চান, তাঁদের খেয়ালও রাখা হচ্ছে। প্রায় ১০০০ পর্যটককে ৪৫টি ভলভো বাসে এবং নর্থ বেঙ্গল স্টেট ট্রান্সপোর্ট বাসে চাপিয়ে আমরা নিজেরা এনেছি, যাতে অসুবিধা না হয় তাঁদের।’
উত্তরবঙ্গের পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আনতে কাজ শুরু হয়েছে বলেও জানান মমতা। তিনি জানান, রোহিণীর ধস সরানোর কাজ শুরু হয়েছে। দু’টি বিকল্প রাস্তা বের করা হয়েছে। ব্রিজ সারানোর কাজ শুরু হয়েছে নাগরাকাটায়। মিরিকে আগা থেকেই পাকা ব্রিজ হচ্ছিল। সেটি না হওয়া পর্যন্ত পাইপ দিয়ে বিকল্প একটি ব্রিজ করে দেওয়া হবে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে। আপাতত বিপর্যয় পরিস্থিতি দেখে ফিরে এলেও, আগামী সপ্তাহে ফের উত্তরবঙ্গ যাচ্ছেন মমতা। তিনি জানিয়েছেন, যতটা সম্ভব হয়েছে ত্রাণকার্য হয়েছে। চাকরি সংক্রান্ত কাজগুলি এখনও বাকি রয়েছে, সেগুলি সারতে হবে তাঁকে। আজ ভরা কটালের দরুণ সতর্ক থাকতে আর্জি জানিয়েছেন মমতা। বনবিভাগ থেকে প্রশাসনিক আধিকারিকরা সেখানে মোতায়েন রয়েছেন বলেও জানান তিনি।