সুমন তরফদার। কলকাতা সারাদিন।
আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে মমতাকে চিঠি লিখে রাজ্যসভার সাংসদ পদ থেকে ইস্তফা জহর সরকারের। সাংসদ পদ থেকে ইস্তফা দেওয়া প্রসঙ্গে দলের অস্বস্তি বাড়ালেন তৃণমূল সাংসদ জহর সরকার। এবার সেই নিয়ে মুখ খুললেন প্রসার ভারতীর প্রাক্তন সিইও। তিনি ইস্তফা প্রসঙ্গে বলেন, “আমি আর পারছি না। সংসদ পদ থেকে মুক্তি চাই। রাজনীতি ছাড়ছি কিন্তু নীতি ছাড়ব না।” পাশাপাশি কবে সরকারি ভাবে সাংসদ পদ ছাড়বেন তা-ও জানালেন তিনি। তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ জানালেন, আগামী সপ্তাহেই দিল্লিতে গিয়ে দেবেন ইস্তফা দেবেন জহর সরকার।
রবিবার মুখ্যমন্ত্রীকে দু’পাতার একটি চিঠি দেন জহর সরকার। সেখানে আরজি কর কাণ্ড নিয়েও সরব হন তিনি। জহর সরকার লেখেন, “গত একমাস ধৈর্য্য ধরে আরজিকর হাসপাতালে ঘৃণ্য ঘটনার বিরুদ্ধে সবার প্রতিক্রিয়া দেখেছি আর ভেবেছি কেন আপনি সেই পুরনো মমতা ব্যানার্জীর মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে সরাসরি জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে কথা বলছেন না। এখন সরকার যেসব শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে তা এক কথায় অতি অল্প এবং অনেক দেরি হয়ে গেছে।”
তিনি লেখেন, “আমার বিশ্বাস এই আন্দোলনে পথে নামা মানুষেরা অরাজনৈতিক ও স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই প্রতিবাদ করছেন। অতএব রাজনৈতিক তকমা লাগিয়ে এই আন্দোলনকে প্রতিরোধ করা সমীচীন হবে না। অবশ্যই বিরোধী দলগুলো এই আন্দোলন থেকে নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করার চেষ্টা করছে কিন্তু যে সাধারণ ছাত্রছাত্রী ও মানুষেরা পথে ঘাটে দিনের পর দিন প্রতিবাদ করছেন, তাঁরা এই দলগুলিকে ঢুকতে দিচ্ছেন না। এঁরা কেউ রাজনীতি পছন্দ করেন না। এক বাক্যে শুধু বিচার ও শাস্তির দাবী তুলছেন। আমরা যদি নিরপেক্ষভাবে এই আন্দোলন বিশ্লেষণ করি, দেখব যে এই প্রতিবাদ শুধুমাত্র ‘অভয়া’র পক্ষে নয়, রাজ্য সরকার আর শাসকদলের বিরুদ্ধেও।”
নিজের পদত্যাগের বিষয়ে চিঠিতে জহর সরকার লেখেন, “অনেক চিন্তাভাবনার পর আমি স্থির করেছি সাংসদ পদ থেকে ইস্তফা দেব এবং রাজনীতি থেকে নিজেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করব। আমার কখনও কোনও দলীয় পদ বা অন্য কিছুর উচ্চাকাঙ্ক্ষা ছিল না। আমি মোদী সরকারের স্বৈরাচারী, বিভেদমূলক বৈষম্যমূলক ও গণতন্ত্র বিরোধী কার্যকলাপ এবং নীতির স্বার্থহীন ও সুতীব্র সমালোচনা করতে পেরেছি এটাই আমার সন্তুষ্টির কারণ। কিন্তু সংসদে নির্বাচিত হওয়ার এক বছর পর ২০২২ সালে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর চূড়ান্ত দুর্নীতির খোলাখুলি প্রমাণ দেখে প্রকাশ্যে মতামত দিই যে, দল ও সরকারের এই ব্যাপারে অত্যন্ত সক্রিয় হওয়া প্রয়োজন। তখন দলের অনেক বর্ষীয়ান নেতা আমাকে হেনস্থা করেন। তখন আমি পদত্যাগ করা থেকে বিরত ছিলাম এই আশা নিয়ে যে, আপনি কাটমানি ও আর্থিক দুর্নীতির বিরুদ্ধে এক বছর আগে যে আন্দোলন আরম্ভ করেছিলেন, তা চালিয়ে যাবেন।”
তিনি আরও লিখেছেন, “আমি আমার দায়িত্ব পালন করলাম কিন্তু আমার রাজ্যে দুর্নীতি আর দলের একাংশের নেতাদের অন্যায় দাপট দেখে আমি হতাশাগ্রস্ত হলাম। দেখলাম রাজ্য সরকার সামলাতে পারছে না।”