সুমন তরফদার। কলকাতা সারাদিন।
কয়েকদিন আগেই নিজের জন্মদিনে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ঘরোয়া আলোচনায় বলেছিলেন উপনির্বাচন মিটলেই রাজ্যজুড়ে বদলে ফেলা হবে তৃণমূলের সংগঠন। শুধু তাই নয়, দলের শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশ অগ্রাহ্য করে যে সমস্ত নেতা নিজেদেরকে বড় নেতা ভাবছেন প্রয়োজনে তাদের ছেঁটে ফেলার পথেও হাঁটবে তৃণমূল। অভিষেকের এই বার্তা যে শুধুমাত্র কথার কথা নয়, তার প্রমাণ মিলল আজ বীরভূমের তৃণমূল কোর কমিটির বৈঠকে।
অনুব্রত মণ্ডল এবং কাজল শেখের পারস্পরিক ইগো সমস্যা যেন তৃণমূলের সাংগঠনিক কাজে প্রভাব ফেলতে না পারে তার জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন অভিষেক। সেই নির্দেশ মেনে শনিবার বসলো বীরভূমের তৃণমূলের কোর কমিটির বৈঠক। উপস্থিত ছিলেন বীরভূম তৃণমূলের দুই যুযুধান নেতা অনুব্রত মণ্ডল ও কাজল শেখ। সম্প্রতি অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল যে তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৈরি করে দেওয়া কোর কমিটিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না।
কিন্তু তারপরই তৃণমূল কংগ্রেস সূত্রে খবর, মমতা বন্দোপাধ্যায় ফোন করে সতর্ক করেছেন অনুব্রত মণ্ডলকে। অন্যদিকে অভিষেকও যে খসড়া মমতাকে দিয়েছেন সেখানে বীরভূমে কোর কমিটিকে স্থায়ী আর শক্তিশালী করার কথা বলেছেন। তারপরই এই অনুব্রত মণ্ডলের নেতৃত্বে কোর কমিটির বৈঠক যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বলেও মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
শনিবার লাভপুরে তৃণমূল কংগ্রেসের দলীয় দফতরে কোর কমিটির বৈঠক বসেছে। সেখানে উপস্থিত রয়েছেন জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল, জেলা পরিষদের সভাধিপতি কাজল শেখ, কোর কমিটির আহ্বায়ক বিকাশ রায়চৌধুরী, লাভপুরের বিধায়ক অভিজিৎ সিংহ, মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ, ডেপুটি স্পিকার আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। বৈঠকের মধ্যমণি কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের কেষ্টা। তবে বৈঠকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল এই বৈঠকে উপস্থিত কাজল শেষ। জেলা রাজনীতিতে দুই জন প্রতিপক্ষ বলেও মনে করেন জেলার রাজনৈতিক বিশিষ্টরা।
অনুব্রত বীরভূমে ফিরে এই প্রথম একসঙ্গে বৈঠকে অনুব্রত মণ্ডল-কাজল শেখ! বৈঠক নিয়ে প্রথম থেকেই উত্তেজনা ছিল চরমে। বৈঠক শেষে কোর কমিটিতে সঙ্গে যুক্ত হল অনুব্রতর নাম। বৈঠকের প্রধান আকর্ষণ ছিল বীরভূমের জেলা পরিষদের সভাধিপতি কাজল শেখ এবং অনুব্রতর মেলবন্ধন।
এদিন বৈঠক শেষে কাজল শেখের মুখে শোনা গেল অনুব্রত বন্দনা, সেই সঙ্গে একসঙ্গে চলার বার্তা। কাজল শেখ এদিনের বৈঠকের পরে বলেন, “কেষ্টদা আমার রাজনৈতিক গুরু, রাজনৈতিক অভিভাবক। তাঁর হাত ধরেই রাজনীতিতে আসা, কোথাও কোনও দ্বন্দ্ব নেই, একসঙ্গে কাজ করতে হবে, একসঙ্গে চলব”।
দু’দিকে তিনজন করে কোর কমিটির মোট ছয় সদস্য অনুব্রতকে মধ্যমণি করে বসেছিলেন। সম্পূর্ণ বৈঠকে যদিও অনুব্রত স্বল্প সময়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, “তোরা ৬ জন ছিলি, আমায় নিয়ে ৭ জন হল। নিচু তলায় কাজ করা বেশি প্রয়োজন। তোদের সঙ্গে মিলে দলের উপরমহল যে রকম সিদ্ধান্ত নেবে সেই রকম কাজ করব”।
কোর কমিটির বৈঠক নিয়ে অন্যতম সদস্য বিকাশ রায়চৌধুরী বলেন, “সুন্দর আলোচনা হয়েছে, সবাই নিজের মতামত প্রকাশ করেছেন। এবার জেলায় ঝাঁপিয়ে পড়বে, কোর কমিটিতে যার যা দায়িত্ব ছিল, তারা সেটা পালন করবে। সংগঠন শক্তিশালী হবে আমাদের আরও”।
বীরভূম তৃণমূলের বরাবর শক্তিশালী দুর্গ। অনুব্রত থাকাকালীন তা যেমন শক্তিশালী ছিল, অনুব্রতের জেলে যাওয়ার সময়েও দায়িত্ব নিয়ে সেই দুর্গ আগলে রেখেছেন কাজল শেখ-সহ কোর কমিটির সদস্যরা। আগামী ১৫ ডিসেম্বর বীরভূম জেলার কোর কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। সেই বৈঠক হবে রামপুরহাটে, আসিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের তত্ত্বাবধানে। এছাড়াও বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, প্রত্যেক কোর কমিটির বৈঠকেই থাকবেন অনুব্রত মণ্ডল।