সুমন তরফদার। কলকাতা সারাদিন।
“বাংলাদেশের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গে দীর্ঘতম সীমান্ত। প্রতিবেশি দেশের অস্থিরতার সুযোগ নিয়ে এ রাজ্যে সমস্যা তৈরি হতে দেব না আমরা।” রবিবার দুপুরে সাংবাদিক বৈঠক করে সাফ জানিয়ে দিলেন ডিজি রাজীব কুমার। ভারতের উদ্বেগ বাড়াচ্ছে অনুপ্রবেশ। সীমান্ত পেরোনোর ভিড়ে মিশে যাচ্ছে জঙ্গিরাও। বাংলাদেশ সীমান্তকে ব্যবহার করে পাকজঙ্গিরা ভারতে নাশকতামূলক কাজকর্মে ইন্ধন জোগাচ্ছে বলেও ইঙ্গিত মিলেছে। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে একাধিক প্রশ্ন উঠছে। উদ্বেগ বাড়াচ্ছে গোয়েন্দাদেরও। চিন্তার কথা দুই দেশের কাঁটাতারহীন সীমান্ত। রাজ্যপুলিশ অবশ্য এই কথা স্বীকারও করে নিয়েছে যে কিছু খামতি রয়েইছে সীমান্ত এলাকায়।
তবে ডিজি রাজীব কুমার বাংলার মানুষকে আশ্বস্ত করেছেন। বলেছেন পুলিশ এখানে কোনও সমস্যা হতে দেবে না। তিনি স্পষ্ট জানান, “যারা সমস্যা তৈরির চেষ্টা করবে, তাদেরই গ্রেফতার করা হবে। সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেক কিছুই ছড়াচ্ছে। কিন্তু আমাদের শান্ত থাকতে হবে। সাধারণ মানুষ যদি কোনও তথ্য পান, আমাদের দিন। রাজ্যে শান্তি বজায় রাখতে সবরকম পদক্ষেপ করা হচ্ছে।”
বাংলায় জাল পাসপোর্টের রমরমা কারবার রুখতে এবং সন্ত্রাস দমনে সর্বদা সজাগ ও তৎপর রয়েছে কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ প্রশাসন। পুলিশ সর্বক্ষণ তাদের কাজ ঠিকমতো করছে বলেই জঙ্গিরা পুলিশ ও গোয়েন্দাদের জালে উঠছে। কিন্তু, বাংলার পুলিশ তাদের দায়িত্ব পালন করছে নিঃশব্দে। তাই, তাদের উপর ভরসা রাখা হোক! রবিবার কার্যত এভাবেই বাংলার মানুষের কাছে আবেদন জানালেন রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার। এদিন একটি সাংবাদিক সম্মেলন করেন তিনি। সঙ্গে ছিলেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার মনোজ ভার্মা এবং এডিজি আইন শৃঙ্খলা জাভেদ শামিম।
রাজ্য জুড়ে পাসপোর্ট জালিয়াতি চক্রের রমরমা যখন প্রকাশ্যে, সেই আবহে রবিবার সাংবাদিক বৈঠক করেন ডিজি রাজীব কুমার। ২০১৮ সালে বিদেশমন্ত্রক পাসপোর্টের তথ্য যাচাই নিয়ে যে নির্দেশিকা প্রকাশ করেছিল, এদিন তা তুলে ধরেন ডিজি। তিনি জানান, কেন্দ্রের নিয়ম অনুযায়ী,পাসপোর্ট আবেদনকারীর তথ্য যাচাইয়ের ক্ষেত্রে পুলিশি হস্তক্ষেপের প্রয়োজন নেই। ঠিকানা যাচাই, আবেদনকারীর সঙ্গে দেখা করে স্বাক্ষরগ্রহণ করতে হবে না পুলিশকে। পাসপোর্ট দফতরের তরফে বিশেষ ভাবে অনুরোধ না করা হলে, পুলিশি হস্তক্ষেপের প্রয়োজন নেই।
এদিন রাজীব জানান, পাসপোর্ট আবেদনের প্রক্রিয়া সহজতর করতেই হয়ত এমন সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্র। পুলিশকে তথ্য যাচাইয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। আমরা এই প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন ঘটাচ্ছি। এখন থেকে জেলার ক্ষেত্রে পুলিশ সুপার ব্যক্তিগত ভাবে তথ্য যাচাইয়ের বিষয়টি দেখবেন। কলকাতার ক্ষেত্রে ডেপুটি কমিশনার থাকবেন দায়িত্ব। রাজীবের বক্তব্য, “খামতির কথা আগেই জানানো হয়েছিল। পার্কস্ট্রিটের ঠিকানা দিয়ে অন্য থানা লেখা যায় পাসপোর্টে।” তাই এখন থেকে পাসপোর্ট দফতর থেকে পোস্ট অফিস, সবটাই পুলিশ খতিয়ে দেখবে বলে জানিয়েছেন ডিজি। কাউকে দোষারোপ করতে চান না, কিন্তু তাঁরা বরাবরই সহযোগিতা করে এসেছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
অন্যদিকে জাভেদ শামিম জানান, বর্ডারের কাছে একটা নির্দিষ্ট দূরত্ব পর্যন্তই যেতে পারে পুলিশ। ফলত, তাদের পক্ষে সরাসরি অনুপ্রবেশ বন্ধ করা সম্ভব হয়। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে সমন্বয় সাধন করে চলার কথা বলছেন রাজ্যের এই পুলিশকর্তারা। তাঁরা জানিয়েছেন, আগামী দিনে বাংলায় পাসপোর্ট তৈরি করতে গেলে আরও কঠোর ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে হবে আবেদনকারীদের।
এদিনের সাংবাদিক সম্মেলনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণভাবে জাভেদ শামিম বলেন, “রবিবার দুপুরে আমরা সব সিনিয়র অফিসাররা আছি মানে বুঝতেই পারছেন, আমরা কতটা সিরিয়াস। কোনও উগ্রপন্থী যাতে ভারতীয় পাসপোর্ট না পায়, তার জন্য যা যা করণীয় সব করছে রাজ্য পুলিশ।”
কয়েকদিন আগেই ক্যানিং থেকে এক কাশ্মীরি জঙ্গিকে গ্রেফতার করা হয়। যে তেহরিক-উল-মুজাহিদিনের সদস্য বলে দাবি করা হচ্ছে। এমনকী, তার সঙ্গে পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদী সংগঠন লস্কর-ই-তৈবারও যোগ রয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
এই প্রসঙ্গে এদিন রাজীব কুমার বলেন, “কাশ্মীরের জঙ্গিকে দু’দিন ধরে ট্র্যাক করেছি আমরা। তার গতিবিধির উপর নজর রেখেছি। তারপর কাশ্মীরের পুলিশকে ডেকেছি। আমরা নিঃশব্দে আমাদের কাজ করছি। বিশেষত জঙ্গিদের বিষয়ে তদন্ত সম্পর্কে বাইরে বেশি কথা বলা যাবে না। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, আমরা হাত গুটিয়ে বসে রয়েছি।”
এছাড়াও, রাজীব কুমার জানান, “পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের এসটিএফ-এর দেওয়া তথ্যের মাধ্যমেই কাশ্মীরের বাসিন্দা ওই জঙ্গির খোঁজ পাওয়া গিয়েছিল। তাকে সম্প্রতি গ্রেফতার করা হয়েছে। জঙ্গিদমনে আমাদের রেকর্ড অতীতেও ভালো ছিল। এখনও ভালো আছে। আগামী দিনেও আমরা সেই রেকর্ড ধরে রাখার চেষ্টা করব।”