সুমন তরফদার। কলকাতা সারাদিন।
বার্থ সার্টিফিকেটে তাঁর বয়স পাঁচ বছর বাড়ানো রয়েছে। রাজ্য সরকারের উদ্যোগে ছাত্র সপ্তাহ উজ্জাপন অনুষ্ঠানে যোগদান করে এমনই দাবি করলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর দাবি, সরকারি ভাবে তাঁর যে জন্মদিন পালন করা হয় তাতেও খুশি নন তিনি। সেই জন্মদিনও ‘নকল’ বলে দাবি করেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিন মমতা বলেন, “সবাই আমার জন্মদিন জন্মদিন করে। আমি মনে করি আমি এখনও জন্মাইনি। আসলে আমরা সব হোম ডেলিভারি তো। আমি আমার নামও নিজে দিইনি, বয়সও নিজে দিইনি, পদবিও নিজে দিইনি। অনেকে আমাকে হ্যাপি বার্থডে বলে। কিন্তু দিনটা আমার মোটেই পছন্দকর নয়। ওটা সার্টিফিকেটে বাবা মা করে দিয়ে গেছে। আমার নামটাও আমার পছন্দের নয়, কিন্তু হয়ে গেছে। ছোটদের সামনেই ছোটবেলার ঘটনা বললাম।”
অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাদা। তাঁর কথা উল্লেখ করে মমতা বলেন, “আমি জানতামও না। আমি যখন কলেজে পড়ি তখন দাদা একদিন বলল। দাদা এখানে উপস্থিত আছে বলে বললাম। দাদা আমাকে বলল, তুই কি জানিস বাবা কী করে তোর বয়স দিয়েছে? আমি বললাম, কী করে? বলল, সার্টিফিকেটে তোর আর আমার বয়সের মধ্যে ৬ মাসের পার্থক্য। আমি বললাম দারুন। তাহলে তোকে ভর্তি করতে গিয়ে বয়সটা কী করে দিল? বলল, বাবা গেল স্কুলে। একটা বন্ধু ছিল হেডমাস্টার। তাকে বললেন, তুমি একটা বসিয়ে দেও। তার তো কোনও দোষ নেই, তিনি একটা বসিয়ে দিলেন। আগেকার দিনে এই সমস্যাটা ছিল যারা আমরা বাড়িতে জন্মেছি। হোম ডেলিভারি। তাদের আসল বয়সটা লুকিয়ে থাকে। নকল বয়সটা, সার্টিফিকেটের বয়সটা মানুষ ধরে নেয়। আমার বাড়ানোও আছে ৫ বছর। আমি একটা বইতে লিখেছি এগুলো। অনেকদিন আগে।”
স্টুডেন্ট উইক এর অনুষ্ঠানে মমতা
প্রতি নতুন বছরের শুরুতে পশ্চিমবঙ্গে পালিত হয় ‘স্টুডেন্ট উইক’। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে রাজ্যের সর্বস্তরের পড়ুয়াদের জন্য এই উৎসবের আয়োজন করা হয় রাজ্য সরকারের তরফে। এবছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। কলকাতার ধনধান্য অডিটোরিয়ামে স্টুডেন্ট উইক পালিত হয়।
উৎকর্ষ বাংলায় দশ লক্ষ চাকরি
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অন্যতম জনমুখী প্রকল্পের মধ্যে একটি ‘উৎকর্ষ বাংলা’। আর এবার এই প্রকল্প থেকেই চাকরি পেয়েছেন ১০ লক্ষ পড়ুয়া। বুধবার স্টুডেন্টস উইকের সমাপ্তি অনুষ্ঠান থেকে ‘উৎকর্ষ বাংলা’ নিয়ে একথা জানলেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতা বলেন, ‘বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রির কাছে ওপেন অফার রয়েছে উৎকর্ষ বাংলা থেকে লোক নেওয়ার। এই প্রকল্পের মাধ্যমে ইতিমধ্যেই ৪৭ লক্ষ পড়ুয়া প্রশিক্ষণ পেয়েছে। এর মধ্যে ১০ লক্ষ ছেলেমেয়ে চাকরি পেয়েছে। উৎকর্ষ বাংলা প্রকল্পের উদ্দেশ্য হল যুবসমাজকে প্রয়োজনীয় ট্রেনিং দিয়ে শিল্পক্ষেত্রে দক্ষ করে তোলা ।’একই সঙ্গে ঐক্যশ্রী, শিক্ষাশ্রী, মেধাশ্রী, কন্যাশ্রীর পরিসংখ্যানও তুলে ধরেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বললেন,’ ৮৯ লক্ষ কন্যাশ্রী পড়ুয়া রাজ্যে কন্যাশ্রী পেয়েছে । চাই কন্যাশ্রী ১ কোটি ছাড়িয়ে যাক। শুধু তাই নয় এখন বাংলায় ৫০০ টা আইটিআই, পলিটেকনিক তৈরি করেছি। যেখানে ট্রেনিং পর্যন্ত দেওয়া হয়। সেবাই আমাদের ধর্ম। ‘
পাশাপাশি এ রাজ্যের কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলি নিয়ে এদিন মন্তব্য করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন,’ কলকাতায় এখন অনেক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। জেলায় জেলায় নতুন বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি হয়েছে । আমাদের আমলে নতুন ৩০টি বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে, নতুন ১৪টি মেডিক্যাল কলেজ হয়েছে। ৫৩টি কলেজ, ৭ হাজারের বেশি নতুন স্কুল হয়েছে ।’ বলা বাহুল্য, ১ জানুয়ারি থেকে ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত ‘স্টুডেন্টস উইক’ পালন করে রাজ্য। এ দিন ছিল স্টুডেন্টস উইকের সমাপ্তি অনুষ্ঠান । আর সেখান মুখ্যমন্ত্রী ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন দেব, সায়নি ঘোষ, অদিতি মুন্সি, ব্রাত্য বসু, সায়ন্তিকা, রচনা সহ একাধিক নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা ।
সন্তোষ ট্রফি জয়ীদের চাকরি
সন্তোষ কাপ জয়ী বঙ্গ ফুটবলারদের চাকরি দেবেন মুখ্যমন্ত্রী। আর এবার সেই কথাই রাখলেন তিনি। বুধবার ধনধান্য অডিটোরিয়ামে সন্তোষজয়ী ফুটবলারদের হাতে মুখ্যমন্ত্রী তুলে দিলেন চাকরির নিয়োগপত্র । ৮ বছরের খরা কাটিয়ে সন্তোষ ট্রফি জিতেছে বাংলার ফুটবলাররা। আর তাতেই আনন্দিত হয়ে তাদের বিশেষ সম্মান জানালেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই প্রসঙ্গে মমতা বলেন, “আমাদের ছেলেমেয়েরা জয় করে নিয়ে এসেছে সন্তোষ ট্রফি। আজ কে যারা সন্তোষ ট্রফি জিতেছেন তারা সবাই পুলিশের এএসআই হিসাবে চাকরি পেলেন।” শনিবার আইএফএ দপ্তরে সরকারি কাগজপত্রে সই করেন ফুটবলাররা। আর বুধবার তাদের হাতে নিয়োগপত্র তুলে দিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী।
অভিনন্দনের জায়গায় ‘শুভনন্দন’
বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে প্রথম বার ব্যবহার। সেই যে শুরু হয়েছিল, এখন সরকারি শুভেচ্ছাবার্তাতেও অভিনন্দনের জায়গায় ‘শুভনন্দন’ লেখা হয়। সেই নিয়ে বিরোধী শিবিরের রাজনীতিকরা কটাক্ষ করলেও ‘শুভনন্দন’ বলা বন্ধ করেননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিনন্দনের জায়গায় কেন ‘শুভনন্দন’ বলেন তিনি, এবার খোলসা করলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এদিন তিনি বলেন, ১ থেকে ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত ছাত্রসপ্তাহ পালন করি আমরা। স্কুলে স্কুলে বিভিন্ন কর্মসূচি হয়। এটা উৎসবের সময়, সকলে ব্যস্ত থাকেন। আজ সমাপ্তি অনুষ্ঠানে মুখ্যসচিব যখন ভাষণ দিচ্ছিলেন, একটা শব্দ কানে এল আমার। উনি বললেন, এটা সমাপনী অনুষ্ঠান। মমতা বলেন, সমাপনী কিন্তু ভুল শব্দ নয়। এটা একটা নতুন শব্দ। যেহেতু নতুন শব্দ, তাই সঙ্গে সঙ্গে কানে এসেছে। আমি যেমন অভিনন্দনের জায়গায় শুভনন্দন বললাম। শুভনন্দন বলাই যায়। অসুবিধের কিছু নেই। ভাষা তো বিস্তৃত হয়! ভাষার বিস্তার আছে অনেক। এভাবেই তাই অভিনন্দন জানাই সকলকে।
সিপিএমের অত্যাচার প্রসঙ্গে
তবে এদিনের বক্তব্যে নিজের রাজনৈতিক জীবনের শুরুর দিকের বেশ কিছু ঘটনাও ফের একবার প্রকাশ্যে এনেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এপ্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী ফের একবার নিশানা করেছেন বামেদের। রাজ্যে সিপিএম-এর আমলে তাঁকে মারধর করা হয়েছে বলে আবারও সরব মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “পা থেকে মাথা পর্যন্ত এমন কোনও জায়গা নেই যে আমি পিটুনি খায়নি সিপিএমের হাতে। মৃত্যুর হাত থেকে অনেকবার বেঁচে এসেছি। কাজেই সেই সময়টা যেতে ভয় পেতাম। তা সত্ত্বেও দু’বছর এমএ-এর যে ক্লাস থাকে আমি তার মধ্যে একবছর লুকিয়ে লুকিয়ে ক্লাস করেছিলাম। আমার পরিচয় তখন কেউ জানতে পারেনি। আমি যখন এলএলবি করেছি তখনও কেউ জানতে পারেনি।”