সুমন তরফদার। কলকাতা সারাদিন।
“প্রসূতির মৃত্যুতে যাদের গাফিলতি, তাদের কাউকে ছাড়া হবে না। রিপোর্ট নেগেটিভ থাকলে সেই ওষুধ ব্যবহার করা যাবে না। কোথাও কেউ এরকম মুচলেকা লিখিয়ে নিলে, তার বিরুদ্ধেও পদক্ষেপ করা হবে।” মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজে মেয়াদ উত্তীর্ণ স্যালাইন ব্যবহারের ফলে প্রসূতি মৃত্যুর ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে বৈঠকের পরে রাজ্য সরকারের অবস্থান জানিয়ে হুঁশিয়ারি দিলেন মুখ্য সচিব মনোজ পন্থ।
মেদিনীপুর মেডিক্যাল কাণ্ডে সিআইডি তদন্তের নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার সন্ধ্যায় সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ বলেন, মুখ্যমন্ত্রী গুরুত্ব দিয়ে নিজেই পুরো ঘটনার উপর নজর রাখছেন। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন কোনও রকমের সাফিলতি বরদাস্ত করা হবে না। গাফিলতি হয়েছে, দোষীদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা হবে। এই মেদিনীপুরের মেডিক্যালের ঘটনায় সিআইডি তদন্ত হবে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
নবান্নে আজ স্বাস্থ্য সচিব নারায়ন স্বরূপ নিগমকে পাশে নিয়ে মুখ্য সচিব বলেন, “এই ঘটনার পরই ১৩ জনের বিশেষজ্ঞ দল গঠন করি। ১১ই জানুয়ারি তাঁরা পৌঁছয় মেডিক্যাল কলেজে। তাঁরা তদন্ত করে একটি রিপোর্ট জমা করেছে। যেখানে প্রাথমিকভাবে দেখা যাচ্ছে, ওই সময় কর্তব্যরত স্বাস্থ্য কর্মীদের একটা গাফিলতি রয়েছে। তারপরও আমরা বিষয়টির তদন্ত করতে নির্দেশ দিয়েছি। পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হচ্ছে। সেইটাতেই বোঝা যাবে কারা সেই সময় ডিউটিতে ছিলেন। কতটা তাঁদের গাফিলতি রয়েছে। যেহেতু এখানে গাফিলতির অংশ রয়েছে। আজ মুখ্যমন্ত্রী দশজন সিনিয়র স্বাস্থ্য আধিকারিকের সঙ্গে মিটিং করেছেন। তিনি পরিস্কার জানিয়েছেন এই ঘটনা কোনও ভাবেই বরদাস্থ করা যাবে না। পূর্ণাঙ্গ তদন্তের রিপোর্ট এলে এই ঘটনায় জড়িত অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হবে। তাছাড়া সিআইডিকেও আমরা নির্দেশ দিয়েছি,এই ব্যাপারে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করে।”
পাশাপাশি এই ঘটনায় রাজ্য সরকারের কাছে যে প্রাথমিক করে ভোট এসে পৌঁছেছে তার কথা উল্লেখ করে মুখ্যসচিব জানান, “প্রাথমিক রিপোর্ট দুই দিনের মধ্যে পেয়েছি। তিনদিনের মধ্যে পরবর্তী রিপোর্ট পাওয়া যাবে। আশাকরি সিআইডির রিপোর্টও তাড়াতাড়ি পেয়ে যাবো। তারপরেই দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবেই। আগেও এই স্যালাইন ব্যবহার করার বিষয়ে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিলো। তারপর আবার গত ৭ তারিখ একই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।ওই কোম্পানিকে প্রোডাকশন বন্ধ করতে বারণ করা হয়েছিল। তারপর থেকে ওদের থেকে আর এই ব্যাচের স্যালাইন নেওয়া হয়নি। ওষুধ, সরঞ্জাম নিয়ে একটি জায়গা রয়েছে। এই সব জিনিসের সাপ্লাই কত হচ্ছে, তার গুণগত মান আদৌ ঠিক আছে কি না সবটাই স্বাস্থ্য ভবন মনিটর করে। সেই সকল জিনিসের স্যাম্পেল কালেক্ট করে পরীক্ষা করা হয়েছে। যেগুলো অপ্রয়োজনীয় তা সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আমরা আগেই নির্দেশ দিয়েছিলাম প্রশিক্ষণরত চিকিৎসকদের সিনিয়র চিকিৎসকদের অধীনে কাজ করতে হবে। তাঁদের যথাপোযুক্ত ডিউটি রস্টার মেনে চলতে হবে। প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে, এখানেও একটি গাফিলতি হয়েছে। সব সময় একজন সিনিয়র চিকিৎসকের উপস্থিতিতেই এটা করা হয়। কিন্তু এই ঘটনায় প্রশিক্ষণরত চিকিৎসকরাই বিষয়টি হ্যান্ডেল করেছেন। শিশুদের শারীরিক অবস্থা এইমুহুর্তে স্থিতিশীল। তারা ভাল আছে। আমরা ক্রমাগত মনিটরিং করছি। আমরা একটা তদন্ত করেছিলাম। সেই সময় আমরা একটা খবর পাই এই কোম্পানির স্যালাইন নিয়ে সমস্যা আছে। সেই কারণে তখন প্রোডাকশন বন্ধ করতে বলা হয়েছিল।”