সুমনা মিশ্র। কলকাতা সারাদিন।
বাংলায় ভোটার তালিকায় স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন বা বিশেষ নিবিড় সংশোধনী প্রক্রিয়া চালুর জন্য জাতীয় নির্বাচন কমিশন যে উদ্যোগ নিয়েছে তা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নবান্নে বসে বাংলায় মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে তোলার সময় রাজ্যের মুখ্য সচিবের উপস্থিতি নিয়ে বিতর্কের মাঝেই নবান্নের উপরে নতুন করে চাপ তৈরি করল জাতীয় নির্বাচন কমিশন। ভোট কর্মী নিয়োগে বেনিয়মের অভিযোগ তুলে মুখ্য সচিবের কাছে চিঠি পাঠালো কমিশন।
মুখ্যসচিব মনোজ পন্থের উপস্থিতিতে নাম না করে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক মনোজ আগরওয়ালকে নিশানা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী। সূত্রের খবর, এই ঘটনায় মুখ্যসচিবের ভূমিকায় বিরক্ত সিইও। লোকপাল আইন অনুযায়ী, হলফনামা ছাড়া কোনও সরকারি কর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা যায় না। মুখ্যসচিবের সে আইন জানা উচিত বলেই মনে করছে কমিশন। কীভাবে তাঁর উপস্থিতিতে সিইও-কে আক্রমণ করা হল, তা নিয়ে প্রশ্নও তোলা হয়েছে কমিশনের তরফে। এ বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও। বৃহস্পতিবার নবান্নে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। আর সেখানেই তিনি রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক মনোজ আগরওয়ালকে নিয়ে বেশ কিছু মন্তব্য করেন। যা নিয়ে শুরু হয়েছে তরজা। তিনি বলেন, ‘সেন্ট্রাল ইলেকশন কমিশনকে বসিয়ে রেখে এখান থেকে যিনি সিইও হিসেবে (মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক) গিয়েছেন, তাঁর যার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ রয়েছে। সেগুলি সময় হলে বলব। এখন বলছি না। আশা করি তিনি বেড়ে খেলবেন না। মানে ওভার রিয়্যাক্ট করবে না। উনি বড্ড বেশি অফিসারদের থ্রেট করছেন। নিজে নানা অভিযোগে দুর্নীতিগ্রস্ত।’ এছাড়াও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মনোজ আগরওয়ালের নাম না করেই বলেন, ‘এসআইআর-এর নামে ভোট কাটার চক্রান্ত চলছে। অসম সরকার কি করে বাংলার নাগরিকদের এনআরসি-র নোটিশ পাঠাতে পারেন? এসআইআর-এর কাজ শুরু হওয়ার আগে বিজেপি-র একজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কি করে বলেন, দেড় কোটি ভোটারকে বাদ দিতে হবে? তার মানে কি পার্টি অফিসে বসে তৈরি করছে এসআইআর? আর ইলেকশন কমিশন স্টাম্প মারবে?’
অন্যদিকে, এসআইআর চালু হবে কি হবে না সেই বিতর্কের মাঝেই বাংলায় ইআরও নিয়োগে বেনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। কেন এসডিও-র নীচের পদমর্যাদার লোককে নিয়োগ করা হয়েছে, তা নিয়েই প্রশ্ন তোলা হয়েছে। মুখ্যসচিব মনোজ পন্থকে চিঠি পাঠিয়ে প্রশ্ন করল জাতীয় নির্বাচন কমিশন। উল্লেখ্য, শুক্রবারই রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এই একই অভিযোগ করেছিলেন। কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, জাতীয় নির্বাচন কমিশন থেকে মুখ্যসচিবের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে, যেখানে ইআরও নিয়োগের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট রীতি রয়েছে, কোন পদ্ধতিতে তাঁরা নিযুক্ত হবেন, তাঁদের কোন পদমর্যাদা হওয়া উচিত, তা বিস্তারিত উল্লেখ রয়েছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, এই নিয়ম লঙ্ঘন হচ্ছে। অনেক সময়ে রাজ্য সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়, এসডিও কিংবা তাঁর পদমর্যাদার আধিকারিকের সংখ্যা কম থাকায় এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এক্ষেত্রে রাজ্যের তরফ থেকে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে এই সংক্রান্ত কোনও তথ্য জানানোই হয়নি। তাই এই চিঠি। নবান্নে ইতিমধ্যেই এই চিঠি এসে পৌঁছেছে।

আর এই বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর বক্তব্য, এসআইআর-এর কাজ যখন চলবে, তখন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব থাকবে ইআরও, এইআরও দের। তাঁদের নিয়োগ নিয়েই যদি প্রশ্ন ওঠে, তাহলে এসআইআর-এর প্রক্রিয়া নিয়েও প্রশ্ন থাকবে।