সুমন তরফদার। কলকাতা সারাদিন।
‘পর্যটকরা যে যেখানে আছেন থাকবেন। তাঁদের যেন অতিরিক্ত হোটেল ভাড়া দিতে না হয়।’ প্রবল বৃষ্টি ও ডিভিসি-র ছাড়া জলে সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতির শিকার উত্তরবঙ্গের পর্যটকদের পাশে দাঁড়াতে এমন ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেইসঙ্গে জানিয়ে দিলেন, আজ অর্থাৎ সোমবার তিনি বন্যাদুর্গতদের পাশে দাঁড়াতে ছুটে যাবেন শিলিগুড়িতে। রবিবার নবান্ন থেকে রাজ্যের বিপর্যয় পরিস্থিতির উপর ২৪ ঘণ্টা নজরদারি চালাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানিয়েছেন, ‘গতরাতে উত্তরবঙ্গে ১২ ঘণ্টায় ৩০০ মিলিমিটারেরও বেশি বৃষ্টি হয়েছে। তার সঙ্গে ভুটান ও সিকিম থেকে অতিরিক্ত জলের চাপ এসে তিস্তা-সহ অন্যান্য নদীগুলিতে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি তৈরি করেছে।’ শনিবার রাত থেকেই মুখ্যমন্ত্রী মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ, রাজ্যের ডিজিপি, উত্তরবঙ্গের জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারদের সঙ্গে একাধিক ভারচুয়াল বৈঠক করেছেন। সভায় উপস্থিত ছিলেন গৌতম দেব ও অনীত থাপার মতো জনপ্রতিনিধিরাও। মমতা জানিয়েছেন, ‘আমি নিজে পরিস্থিতির উপর নজর রাখছি এবং সোমবার মুখ্যসচিবকে নিয়ে উত্তরবঙ্গে যাচ্ছি।’
সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, মিরিক ও সুখিয়ায় ধসে চাপা পড়ে এখনও পর্যন্ত এক শিশু-সহ মোট ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। বেশ কয়েকজন নিখোঁজ। প্রবল বর্ষণে পাহাড়ি রাস্তা ভেঙে যাওয়ায় বহু জায়গায় যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। এই পরিস্থিতিতে সোমবার উত্তরবঙ্গে যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যেতে পারেন বিপর্যস্ত এলাকা পরিদর্শনে। উত্তরবঙ্গের পরিস্থিতি ক্রমশই গুরুতর হয়ে উঠছে। সোমবার বিকেল তিনটে নাগাদ তাঁর শিলিগুড়ি পৌঁছানোর কথা। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা নিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ আলোচনা করবেন এবং জেলা প্রশাসন ও ত্রাণ দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করবেন রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান। পরিস্থিতি সামাল দিতে রবিবারই নবান্ন থেকে রওনা হয়েছে এক বিশেষ প্রশাসনিক দল। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের সচিবের নেতৃত্বে ওই দলে রয়েছেন কৃষি দফতরের সচিব, জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরের সচিব-সহ একাধিক শীর্ষ আধিকারিক। তাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করবেন এবং জরুরি ভিত্তিতে ত্রাণ ও পুনর্বাসনের কাজ শুরু করবেন বলে জানা গিয়েছে।
রবিবার ইতিমধ্যেই পাঁচ জেলাশাসককে নিয়ে বৈঠকে করেছেন মমতা। পর্যটকদের জন্যও বিশেষ বার্তা দিয়েছেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘উত্তরবঙ্গে ধস হয়েছে। বৃষ্টিতে ভূটান-সিকিম ভেসে গেছে। মৃত্যুর ঘটনায় আমরা মর্মাহত। পাঁচটা জেলার জেলাশাসকদের নিয়ে বৈঠক করেছি। আমি সকাল ছটা থেকে মনিটর করছি। ক্রমাগত ১২ ঘণ্টা বৃষ্টি হয়েছে। আর দক্ষিণবঙ্গে ডিভিসি জল ছেড়েছে গাদাগাদা। দক্ষিণবঙ্গের ঘাটাল ভাসছে। ঘাটাল নিচু জমি। সেই কারণে জল জমছে। ডিভিসি জল ছাড়লেই জমে যায়। তারপর গঙ্গা ভর্তি। সামনেই জোয়ার আছে। গঙ্গা যদি ভর্তি থাকে জল বেরবে কোথা দিয়ে? সারা পৃথিবীতে বিপর্যয় চলছে। দীর্ঘদিন প্রকৃতিকে অবহেলা করার জন্য হচ্ছে। দার্জিলিং-কালিম্পংয়ের পাহাড় শক্ত তাও ঠিক আছে। মিরিকে নতুন পাহাড়। সেখানেই খালি খোদাই করে বাড়ি হচ্ছে। আমি শিলিগুড়ি যাব।কালই যাব। সেফ হাইসে অনেক মানুষকে পাঠানো হয়েছে। যাঁদের বাড়ি ভেঙে গেছে তাঁরা যাতে বাড়ি পায় সেটা দেখব। আর যাঁরা স্বজন হারিয়েছেন তাঁদের পরিবার যাতে চাকরি পায় আমরা দেখে দেব।’
দুর্গাপুজোর ছুটিতে উত্তরবঙ্গে বেড়াতে গিয়েছিলেন অসংখ্য বাঙালি পর্যটক। ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ায় তারা অনেকেই উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন হোটেলে আটকে পড়েছেন এবং অনেকের কাছেই হোটেল ভাড়া দেওয়ার মতো টাকা নেই বলে রাজ্য সরকারের সাহায্য চেয়ে ফোন করেছেন। এমন আটকে পড়া অসহায় পর্যটকদের উদ্দেশ্যে মমতা বলেন, ‘মিরিক হল ছোট পাহাড়। মিরিক-দার্জিলিং-কালিম্পং ঘিরে সাতটা ধস নেমেছে। একটা ব্রিজ ভেঙেছে। কালিম্পংয়ের রাস্তা বন্ধ আছে। অনেক পর্যটক আটকে আছেন। আমি বলেছি, পর্যটকরা যে যেখানে আছেন থাকবেন। তাঁদের যেন অতিরিক্ত হোটেল ভাড়া দিতে না হয়। হোটেল মালিকরা যাতে চাপ না দেয় সেটা সরকার দেখবে। কিন্তু তাঁদের আমরা সেফলি নিয়ে আসব।পর্যটকরা যেন তাড়াহুড়ো না করেন। মিরিকেই মূল ঘটনা ঘটেছে। আলিপুরদুয়ারকে অ্যালার্ট করা হয়েছে। অনেক জল জমে গেছে। বাইরে থেকে জল এসেছে।’


নবান্নে কন্ট্রোল রুম
এই পরিস্থিতিতে নজরদারি ও পর্যটকদের সাহায্যের জন্য নবান্নে খোলা হল ২৪ ঘণ্টার কন্ট্রোল রুম। হেল্পলাইন নং চালু করেছে দার্জিলিং পুলিশও। উত্তরবঙ্গে গিয়ে বিপর্যয়ে আটকে পড়া মানুষজনের জন্য ২৪X৭ কন্ট্রোল রুম চালু করা হয়েছে। চারটি হেল্পলাইন নং দেওয়া হয়েছে – ১০৭০, ৮৬৯৭৯৮১০৭০, ২২১৪-৩৫২৬, ২২৫৩-৫১৮৫।
দার্জিলিং পুলিশের তরফে পর্যটকদের সাহায্যের জন্য কন্ট্রোল রুম চালু হয়েছে। হেল্পলাইন নং ৯১৪৭৮৮৯০৭৮।