সুমন তরফদার। কলকাতা সারাদিন।
‘কিছু মানুষ, যারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছে, তাঁরা না থাকলে অনেকেই বিপদে পড়ত, তাঁদের ৮জনকে পুরস্কৃত করা হল।’ বন্যা দুর্গত উত্তরবঙ্গে এক সপ্তাহের মধ্যেই ফিরে এসে উদ্ধারকারীদের পুরস্কৃত করে তাদের উৎসাহ বাড়ালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রবিবার দুপুরে কলকাতা বিমানবন্দরে দাঁড়িয়েই মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, ‘ওখানে গিয়ে পর্যালোচনা বৈঠক হবে। উত্তরবঙ্গের বিপদে যাঁরা কাজ করেছেন তাঁদের আলাদা করে পুরস্কৃত করা হবে।’ অন্যদিকে, এয়ারপোর্টে দাঁড়িয়ে তার বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে সংবাদ মাধ্যমে বলে দাবি করে মমতা বলেন, ‘এয়ারপোর্টে আমার কথার ভুল ব্যাখ্যা হয়েছে। আমার সঙ্গে এমন রাজনীতি করবেন না। আমি মিট করি। অন্যরা করে না।’
উত্তরবঙ্গের বিপর্যয়ের পরে সেখানকার পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে বুধবারই কলকাতায় ফিরেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিন দিন পর, রবিবার আবার তিনি উত্তরবঙ্গে পৌঁছে গেলেন এবং আলিপুরদুয়ারে প্রশাসনিক সভা করলেন।
রবিবার দুপুর পৌনে ২টো নাগাদ কলকাতা বিমানবন্দরে পৌঁছোন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘’আমাকে একটা রিভিউ মিটিং করতে হবে। উত্তরবঙ্গের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় পুনর্নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। যাঁদের বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত, তাঁদের বাড়ি বানিয়ে দেওয়া হবে। ১ লক্ষ ২০ হাজার করে বরাদ্দ করা হয়েছে।’
মুখ্যমন্ত্রী আরও জানান, দুর্যোগকবলিত এলাকায় ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। তাতে মানুষের অসুবিধা হবে না। রোহিণী এলাকাতে পুনর্নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। মিরিকে যে সেতুটি ভেঙে পড়েছে, সেটি আর ৭-৮ দিনে মেরামত হয়ে যাবে। মমতা বলেন, ‘উত্তরবঙ্গে বিপর্যয়ে যাঁরা ভাল কাজ করেছেন, তাঁদের পুরস্কার দেওয়া হবে। আমায় একটা রিভিউ মিটিংও করতে হবে। বিপর্যয়ে অনেকের নথিপত্র নষ্ট হয়েছে। সে সব করিয়ে দিতে হবে। পাড়ায় সমাধানে সে ব্যবস্থা করা হবে।’
উত্তরবঙ্গে পৌঁছে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘যে যে জায়গাগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তার একটি রিপোর্ট তৈরি করে মুখ্যসচিবের কাছে দেবে।’ কোন বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, কোথায় কী প্রয়োজন- মূলত এই বিষয়গুলিই রিপোর্টে উল্লেখ থাকবে। উত্তরবঙ্গের ভয়ানক বিপর্যয় পড়ে কেন্দ্রীয় সরকার কোনো রকম সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় নেই জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বললেন, ‘আমরা কেন্দ্রের সাহায্যের আশায় বসে থাকি না। আমাদের যা সামর্থ্য, তা দিয়েই মানুষকে যতটা সম্ভব সাহায্য করছি। এখানকার বিপর্যয়ে মোকাবিলায় আগেই নানা কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। প্রচুর রাস্তা, সেতু ভেঙে গিয়েছে। সেইসব সারানোর কাজ চলছে। যত দ্রুত সম্ভব, আবার সব ঠিক করে দেওয়া হবে। রোহিনীতে কাজ শুরু হয়েছে। শেষ হতে ৫, ৬ দিন লাগবে। তবে মিরিকে ভেঙে পড়া ব্রিজ মেরামতিতে ৭,৮ দিন সময় লাগবে। তবে পাঙ্খাবাড়ি দিয়ে দার্জিলিং যাওয়া যাচ্ছে।’

মুখ্যমন্ত্রী জানালেন, ‘আজ আমি হাসিমারাতেই রাতে থাকব, কারণ পাহাড়ি পথে রাতে চলাচল করা সম্ভব নয়। আগামীকাল নাগরাকাটা ও আশপাশের আরও কিছু জায়গা পরিদর্শন করব। কাজ শেষ হতে সন্ধ্যা হয়ে যাবে, তারপর আমি উত্তরকন্যায় ফিরে আসব। পরের দিন আমি মিরিক যাব, যেখানে দুর্যোগের ঘটনা ঘটেছে। সেখানে থাকার ব্যবস্থা না থাকায়, আমি দার্জিলিংয়ে রাতে থাকব, কারণ দার্জিলিং ও কালিম্পং—দুই জেলারই পর্যালোচনা বৈঠক করতে হবে। মিরিক দার্জিলিং জেলার অন্তর্গত। বৈঠক শেষে পরের দিন আমি উত্তরকন্যায় ফিরে আসব। শুক্রবার আমি কলকাতায় ফিরব। সেদিন আমার পাঁচটি কালীপুজোর উদ্বোধন করার কথা রয়েছে। এছাড়া, দুর্যোগের সময় যাঁরা প্রশংসনীয় কাজ করেছেন, যেমন সিভিল ডিফেন্স, দমকল বাহিনী-সহ অন্যান্যরা তাঁদের সম্মানিত করা হবে।’