সুহানা বিশ্বাস। কলকাতা সারাদিন।
মন্দারমণিতে সৈকত লাগোয়া হোটেল ভাঙার নির্দেশে স্থগিতাদেশ হাইকোর্টের। জাতীয় পরিবেশ আদালতের রায় মেনে হোটেল ভাঙার নির্দেশ দেন জেলাশাসক। সেই নির্দেশে স্থগিতাদেশ দিলেন বিচারপতি অমৃতা সিনহা। ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত বহাল থাকবে স্থগিতাদেশ। মামলায় সব পক্ষকে রিপোর্ট পেশের নির্দেশ। মামলার পরবর্তী শুনানি ১০ ডিসেম্বর। এর আগেই অবশ্য জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশ মেনে বুলডোজার চালিয়ে মন্দারমনির বেআইনিভাবে চিহ্নিত হোটেলগুলির ভেঙে ফেলার নির্দেশ এই মুহূর্তে কার্যকর না করার জন্য রাজ্য প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মূলত মন্দারমণিতে বেআইনি হোটেল ভাঙার নির্দেশ দিয়েছিল দিল্লির ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনাল। নবান্ন সূত্রে খবর এসেছিল, মন্দারমনির যে অবৈধ রিসর্ট এবং হোটেলগুলি রয়েছে, সেগুলিকে বন্ধ করে দিয়েছিল জেলা প্রশাসন। পাশাপাশি ভাঙার নির্দেশ দিয়েছিল। যদি মালিকরা না ভাঙে, তাহলে দীঘা প্রশাসন নিজেই বুলডোজার চালিয়ে, ওটা ভেঙে দেবে। এই নির্দেশিকার খবর এসেছিল মুখ্যমন্ত্রীর কাছে।এরপরেই মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন যে, কোনওরকম বুলডোজার চলবে না। এবং জেলা প্রশাসন এই যে নির্দেশিকা দিয়েছিল, সেটা নবান্নের সঙ্গে অথবা মুখ্যসচিবের সঙ্গে আলোচনা না করেই জেলা প্রশাসন স্বতঃপ্রণোদিতভাবেই এই নির্দেশিকা দিয়েছিল। যার দরুণ মুখ্যমন্ত্রী অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েছিলেন।
অবৈধ নির্মাণের অভিযোগে, মন্দারমণির ১৪০টি হোটেল ভাঙার নির্দেশ দিয়েছিল জাতীয় পরিবেশ আদালত। জেলাশাসক নির্দেশিকাও জারি করেছিলেন। কিন্তু, আপাতত হোটেল ভাঙার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল নবান্ন। সমুদ্রের পাড় থেকে ৫০০ মিটারের মধ্যে কোনও স্থায়ী নির্মাণ করা যায় না। অভিযোগ, এই আইন না মেনেই পূর্ব মেদিনীপুরের মন্দারমণিতে গজিয়ে উঠেছে ১৪০টি হোটেল। ২০২২ সালে সেগুলিকে ভেঙে ফেলার নির্দেশ দিয়েছিল জাতীয় পরিবেশ আদালত।
১১ নভেম্বর জেলাশাসক একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিলেন। যেখানে বলা হয়েছিল, ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইবুন্যালের নির্দেশ অনুযায়ী ২০ নভেম্বর অর্থাৎ বুধবারের মধ্যে, মন্দারমণিতে সমুদ্রের ধারের হোটেল, রিসোর্ট, হোম স্টে ভেঙে ফেলতে হবে।মন্দারমণি হোটেলিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন সম্পাদক মুস্তাক আলি খান বলেছিলেন, এই সিদ্ধান্ত দুর্ভাগ্যজনক। হোটেল মালিকরা মার খাবেন শুধু তাই নয়, এই নিয়ে আইনি পথেও লড়ছি।’
তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক অখিল গিরি বলেছিলেন, সম্প্রতি মন্দারমণি আমাদের পর্যটন কেন্দ্রে ১৪০টি হোটেল ভাঙার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইবুন্যাল। যে সিদ্ধান্তে রাজ্য সরকার অজান্তে আছে। রাজ্য সরকারকে না জানিয়ে এই ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। হোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন ও পর্যটকদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী সরাসরি বলেছেন যে, এই সিদ্ধান্ত আমরা জানি না। এই সিদ্ধান্ত কে বা কারা নিয়েছে আমরা জানি না, রাজ্য সরকারকে অন্ধকারে রেখে এই সিদ্ধান্ত যারা নিয়েছে, রাজ্য সরকার কোনও হোটেল ভাঙতে চান না। মুখ্যমন্ত্রী বলেছে মন্দারমণিতে কোনও হোটেল ভাঙতে রাজ্য সরকার যাবে না।’
বিচারপতি হোটেল মালিকদের কাছে জানতে চান, তাঁদের কোনও রক্ষাকবচ দেওয়া হয়েছে কি না। কোনও পদক্ষেপ করা করা হয়েছে, কি না, সেটাও জানতে চান তিনি। হোটেল মালিকদের তরফে আদালতে সওয়াল করেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রশ্ন ওঠে, ১৯৯৯ সালের নির্দেশের পর, এখন কেন হোটেল ভাঙার কথা বলা হচ্ছে? আইনজীবী বলেন, “কমিটির যদি কোনও ক্ষমতা না থাকে বন্ধ করার, তাহলে সে কি পারে ভেঙে ফেলতে? সেখানে একটা শিল্প চলছে। পর্যটক শিল্প।” এই পলিসি ‘দূষিত’ বলে উল্লেখ করে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “উত্তরপ্রদেশে এমন বুলডোজার পলিসি নেওয়া হয়।” আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, গ্রিন ট্রাইব্যুনাল একটি কমিটি তৈরি করেছিল একটি আগেই। তবে তাঁর দাবি, ট্রাইব্যুনালে ৬ জন থাকা উচিত, কিন্তু এ ক্ষেত্রে ৫ জন ছিলেন, যা আইনি নয়। এছাড়া, আইনজীবীর বক্তব্য, কোনটা ভাঙতে হবে সেটা ট্রাইব্যুনালই ঠিক করবে। এক্ষেত্রে কমিটির কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে, সেটাও ঠিক নয়। তাঁর মতে, একটিও বেআইনি নির্মাণ হয়নি। তিনি বলেন, ‘যখন হোটেল তৈরি হয়েছে, তখন আইনটাই ছিল না, তাই এই নোটিসের কোনও বৈধতা নেই।’ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই যুক্তি শোনার পরেই জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশের উপরের স্থগিতাদেশ জারি করল কলকাতা হাইকোর্ট।
শুভেন্দু অধিকারী বলেছিলেন, ‘প্রথম কথা হচ্ছে প্ল্যান দিয়েছিলেন কেন? এগুলো তো প্ল্যান ছাড়া হয়নি। প্ল্যান যদি দিয়ে থাকেন, তাহলে ভাঙবেন কেন? আর যদি ভাঙবেন বলেছেন, ভাঙবেনই। মাঝখানে টাকা-পয়সা নিয়ে রফা করবেন না।’