সুমন তরফদার। কলকাতা সারাদিন।
নিম্ন আদালতে একাধিকবার সঞ্জয়ের ফাঁসির দাবি জানিয়েছিল সিবিআই। কিন্তু বিচারক জানিয়েছেন, এই ঘটনা বিরলতম নয়। সেই কারণে দোষীকে আমৃত্যু কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছেন। সঞ্জয় রায়ের সর্বোচ্চ শাস্তি চেয়ে শুক্রবার কলকাতা হাই কোর্টে মামলা দায়ের করল সিবিআই। শুক্রবার হাই কোর্ট এই সংক্রান্ত শুনানির দিনক্ষণ জানিয়ে দিয়েছে।
উচ্চ আদালতের বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি মহম্মদ শব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চ আগামী সোমবার এই মামলাটি শুনবে।
প্রায় দু’মাসের বেশি সময় ধরে আর জি কর-কাণ্ডের বিচারপ্রক্রিয়া চলেছে শিয়ালদহ আদালতে। সিবিআই এই মামলার চার্জশিটে একমাত্র অভিযুক্ত হিসাবে সঞ্জয়কে চিহ্নিত করেছিল। আদালত তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করে এবং আমৃত্যু কারাবাসের নির্দেশ দেয়। এই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয় রাজ্য সরকার। তারা সঞ্জয়ের ফাঁসির নির্দেশের আবেদন জানিয়েছে। একই দাবিতে আদালতে গেল সিবিআইও।
আরজি কর মামলায় সিবিআই তদন্ত নিয়ে একাধিক প্রশ্নচিহ্ন থেকে গিয়েছে। এই আবহে ধর্ষণ-খুনের এই ঘটনাকে ‘বিরলের মধ্যে বিরলতম’ মানতে চাননি শিয়ালদা আদালতের বিচারক অনির্বাণ দাস। নিম্ন আদালতের বিচারকের সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে হাই কোর্টে গিয়েছে সিবিআই। সেই মামলার শুনানি হবে বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি মহম্মদ শব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চে।
প্রসঙ্গত, গত ২০ জানুয়ারি শিয়ালদা আদালতে আরজি কর মামলায় চিকিৎসক ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা সঞ্জয় রায়কে আমৃত্যু কারাদণ্ডের সাজা শোনান বিচারক অনির্বাণ দাস। এদিকে আমৃত্যু কারাদণ্ডের পাশাপাশি ৫০ হাজার টাকা জরিমনা দিতে হবে সঞ্জয় রায়কে। এর আগে গত শনিবার আদালতের তরফ থেকে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৬৩ (ধর্ষণ), ৬৪ (ধর্ষণের সময় এমন ভাবে আঘাত করা, যাতে মৃত্যু হয়), ১০৩ (১) নং (খুন) ধারায় দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল। এই আবহে সঞ্জয়কে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৬৪ ধারার আওতায় সশ্রম যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ৫০,০০০ টাকা জরিমানা, ৬৬ ধারায় আওতায় আমৃত্যু কারাদণ্ড এবং ১০৩ (১) ধারার আওতায় সশ্রম যাবজ্জীবনের সাজা ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানার নির্দেশ দেন বিচারক। এদিকে বিচারক নির্দেশ দেন, নির্যাতিতার পরিবারকে ১৭ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে রাষ্ট্রকে।
বিচারক বলেন, এই মামলা বিরলের থেকে বিরলতম নয়। এই মামলা নিয়ে শিয়ালদা অতিরিক্ত দায়রা আদালতের বিচারক অনির্বাণ দাসের পর্যবেক্ষণ, আদালতের দায়িত্ব মানুষের ভাবাবেগকে দূরে সরিয়ে রেখে ন্যায়বিচারের বৃহত্তর স্বার্থকে অক্ষুণ্ণ রেখে চলা। আইনি ব্যবস্থার অখণ্ডতা বজায় রেখে আদালতকে কাজ করতে হয়।
বিচারক বলেছেন, ‘আদালতকে অবশ্যই জনগণের চাপ বা মানবিক আবেদনের কাছে মাথানত করার প্রলোভনকে প্রতিহত করতে হবে। বরং এমন একটা রায়দানের উপরে মনোনিবেশ করতে হবে, যা আইনি ব্যবস্থার অখণ্ডতা বজায় রাখে এবং ন্যায়বিচারের বৃহত্তর স্বার্থকে পূরণ করে।’ এদিকে এর আগে এক মামলায় ফাঁসির সাজা শোনানোর নজির ছিল বিচারক দাসের। অপরদিকে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালের তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনার পরে পশ্চিমবঙ্গে পাঁচটি পকসো মামলায় আসামিদের ফাঁসির সাজা দেওয়া হয়েছিল। এই আবহে সঞ্জয় রায়ের ফাঁসি চাইছিলেন অধিকাংশ মানুষ।
এই মামলায় ফাঁসিক দাবি করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে বিরোধী বিজেপির শুভেন্দু-সুকান্তরা। তবে বিচারক ফাঁসির সাজা দেননি। এরই সঙ্গে তাঁর রায়ে তদন্তের গাফিতলির বেশ কিছু বিষয় উল্লেখ করা হয়েছিল।