সুমন তরফদার। কলকাতা সারাদিন।
আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের আর্থিক দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলায় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের ভূমিকায় অসন্তুষ্ট কলকাতা হাইকোর্ট। মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজের ডেপুটি সুপার আখতার আলি আর জি করের দুর্নীতি নিয়ে মামলা করেছিলেন। সেই মামলায় ইডি সময় মতো চার্জশিট জমা করতে না পারাতেই জামিন পেয়ে যান হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ এবং টালা থানার ওসি অভিজিৎ মণ্ডল।
সেই নিয়ে এদিন ইডি-র ভূমিকার সমালোচনা করলেন বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ। ইডি চার্জশিটও দেয় না, বিচারপ্রক্রিয়াও শুরু করে না বলে মন্তব্য করলেন। আর জি করে দুর্নীতি নিয়ে যে মামলা করেছিলেন আখতার আলি, তাতে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট। পাশাপাশি, আর্থিক দুর্নীতির তদন্ত করছে ইডি-ও। কিন্তু তদন্তে ইডি-র ভূমিকায় যে সন্তুষ্ট নন, তা জানিয়ে দিলেন বিচারপতি ঘোষ। মঙ্গলবার শুনানি চলাকালীন আখতার আলির আইনজীবীরা মামলাটি বিচারাধীন রাখার আবেদন জানান। এখনই মামলাটির নিষ্পত্তি যেন না হয়, এমন আবেদন জানান। পাশাপাশি, মামলায় হাইকোর্টের নজরদারিও চেয়ে আবেদন করেন তাঁরা।
এতে বিচারপতি ঘোষ জানান, ইডি তাদের মতো তদন্ত করছে। ফলে এই মামলায় নজরদারির প্রয়োজন আছে বলে মনে করছেন না তিনি। বিচারপতি আরও জানান, একাধিক মামলায় দেখা গিয়েছে, ইডি চার্জশিট দেয় না। শুরু করে না বিচারপ্রক্রিয়াও। ফলে আদালতের নজরদারির প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করছেন না তিনি।
এ দিন হাইকোর্টে ইডি-র আইনজীবী অরিজিৎ চক্রবর্তী জানিয়েছেন, আরজি করের প্রাক্তন ডেপুটি সুপার আক্তার আলির দায়ের করা আর্থিক দুর্নীতির মামলায় শুরু হওয়া সিবিআই তদন্ত এখন শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এবার ইডি ওই মামলায় ইসিআইআর দায়ের করে তদন্ত শুরু করেছে। সহকারী সলিসিটর জেনারেল অশোক চক্রবর্তী জানান, সুপ্রিম কোর্টে আরজি করের খুন ধর্ষণ মামলার সঙ্গেই এই দুর্নীতির মামলাও চলছে।
আজই আরজি কর দুর্নীতি মামলার তদন্তের অগ্রগতি সংক্রান্ত রিপোর্ট মুখবন্ধ খামে বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের এজলাসে জমা দেয় সিবিআই। গত বছর ২৩ আগস্ট হাইকোর্টের নির্দেশে আরজি করের দুর্নীতি মামলার তদন্ত হাতে নেয় সিবিআই। পরে সুপ্রিম কোর্ট তাতে সিলমোহর দেয়। গত বছর ২৯ নভেম্বর চার্জশিট জমা দিয়েছে সিবিআই।
আর জি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় যখন তোলপাড়, সেই সময় সন্দীপের নেতৃত্বে হাসপাতালে দুর্নীতিচক্র চলছে বলে অভিযোগ করেছিলেন আখতার। করোনার সময় হাসপাতালের টাকা নয়ছয় থেকে মেডিক্য়াল বিপজ্জনক বায়োমেডিক্যাল বর্জ্য বিক্রি, একের পর এক চাঞ্চল্যকর অভিযোগ করেন তিনি। তাঁর দাবি ছিল, বেআইনিভাবে বিপজ্জনক বায়োমেডিক্যাল বর্জ্য বিক্রি করেছেন সন্দীপ। জিম এবং নিজের চেম্বারের সৌন্দর্যায়নের জন্য কোভিড ফান্ডের অপব্যবহার করেছেন।
টাকার বিনিময়ে বেআইনিভাবে চিকিৎসক ও অফিসারদের বদলি করার পাশাপাশি, অযোগ্যদের কাজের বরাত দিয়েছেন সন্দীপ। কোটি কোটি টাকা সরকারি অর্থের অপচয় করেছেন তিনি। সেই নিয়েই তদন্ত চলছে।
আরজি কর হাসপাতালে তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে আর্থিক দুর্নীতি চলেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। হাসপাতালের প্রাক্তন ডেপুটি সুপারের অভিযোগ, বিভিন্ন সময়ে চিকিৎসার সরঞ্জাম কেনার নামে টেন্ডার দুর্নীতি হয়েছিল আরজি করে। হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনিই ‘ঘনিষ্ঠ’দের টেন্ডার পাইয়ে দিয়েছিলেন।
আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালের আর্থিক দুর্নীতির মামলায় প্রথম গ্রেফতার হয়েছিলেন সন্দীপ। টানা কয়েক দিন সিবিআই দফতরে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। পরে এই মামলার সূত্র ধরে বিপ্লব সিংহ, আফসার আলি এবং সুমন হাজরাকেও গ্রেফতার করেছিলেন তদন্তকারীরা। এই মামলায় শেষ গ্রেফতার আশিস পাণ্ডে। প্রত্যেকেই বর্তমানে জেলবন্দি। সব পক্ষের বক্তব্য শুনে বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ জানান, ‘এই মুহূর্তে এই আদালতের অনুমতি মামলায় আর কিছু করার নেই। নিম্ন আদালতকে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে বিচার প্রক্রিয়া শুরু করে যত দ্রুত সম্ভব বিচার শেষ করতে হবে।’