সুমন তরফদার। কলকাতা সারাদিন।
“কাজ আটকালে হবে না। নিজের টাকা কামাতে পাহাড়কে বেচলে চলবে না।” উন্নয়নের ক্ষেত্রে কেউ যেন কোনও অসদুপায় অবলম্বন না করে সে বিষয়ে সর্তক করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
উপনির্বাচনের মাঝেই পাহাড় সফরে দার্জিলিংয়ে সরস মেলা উদ্বোধন করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার বেলা তিনটের সময়, এই মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন তিনি। এই মেলার উদ্বোধনের সময়েই তিনি পাহাড়বাসীকে সরকারের সঙ্গে একসঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করার ডাক দিলেন। সরকারও পাহাড়বাসীদের পাশে সর্বতভাবে আছে সেই কথাই বারংবার মনে করিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি পাহাড়বাসীদের উদ্দেশে বলেন, “আপনাদের সৌন্দর্য হল আপনাদের প্রতিভা।” আর সেই প্রতিভা কাজে লাগাতে সরকার সচেষ্ট সে কথা মনে করিয়ে দেন মমতা। তিনি বলেন, “আমি চাই স্কুল, কলেজ এখানে আরও বাড়ুক। এখানে ট্যালেন্ট প্রচুর আছে। আমরা চাই স্কিল ডেভলপমেন্ট সেন্টার এখানে বাড়ুক। আপনারা দারুণ ইংলিশ বলেন, ভালো ভালো স্কুল আছে, ছেলে মেয়েরা দারুণ স্মার্ট এখানে। তারা এগিয়ে যাক। কারও কাছে ভিক্ষা চাইতে হবে না।জিটিএ, প্রাইভেট পার্টি, সরকার স্কিল ডেভলপমেন্ট সেন্টার বানাচ্ছে। মিরিক, কার্শিয়ং-এ তা তৈরি হবে হবে।এখানে ট্রেনিং নিলে তিন মাসে চাকরি পাকা। ” এছাড়াও তিনি কালিম্পং, কার্শিয়ং, মিরিক, দার্জিলিংয়ে যেন পলিটেকনিক ও স্কিল ডেভলপমেন্ট সেন্টার গড়ার নির্দেশ দিয়ে যান সচিব সুব্রত গুপ্তকে।
পাহাড়বাসীর অভ্যর্থনায় তিনি যে অভিভূত তা নিজের কথায় বারবার তুলে ধরেন মমতা। এই বিষয়ে সোশ্যাল মিডিয়া এক্সে একটি পোস্টে তিনি দার্জিলিংবাসীর উষ্ণ অভ্যর্থনার কথাও তুলে ধরেন।
তিনি তাঁর বক্তৃতায় রাজ্য সরকারের কাজের খতিয়ানও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ” বাংলা আবাস যোজনায় রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে বাড়ি দেওয়া হয়েছে। ৫৪ হাজার চা বাগানে পাট্টা দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও ঘর বাড়ানোর টাকা দেওয়া হচ্ছে।”
উত্তরবঙ্গে যে উন্নয়ন হয়েছে সে কথাও স্মরণ করিয়ে দেন মমতা। তিনি বলেন, “পুরো উত্তরবঙ্গে এক লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে রাজ্যের পক্ষ থেকে। জিটিএ এলাকায় কাজ হচ্ছে। হোম স্টে ও ট্যুরিজম পলিসি করা হয়েছে। লামাহাটা এখন রোল মডেল হয়েছে। আমরা চাই আরও হোম স্টে হোক।”
তাঁর কথায় উঠে আসে দার্জিলিংয়ের চা প্রসঙ্গও। তিনি বলেন, ”
এরপরেই কেন্দ্রের দিকে নিশানা করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “ভোটের সময় ভোট নিয়ে যায়। কিন্তু একটা টাকাও কেন্দ্র দেয় না। শুধু বলে এটা করব, ওটা করব।”
রাজ্য সরকার আর কেন্দ্রের মধ্যে কোথায় ফারাক তা বলতে গিয়ে ব্যঙ্গের সুরে তিনি বলেন, “স্বাস্থ্য, জল, রাস্তা, জিটিএ, পাহাড়ের জন্য টাকা দেবে না। ওরা একদিন কাজ করে ভোটের জন্য। আর আমরা ৩৬৫ দিন কাজ করি।”
এরপরেই পাহাড়ের তৃণমূল পন্থী জিটিএ-এর চেয়ারম্যান অনীত থাপার উদ্দেশে বলেন, “পাহাড়ে আমি চাই অনীত থাপা এগিয়ে চলুক। তৃণমূলের সঙ্গে ওদের জোট আছে, থাকবে।”
পাহাড়কে শান্ত রাখার ক্ষেত্রেও সরকার যে সর্বদা সচেষ্ট তাও তাঁর কথায় ফুটে ওঠে। তিনি বলেন, “পাহাড়ে কেউ কেউ পাঁচ বছর অন্তর অন্তর অশান্তি করে। আমরা শান্তি চাই। সেই শান্তি বজায় থাকবে।” এরপরেই পাহাড়বাসীর উদ্দেশে মমতা বলেন, ‘বি ব্রেভ, বি ব্রাইট’।
বৃহস্পতিবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শিলিগুড়ি ফিরে আসার কথা। শুক্রবার কলকাতায় ফিরবেন মুখ্যমন্ত্রী। কলকাতায় ফিরেই তিনি আরও এক কর্মসূচিতে যোগ দেবেন। রাজারহাটে আদিবাসী ভবনে বীরসা মুণ্ডার ১৫০ তম জন্মতিথির অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন। নভেম্বরের ১৫-২১ তারিখ পর্যন্ত সব জেলাতেই পালিত হবে বীরসা মুণ্ডা দিবস। লোকসভা নির্বাচনেও তৃণমূল দার্জিলিং আসনে পরাস্ত হয়েছে। তারপর এটাই মুখ্যমন্ত্রীর প্রথম পাহাড় সফর। ফলে রাজনৈতিকভাবেও তাঁর এই সফর যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।