বিতস্তা সেন। কলকাতা সারাদিন।
নদিয়ার হরিণঘাটার মৌলানা আবুল কালাম আজাদ প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (মাকাউট) এক অভূতপূর্ব ঘটনায় উত্তাল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ক্লাসরুমেই বিয়ের আসর বসেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া ছবি এবং ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, এক শিক্ষিকা লাল টুকটুকে শাড়ি পরেছেন, গলায় রজনীগন্ধার মালা, হাতে শাঁখা, সিঁথিতে সিঁদুর।
পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছেন প্রথম বর্ষের এক ছাত্র, যার গলায়ও রজনীগন্ধার মালা। তবে বরের বেশে নেই তিনি, পরনে সাধারণ প্যান্ট-শার্ট। ক্লাসরুমের মধ্যে ছাত্র-শিক্ষিকার এই বিয়ের ছবি প্রকাশ্যে আসতেই সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক বিতর্ক।
কী ঘটেছে?
জানা গিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসেই বিভাগীয় প্রধানের উপস্থিতিতে এই বিয়ের অনুষ্ঠানটি সম্পন্ন হয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যাডে (রেজিস্টার) নিজেদের স্বামী-স্ত্রী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন তারা। এই ঘটনা সামনে আসার পরই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নড়েচড়ে বসেছেন। ইতিমধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করে বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত ওই শিক্ষিকাকে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে এবং ছাত্রটিকে সাসপেন্ড করা হয়েছে বলে খবর পাওয়া গিয়েছে।
শিক্ষিকার বক্তব্য
বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্বর্তী উপাচার্য তাপস চক্রবর্তী সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন, “ইউনিভার্সিটির একটি প্যাডে লেখাটা দেখা যাচ্ছে। শিক্ষিকার কাছ থেকে ব্যাখ্যা চাওয়া হলে তিনি বলেছেন, এটি একটি সাইকোড্রামার অংশ। ক্লাসরুমের মধ্যে এটি একটি ডেমোনস্ট্রেশন হিসেবে সবার সামনেই করা হয়েছে। তিনি নিজেই অনুমতি দিয়েছিলেন ভিডিও রেকর্ড করার জন্য, যেহেতু এটি ক্লাসের অংশ ছিল। তবে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিষয়টি ছড়িয়ে পড়ায় তাকে কিছু দিনের জন্য ছুটিতে থাকতে বলা হয়েছে। একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, যা পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখবে এবং রিপোর্ট দেবে।”
বিতর্কের কারণ
এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় তীব্র আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। অনেকের মতে, বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এমন ঘটনা অত্যন্ত অস্বাভাবিক এবং পেশাদারিত্বের পরিপন্থী।
আবার কেউ কেউ বলছেন, এটি যদি সত্যিই সাইকোড্রামা বা শিক্ষামূলক ডেমোনস্ট্রেশন হয়ে থাকে, তবে তা নিয়ে অতিরিক্ত হইচই করার কিছু নেই। তবে বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, ক্লাসরুমের মধ্যে এমন ডেমোনস্ট্রেশনের প্রয়োজনীয়তা এবং সীমাবদ্ধতা নিয়ে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পদক্ষেপ
ঘটনাটি তদন্তের জন্য গঠিত কমিটি পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে না। তবে এই ঘটনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ এবং শিক্ষক-ছাত্র সম্পর্ক নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে।
এই ঘটনা যতটা না বিস্ময়কর, তার চেয়ে বেশি আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পেশাদারিত্ব এবং নৈতিকতার সীমানা নিয়ে। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট প্রকাশের পরই কেবল এই ঘটনার সত্যতা এবং প্রেক্ষাপট স্পষ্ট হবে।