অসম সরকার ফের ফালাকাটার এক বাসিন্দাকে এনআরসি নোটিস পাঠিয়েছে, যা নিয়ে গর্জে উঠেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলার মানুষের প্রতি অসম সরকারের এই আচরণে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন তিনি। বাংলাভাষী ও বাঙালিদের উপর বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলোর নীতি ‘বিদ্বেষমূলক’ ও ‘বৈষম্যমূলক’ বলে অভিযোগ তুলেছেন মমতা। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, কেন বারবার বাংলার মানুষের উপর এই ধরনের হয়রানি হতে থাকবে।
গতকালের ঘটনা কোচবিহারের বাসিন্দা উত্তমকুমার ব্রজবাসীকে এনআরসির নোটিস পাঠানোর পর নতুন করে তীব্র প্রতিবাদের জন্ম দিয়েছে। এবার আলিপুরদুয়ার জেলার ফালাকাটা থানার বাসিন্দা অঞ্জলি শীলের নামেও অসম ফরেনার্স ট্রাইবুনাল থেকে নোটিস জারি করা হয়েছে। এই নোটিস সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দ্রুত ভাইরাল হয়ে যায় এবং সংশ্লিষ্ট পরিবারের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করেছে। অঞ্জলি শীল জানান, “আমাদের বাবার বাড়ি যদিও অসমেই, তবে আমরা দীর্ঘদিন ধরে বাংলার ফালাকাটায় স্থায়ীভাবে বসবাস করছি। এই নোটিস পেয়ে আমরা দুশ্চিন্তায় রয়েছি।”
নোটিসে উল্লেখ রয়েছে, অঞ্জলিকে ১৯ আগস্ট কোকরাঝাড়ের ফরেনার্স ট্রাইবুনালে উপস্থিত হতে হবে। নোটিসে ফালাকাটা থানার উল্লেখ থাকলেও নোটিসের উপরে কোচবিহার এসপি অফিসের সিলও রয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনিক জটিলতার কারণে এই নোটিস আসতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে বিষয়টি সামাজিক ও রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে ইতিমধ্যেই আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মঙ্গলবার বিকেলে নবান্নে সাংবাদিকদের বলেন, “বিজেপি শাসিত অসম সরকার বাংলার মানুষ এবং ভাষার প্রতি বিদ্বেষমূলক আচরণ করছে। বাংলা ভাষাকে ‘বাংলাদেশি’ বলে তকমা দেওয়া হচ্ছে, যা সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য। বাংলার মানুষকে কেন বারবার এইভাবে বিব্রত করা হবে?” মমতা আরও বলেন, “অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মার দৃষ্টি তাদের নিজেদের রাজ্যের সমস্যার দিকে হওয়া উচিত, সেখানে ডিটেনশন ক্যাম্পে অসংখ্য মানুষের মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে।”
এই ঘটনার পেছনে কেন্দ্রীয় সরকারের নীরবতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন মমতা। তিনি বলেন, “এমন রাজনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা বিরাজমান যেখানে সংখ্যালঘু ও নিরীহ মানুষের ওপর অবিচার চলছে, কেন্দ্রীয় সরকারও চুপ করে বসে রয়েছে।”
২০১৯ সালের আসামের এনআরসি তালিকা থেকে প্রায় ১৯ লক্ষ মানুষ বাদ পড়ায় দেশজুড়ে বিতর্ক এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছিল। আসামে তৈরি হওয়া ডিটেনশন ক্যাম্প ও এ ধরনের নোটিস পশ্চিমবঙ্গেও নতুন উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।
এই ঘটনার পেছনে রাজনৈতিক প্রভাব ও বিজেপির হিংস্র রাজনীতিকে দায়ী করছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, এই ধরনের পদক্ষেপ বাংলার মানুষের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি ও আতঙ্কের পরিবেশ তৈরির উদ্দেশ্যে নেওয়া হচ্ছে।

উত্তমকুমার ব্রজবাসী সম্প্রতি ধর্মতলায় শহিদ দিবসের মঞ্চেও উপস্থিত ছিলেন, যেখানে তিনি বাংলার অধিকার রক্ষায় তাঁর অবস্থান ব্যক্ত করেছিলেন। তারই ধারাবাহিকতায় ফের এই নোটিসের ঘটনা বাংলার রাজনীতিতে উত্তেজনা বাড়িয়েছে।
অঞ্জলি শীলের পরিবার এখন ওই নোটিসের জটিলতা মোকাবেলা করতে মরিয়া। পাশাপাশি বাংলার রাজনৈতিক নেতৃত্বও তাদের পাশে থেকে এই বিষয়ে কেন্দ্র এবং অসম সরকারের কাছে ন্যায্য ব্যবস্থা দাবি করছেন।