শোভন গায়েন। কলকাতা সারাদিন।
‘লোকসভার স্পিকার রাজ্য সরকারের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে রিপোর্ট তলব করেছেন। যদি রাজ্য রিপোর্ট দিতে দেরি করে, তাহলে স্বাধিকারভঙ্গের প্রস্তাব অনুযায়ী কেন্দ্রীয় পদক্ষেপ করা হবে।’ সোমবার উত্তরবঙ্গের নাগরা কাটায় বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মুর উপরে ভয়ানক আক্রমণের ঘটনায় রাজ্য সরকারের ওপরে চাপ বাড়ি উপরে চাপ বাড়িয়ে লোকসভার অধ্যক্ষের রিপোর্ট তলবের কথা জানালেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিরেণ রিজিজু।
সোমবার জলপাইগুড়ির নাগরাকাটার বন্যা-বিধ্বস্ত এলাকায় পরিদর্শনে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়েন মালদহ উত্তরের বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু এবং শিলিগুড়ির বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ। সেই সময় ইটের আঘাতে গুরুতরভাবে আহত হন খগেন মুর্মু। শঙ্কর ঘোষকেও ধাক্কা ও মারধরের চেষ্টা করা হয়। সেই ঘটনার প্রেক্ষিতে গতকাল প্রধানমন্ত্রী নিজে উদ্বেগ প্রকাশ করার পাশাপাশি আজ রাজ্য সফরে পাঠিয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে। মঙ্গলবার উত্তরবঙ্গ সফরে এসে সেই বিষয়েই স্পষ্ট বার্তা দিলেন কেন্দ্রীয় সংসদ বিষয়কমন্ত্রী কিরেন রিজিজু। তিনি জানান, স্পিকারের তলব করা রিপোর্ট জমা দিতে দেরি হলে উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হবে। মঙ্গলবার সকালে বাগডোগরা বিমানবন্দরে নামেন রিজিজু। সেখান থেকে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে সঙ্গে নিয়ে সড়কপথে মিরিকের উদ্দেশে রওনা দেন তিনি। উত্তরবঙ্গের পাহাড়ি অঞ্চলগুলিতে বন্যা ও ভূমিধসের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ খতিয়ে দেখাই তাঁর সফরের মূল উদ্দেশ্য বলে জানান কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রতিনিধি হিসেবে তিনি শুধু দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনই করবেন না, মৃতদের পরিবারের সদস্য এবং দুর্গত মানুষদের সঙ্গেও দেখা করবেন।
তিনি আরও বলেন, ‘শুধু সাংসদ-বিধায়কদের বিষয় নয় । প্রত্যেক নাগরিকের সুরক্ষা পাওয়া উচিত । ভারতের সিস্টেম আছে । আইন আছে, নিয়ম আছে । দাদাগিরি করে, গুন্ডারাজ করে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া হবে, সেটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় । আমরা চাই রাজ্য সরকার গ্রাউন্ড জিরোর রিপোর্ট সময়মতো দিক যাতে দ্রুত তদন্ত করা যায়।’ রিজিজু স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, রাজ্য সরকারের রিপোর্টের ভিত্তিতেই পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
রিপোর্ট তলব লোকসভার স্পিকারের
বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, গতকালের ঘটনায় এখনও পর্যন্ত মোট ৮ জনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। বিজেপি নেতৃত্ব প্রশ্ন তুলেছে, একজন সাংসদের উপর হামলা হওয়া সত্ত্বেও কেন পুলিশ ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও কোনও পদক্ষেপ করল না? এদিকে, এই ইস্যুতে ইতিমধ্যেই লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা রাজ্যের কাছে রিপোর্ট তলব করেছেন। অন্যদিকে, তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, পুলিশ আগে বন্যা মোকাবিলা করবে, তারপর গ্রেফতারি।

অসুস্থ রাজ্যপাল
উত্তরবঙ্গ সফরে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লেন রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস। মঙ্গলবার মালদহ উত্তরের বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মুকে দেখতে শিলিগুড়ির এক বেসরকারি হাসপাতালে যান তিনি। রাজ্যপাল তাঁর খোঁজখবর নেওয়ার কিছুক্ষণ পরেই অসুস্থ বোধ করেন বলে সূত্রের খবর। তিনি অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করার জন্য পুলিশ-প্রশাসনকে 24 ঘণ্টার সময় বেঁধে দেন
রাজ্যপালের মঙ্গলবারের কর্মসূচি অনুযায়ী, ময়নাগুড়িতে বন্যা ও বৃষ্টিবিধ্বস্ত এলাকা পরিদর্শনের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলার কথা ছিল। তবে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ায় সেই সফর বাতিল করতে হয়েছে তাঁকে। ঠিক কী কারণে অসুস্থ হয়েছেন, তা নিয়ে রাজভবনের তরফে এখনও কোনও আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়া হয়নি।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের এপ্রিল মাসে হার্টে ব্লকেজ ধরা পড়ায় তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। টানা ২৩ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর মে মাসে তিনি হাসপাতাল থেকে রাজভবনে ফেরেন। প্রথমে তাঁকে কমান্ড হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও পরে বাইপাসের ধারের এক বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়, যেখানে দীর্ঘ চিকিৎসার পর ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠেন রাজ্যপাল।