রঞ্জন মাহাতো। কলকাতা সারাদিন।
দুর্গাপুরে বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ডাক্তারি পড়ুয়া ছাত্রীকে কলেজের পেছনের জঙ্গলে গণধর্ষণের যে অভিযোগ উঠেছিল সেই অভিযোগ দায়ের হওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই সমস্ত অভিযুক্তকে গ্রেফতার করল আসানসোল দুর্গাপুর কমিশনারেটের পুলিশ। রবিবারই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট জানিয়েছিলেন ধর্ষণের মতো ঘটনায় জিরো টলারেন্স। সেই মতোই সোমবার গ্রেফতার শেষ অভিযুক্ত। পাশাপাশি নির্যাতিতার বয়ানের সঙ্গে তার সঙ্গে থাকা সহপাঠীর বয়ান অসঙ্গতিপূর্ণ মনে হওয়ায় এখনো পর্যন্ত তাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ চালিয়ে যাচ্ছে আসানসোল দুর্গাপুর কমিশনারেটের গোয়েন্দারা।
অন্যদিকে হাসপাতালে ভর্তি নির্যাতিতার শারীরিক অবস্থা সোমবার অনেকটা ভালো বলে জানিয়েছে তার পরিবার।
দুর্গাপুরের বেসরকারি কলেজের ডাক্তারি পড়ুয়ার ক্ষেত্রেও যে পুলিশ সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেবে তা ছিল অবধারিত। রবিবার জঙ্গল থেকে আটক করা হয়েছিল চতুর্থ অভিযুক্তকে। সোমবার জিজ্ঞাসাবাদের পরে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সোমবার গ্রেফতার হয় পঞ্চম অভিযুক্ত। মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন ধরে গ্রেফতার করা হয় তাকে। ঘটনার পরে দুর্গাপুরের গোপালমাঠ এলাকায় আত্মীয়ের বাড়িতে গা ঢাকা দিয়েছিল সে। সেখান থেকেই তাকে গ্রেফতার করা হয়।
রবিবার রাত থেকে সোমবার সকাল। মাত্র কয়েকঘণ্টার মধ্যে পরপর পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার দুর্গাপুর কাণ্ডে শেষ দুই অভিযুক্ত। জানা গিয়েছে, রবিবার রাতভর জিজ্ঞাসাবাদের পর গ্রেপ্তার করা হয়েছিল দুর্গাপুর নগরনিগমের অস্থায়ী কর্মী নাসিরউদ্দিন শেখকে। দুপুরে জানা গেল, শেষ অভিযুক্ত সফিকুল শেখকেও জালে এনেছেন তদন্তকারীরা। বিজড়া এলাকায় গা ঢাকা দিয়ে ছিল সে। পুলিশ তল্লাশি চালিয়ে সেখানকার গোপালমাঠ থেকে গ্রেপ্তার করেছে সফিকুলকে। তবে এর বিষয়ে এখনই বিস্তারিত তথ্য জানাতে পুলিশ নারাজ। আগেই ডাক্তারি ছাত্রীকে গণধর্ষণের অভিযোগে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির কথা জানিয়েছিল জেলা পুলিশ। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও আশ্বাস দিয়েছিলেন, জড়িতরা কড়া শাস্তি পাবেই। এবার অভিযোগের দু’দিনের মধ্যে সব অভিযুক্ত ধরা পড়ায় এবার ঘটনার দ্রুত কিনারা হবে বলে আশাবাদী পুলিশ মহল।
জানা গিয়েছে শুক্রবার রাতে ওই ছাত্রী কলেজের হস্টেল থেকে এক বন্ধুর সঙ্গে খাবার খেতে বেরিয়েছিলেন। অভিযোগ, ফেরার পথে তাঁকে জোর করে একটি নির্জন জঙ্গলে টেনে নিয়ে যায় কয়েকজন দুষ্কৃতী। সেখানে তাঁকে ধর্ষণ করা হয়। নির্যাতিতার পরিবারের দাবি, অভিযুক্তরা তাঁর মোবাইল ফোন কেড়ে নেয় এবং ৩ হাজার টাকা চায়। মেয়েটি টাকা দিতে না পারায় তাঁকে মারধরও করা হয়। কিছু সময় পর রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁর বন্ধু তাঁকে উদ্ধার করে।

গত শুক্রবার গভীর রাতে দুর্গাপুরের নিউ টাউনশিপ থানায় অভিযোগ দায়ের হওয়ার পরেই ঘটনার গুরুত্বের নিরিখে প্রায় যুদ্ধকালীন তৎপরতায় তদন্তে নামে নিউ টাউনশিপ থানার পুলিশ। আশ্বাস দেওয়া হয়, দ্রুতই দোষীদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার ও কড়া শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। তদন্তের স্বার্থে ঘিরে ফেলা হয় গোটা পরাণগঞ্জের জঙ্গল। পাঁচজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়। মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই সব অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার হওয়ায় পুলিশের সক্রিয়তাই প্রমাণ করল।