সুমন তরফদার। কলকাতা সারাদিন।
তৃণমূল আগেই হারিয়েছে সর্বভারতীয় দলের তকমা। এবারে সেই বিষয়টি তুলে ধরে প্রকাশ্যে চিঠি লিখে মমতাকে খোঁচা দিলেন অসমে তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি। অসম তৃণমূলের সভাপতি রিপুন বোরা দল ছাড়লেন। রবিবার তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি লিখে ইস্তফার পাশাপাশি দলের প্রাথমিক সদস্যপদ ছাড়ার কথাও জানিয়েছেন তিনি।
চিঠিতে তিনি সভাপতি হিসাবে অসমের জনতার কাছে তৃণমূলের গ্রহণযোগত্যা তুলে না ধরতে পারার ব্যর্থতাকে কারণ দেখিয়েছেন। ২০২২ সালের এপ্রিলে রাজ্যসভার সাংসদ সুস্মিতা দেবের সঙ্গে কলকাতায় এসে অভিষেকের হাত ধরে তৃণমূলে যোগ দেন রিপুন। কংগ্রেস থেকে আসা নেতাকে অল্প সময়ের মধ্যেই দলের রাজ্য সভাপতি পদ দেওয়া হয়। কিন্তু অসমে লোকসভা নির্বাচনে চারটিতে চারটি আসনেই পরাস্ত হয় তৃণমূল। সেই হারের দায় নিয়েই তিনি পদত্যাগ করছেন বলে চিঠিতে উল্লেখ করেছেন।
চিঠিতে রিপুন লিখেছেন, অসমের মানুষ তৃণমূলকে গ্রহণ করেনি। তাঁরা তৃণমূলকে পশ্চিমবঙ্গের আঞ্চলিক দল হিসাবেই দেখে। তাই পরিশ্রমের ফসল তুলতে ব্যর্থ হয়েছে তৃণমূল। কানাঘুষো শোনা যাচ্ছে, ফের কংগ্রেসেই ফিরতে পারেন রিপুন। লোকসভা নির্বাচনে মোটের উপর ভাল ফল করেছে কংগ্রেস।
তৃণমূলে যোগ দেওয়ার আগে কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি ছিলেন রিপুন। অসম থেকে হাত প্রতীকেই রাজ্যসভার সাংসদ হয়েছিলেন। সুস্মিতা দেবের বাবা সন্তোষমোহন দেবের ঘনিষ্ঠ ছিলেন অসমের রাজনীতিতে। অসমেও যথেষ্ট জনপ্রিয় মুখ। সেরকম একজন নেতাকে হারানো অসমে তৃণমূলের কাছে বড় ধাক্কা বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। রিপুন সভাপতির দায়িত্ব নেওয়ার পর অসমে শাসক বিজেপির বিরুদ্ধে রাজনৈতিক মাটি অনেকটাই শক্ত করে ফেলেছিল তৃণমূল। ৩৫টির মধ্যে ৩১ জেলায় দলের সংগঠন তৈরি হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু তার পরেও অসমের রাজনীতিতে গ্রহণযোগ্য হতে পারেনি জোড়াফুল।
দলের শীর্ষনেতৃত্বের বিরুদ্ধে অসমে দলকে শক্তিশালী করে তোলার পরামর্শ অগ্রাহ্য করার অভিযোগও এনেছেন রাজ্যসভার প্রাক্তন সাংসদ রিপুন। তিনি অভিষেককে লেখা চিঠিতে জানিয়েছেন, ‘অসমে তৃণমূল কংগ্রেসের শক্তিশালী দল হয়ে ওঠার দারুণ সম্ভাবনা আছে। কিন্তু কিছু সমস্যার জন্য আমাদের উন্নতি থমকে গিয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হল, মানুষের মনে বদ্ধমূল ধারণা তৈরি হয়েছে, তৃণমূল কংগ্রেস পশ্চিমবঙ্গের আঞ্চলিক দল। মানুষের এই ধারণা বদলে দেওয়ার জন্য আমরা কিছু পরামর্শ দিয়েছিলাম। গত দেড় বছর ধরে আমি বারবার আপনার এবং আমাদের প্রধান মমতা দিদির সঙ্গে সাক্ষাতের চেষ্টা করেছি। অসম তৃণমূল কংগ্রেসের সমস্যা মেটানোর জন্যই আপনাদের সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমার এই চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।’