হস্তি শাবক সহ একটি হাতির দল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বন দফতরের চাঁদড়া রেঞ্জের দিকে যাচ্ছিল। কংসাবতী নদী পারাপার করার সময় কংসাবতী নদীর জলের স্রোতে ভেসে যায় একটি কয়েক মাসের হস্তি শাবক। বাচ্চা হাতিটিকে চোখের সামনে ভেসে যেতে দেখে একটি পূর্ণ বয়স্ক হাতি অনেক চেষ্টা করে তাঁকে ফিরিয়ে নিয়ে আসার জন্য। হস্তি শাবক কে ফেরাতে না পেরে চারিদিকে ছুটাছুটি করার সাথে হাতি টি প্রচুর চিৎকার করতে থাকে। হাতিটির চিৎকারে গ্রামের মানুষের ঘুম ভেঙ্গে যায়।
কি হয়েছে তা দেখার জন্য গ্রামের মানুষজনেরা কংসাবতী নদী পাড়ে চলে আসেন৷ ততক্ষণে বেশ কয়েক কিলোমিটার হস্তি শাবকটি ভেসে গিয়ে একটি নদীর চরে ( ঝোপঝাড় যুক্ত কাশ বন) আটকে ছিল। পরে বনদফতরের হাতি ট্রেকার টিমের সদস্যরা কংসাবতী নদীর জলে সাঁতার কেটে গিয়ে হস্তি শাবক টির কাছে পৌছায়। সেই সময় হস্তি শাবকটি মানুষ দেখে কাশ বনের মধ্যে চারিদিকে ছুটাছুটি শুরু করে।
পরে বন দফতর এর কর্মী ও স্থানীয় মানুষজনেরা হস্তি শাবকটি কে ঘিরে ধরে তার চোখে কাপড় বেঁধে সেখান থেকে উদ্ধার করে কংসাবতী নদীর পাড়ে নিয়ে আসেন । এদিকে শাবকটিকে নদীর জল থেকে উদ্ধার করার জন্য বনদফতর এর পক্ষ থেকে বোট,দড়ি,টিউব প্রস্তুত রাখা হয়েছিল ।
বনদফতর ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে চল্লিশ থেকে বিয়াল্লিশটি হাতির একটি বড় দল ঝাড়গ্রামের বড়বন খাসজঙ্গল এলাকা থেকে মানিকপাড়া রেঞ্জের দিকে যাচ্ছিল। আর পুরো দলটিকে মনিটারিং করছিলেন বনদফতরের লোকজন। দল হাতিটির সাথে ছোট, বড়,মাঝারি বয়সের শাবক ছিল। দলটি নুনিয়াকুন্দরি, বাঁশতলা,রামরামা হয়ে কংসাবতী নদীর ঘাট এলাকা ঝাড়গ্রাম ব্লকের সাতপাটিতে জলে নামে। নদী পার হওয়ার সময় ডান দিক ঘেঁষে বাঁকড়া এলাকার দিকে জলের স্রোতে ভেসে যায় হস্তি শাবক টি। এই সময় ঘটনা স্থলে উপস্থিত ছিলেন জামবনি ব্লকের বন দফতর এর পড়িহাটির রেঞ্জার মহম্মদ সাহিদ সহ অন্যন্য বনদফতরের কর্মীরা।
এদিকে দল হাতির সাথে মা হাতিটি চাঁদড়া ঘাটের দিকে পৌঁছে যায়।যখন বুঝতে পারে হস্তি শাবকটি দলের সাথে নেই তখন তীব্র গর্জন দেওয়া শুরু করে। রেঞ্জার মহম্মদ সাহিদ পুরো বিষয়টির নেতৃত্বে ছিলেন। তারা চেষ্টা করছিলেন কোনভাবে শাবকটিকে মা হাতিটির সামনে নিয়ে যাওয়া। এদিকে এরমধ্যেই শাবক হাতিটিকে ফিরিয়ে নিতে মা হাতি সহ দুটো বড় হাতি এবং মাঝারি একটি হাতি চাঁদড়া ঘাটের দিক থেকে নদী সাঁতরে এদিকের ঘাটে চলে আসে। আর এসেই সন্তানকে ফিরে পেতে গর্জন করার সাথে সাথে অস্থির হয়ে এলোমেলোভাবে ছুটতে থাকে।
একদিকে প্রচুর মানুষের উপস্থিতি আর হস্তি শাবক ও অন্য দিকে হস্তি শাবক এর মায়ের দাপাদাপি এই সব কিছু সামলে বনদফতরের লোকজন রীতি মতো ঝুঁকি নিয়ে হস্তি শাবকটিকে তার মায়ের সামনে এনে ছেড়ে দেয়। আর হস্তি শাবক টি কে ফিরে পেয়ে মা হাতি টি ও তার সঙ্গীরা কংসাবতী নদী পার করে চাঁদড়ার দিকে ফিরে যায়। কোন রকম কোন ক্ষয়ক্ষতি ছাড়া ঘন্টা দেড়েকের প্রয়াশে হস্তি শাবকটিকে উদ্ধার করে মা হাতির কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার ঘটনায় খুশি এলাকার মানুষ জন থেকে শুরু করে বনদফতরের লোজজন। পুরো এই হস্তি শাবক উদ্ধারের পক্রিয়ায় বনদফতরের মনিটরিং তথা ট্রেকার দলের কুড়িজন সদস্য ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন।
এই বিষয়ে ঝাড়গ্রাম বন বিভাগের ডিএফও উমর ইমাম বলেন ” কংসাবতী নদী পার করে মেদিনীপুরের দিকে যাওয়ার সময় একটি হস্তি শাবক দল থেকে আলাদা হয় জলে ভেসে গিয়ে নদীর ভিতরে একটি চরে আটকে পড়ে। ট্রেকার টিমের দুই সদস্য সাঁতার কেটে শাবকটিকে উদ্ধার করে।এরপর আমরা শবকটিকে তার মায়ের কাছে ফিরিয়ে দিই, দলটি ফিরে যায়। “