সুমন তরফদার। কলকাতা সারাদিন।
“জঙ্গলের অধিকার জঙ্গলের অধিবাসীদের থাকা উচিত। এটাও আমরা করেছি বিরসা মুন্ডা যেগুলো বলতেন আমরা এখন সেগুলো করেছি। বিরসা মুন্ডা আন্দোলন দেখে আজকের প্রজন্ম অনুপ্রাণিত হয়।” বিরসা মুন্ডার ১৫০তম জন্ম দিবসে আদিবাসীদের অধিকার নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “ট্রাইবেল ডেভেলপমেন্ট কমিটির বৈঠক আগামী ১৮ তারিখ। জঙ্গল আগে ছিল রক্তাক্ত, ক্ষুধার্ত শোষণাক্ত। আমরা এখন জঙ্গলে শান্তি ফিরিয়ে দিয়েছি। তিরন্দাজী একাডেমির সাফল্যের কথা বলছেন মুখ্যমন্ত্রী। আমি চাই এই একাডেমীর খেলোয়াড়রা আগামী দিনে অলিম্পিকে পদক জিতবে।জিমনাস্টিককে আরেকটু গুরুত্ব দিলে সেখানেও সাফল্য আসবে। ট্রাইবেল ডিপার্টমেন্টের বাজেটে আমাদের সময় এখন বেড়ে দেড় হাজার কোটি টাকা বাজেট। আগে কিছুই ছিল না। গেড়ি গুগলী খেয়ে থাকতো। ৪৯ হাজার মানুষ ফরেস্টা পাট্টা পেয়েছে। একাধিক আবাসিক স্কুল চালু করা হয়। একাধিক হস্টেলে চালু হয়েছে। বিদেশে পড়তে গেলে কুড়ি লক্ষ টাকা পর্যন্ত লোন পাওয়া যায়। সিএসকে বলব, গরিব ব্যাকওয়ার্ড ক্লাসকে বলবো এই প্রকল্পগুলোর মধ্যে যুক্ত করতে।”
উত্তরবঙ্গ সফর শেষে কলকাতায় ফিরেই আদিবাসী ভবনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার বিরসা মুন্ডার ১৫০-তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে তিনি রাজারহাটে পরিষ্কার জানান, সপ্তাহব্যাপী রাজ্য জুড়ে বিরসা মুন্ডার জন্মের সার্ধ শতবর্ষ উৎসব পালিত হবে। এদিন মমতা মনে করিয়ে দেন, ‘আগামী প্রজন্মের কাছে বিরসা মুন্ডার অবদানের কথা তুলে ধরতেই রাজ্যের তরফে এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা সংগ্রামের লড়াইয়ে উজ্জ্বল নাম বিরসা মুন্ডা।’
মুখ্যমন্ত্রী মনে করিয়ে দেন, “মাত্র ২৫ বছর বয়সে তীর ধনুক নিয়ে দেশের জন্য লড়াই করে নিজের জীবন দিয়েছেন। বিরসাই মনে করিয়েছিলেন, ফরেস্টের অধিকার শুধুমাত্র ট্রাইবালদের হাতে থাকা উচিত। পরে আমাদের সরকারই জঙ্গলের অধিকার সেখানকার আদিবাসী মানুষদের হাতে পাকাপাকিভাবে তুলে দিয়েছি। তাঁর আপোষহীন সংগ্রামের জন্যই তিনি বিরসা ভগবান নামে পরিচিত। মানুষ যাতে অনুপ্রাণিত হন, সেদিকে প্রথম থেকেই জোর দিয়েছে আমাদের সরকার।”
মুখ্যমন্ত্রী বলায় সাঁওতালি ভাষায় কথা বললেন বীরবাহা হাঁসদা। মমতা বলেন, “আজকের বিরসা মুন্ডার ১৫০তম জন্মদিন পালন করতে পেরে আমি গর্বিত। আগামী সাতদিন বিভিন্ন জেলায় ব্লকে অনুষ্ঠান হবে এই উপলক্ষে। ভাষাটা একটু শক্ত আছে। আমি এক লাইন বলব সাঁওতালিতে। ভাষাটা শেখার চেষ্টা করব। আগামী প্রজন্মের জানা দরকার বিরসা মুন্ডার সম্পর্কে। তাই এই অনুষ্ঠান। আমরা এখন আইন করেছি আদিবাসীদের হাতে থাকবে।” মমতা জানান, সাঁওতালি অভিধান চালু হয়েছে।
মমতা বলেন, “রাজ্যে ২১ লক্ষ ৬২ হাজার ছাত্রছাত্রীকে স্কলারশিপ দেওয়া হয়। সাঁওতালি ভাষাকে আমরাই স্বীকৃতি দিয়েছি। আদিবাসী সম্প্রদায়ের পাশে দাঁড়াতে অনেক আইসিডিএস সেন্টার করা হয়েছে। এছাড়া বন্য অধিকার আইনের মাধ্যমে প্রায় ৪৯ হাজার আদিবাসী মানুষকে ফরেস্ট পাট্টা এবং ৮৫১ কমিউনিটি পাট্টা দেওয়া হয়েছে। ঝাড়গ্রামে কবি সাধু রামচাদ মুর্মুর নামে বিশ্ববিদ্যালয় ও নয়াগ্রামে পণ্ডিত রঘুনাথ মুর্মুর নামে কলেজ করা হয়েছে। আদিবাসী সম্প্রদায়ের পাশে দাঁড়াতে অনেক আইসিডিএস সেন্টার করা হয়েছে। সেলফ হেল্প গ্রুপ্রের জন্য টাকা দিয়েছি। রাজ্য স্তরে টাকা দেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মনে করিয়ে দেন, এখন ওরা বিনামূল্যে রেশন পায়। আগে ঠিকমতো খেতে পেত না। ১ কোটি ৬২ লক্ষের বেশি কাস্ট সার্টিফিকেট দিয়েছে আমাদের সরকার।”
এরপরেই আসেন দিঘার নতুন মন্দিরের কথায়। মমতা বলেন, “দিঘায় যে জগন্নাথ মন্দির হচ্ছে উচ্চতা এক পুরীর মন্দিরের সঙ্গে। জায়গা আরও বেশি। দিঘায় চৈতন্যদেবের নামে তোরন হচ্ছে। নাম দিয়েছি ‘চৈতন্যধাম’। আমি যাব গিয়ে দেখব কতটা কাজ তৈরি হয়েছে। অসম্পূর্ণ কাজ উদ্বোধন করব না। তাতে আরও বেশি সময় লাগলে লাগবে। মন্দিরের ঠাকুরটা তৈরি হবে মার্বেলের। তবে পুজোর জন্য নিম কাঠে ঠাকুর তৈরি হবে। আমরা গিয়ে একটা ট্রাস্টি বোর্ড করব। কে পুজো করবে, কী ভাবে হবে- সব ঠিক হবে। আমরা ভোটের সময় পাহারাদার হই না, আমরা ৩৬৫ দিন পাহারাদার পুজোর সময়, আমার সমস্ত অফিসার কেউ ছুটি নেয় না। আমরা রাত জেগে পাহারা দিই।”