সুহানা বিশ্বাস। কলকাতা সারাদিন।
বুধবার ফলতায় ‘সেবাশ্রয় শিবির’ থেকে এই মন্তব্য করেন অভিষেক। মালদায় দুলাল সরকার এবং তার পর দলের কর্মী খুন হওয়ার ঘটনায় দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব নিয়ে প্রশ্ন করা হয় তাঁকে। জবাবে অভিষেক বলেন, “দল বড় হলে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব স্বাভাবিক। পরস্পরের মতামত না মিলতেই পারে। কিন্তু দলকে কেউ দুর্বল করতে চাইলে, তার ছাড় নেই। কেউ দলের শৃঙ্খলার ঊর্ধ্বে নয়। মানুষ আমাদের নির্বাচিত করেছেন। বিনয়ী হতে হবে আমাদের। আমরা মানুষের দল। কর্মীদের সেকথা বুঝতে হবে। সারাবছর থাকতে হবে, মানুষের কাছে হাতজোড় করে থাকতে হবে।”
অভ্যন্তরীণ গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে তৃণমূলের মধ্যেই রক্তক্ষয় শুরু হয়েছে। পর পর খুন হয়েছেন দলের নেতা এবং কর্মী। সেই আবহেই এবার কড়া বার্তা দিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। দল বড় হলে, মতানৈক্য, মতভেদ স্বাভাবিক। কিন্তু কেউ দলকে দুর্বল করে দিতে চাইলে রেয়াত করা হবে না বলে মন্তব্য করলেন তিনি। পাশাপাশি, সিপিএম-এর উদাহরন টেনেও কড়া বার্তা দিলেন।
দলের সাংগঠনিক নিয়ম-নীতি ও শৃঙ্খলা রক্ষা প্রসঙ্গে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক জানান, “পার্টির ডিসিপ্লিনের উর্ধ্বে কেউ নয়। শৃঙ্খলাপরায়ন হয়ে দল করতে হবে। মানুষের জন্য কাজ করতে হবে। কিছু লোক আছে ধরাকে সরা জ্ঞান করে। ভাবে আমার থেকে বড় কেউ নেই। যারা ভাবছে এলাকা দখল করে দল চালাব। তাদের কপালে দুঃখ আছে। এই ভুল সিপিএম করত। এ বছর নির্বাচন নেই। তারপরও কেন আমি করছি? আমরা মানুষের কাজ করছি।
মালদহের ঘটনায় তৃণমূলের একজন গ্রেফতার হয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। তার আমলে তার দলের লোকই গ্রেফতার হয়েছে। অর্থাৎ তৃণমূল কংগ্রেস অন্যায় করলে কাউকে রেয়াত করবে না। আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। আগামী দিনে ব্যতিক্রম হবে না।”
সম্প্রতি আরাবুল ইসলামের এবং শান্তনু সেনকে দল থেকে সাসপেন্ড করার যে সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করা হয়েছে সেই প্রসঙ্গ টেনে তৃণমূলের শৃঙ্খলা এবং স্বচ্ছতার উদাহরণ হিসেবে অভিষেক জানান, “আরাবুল ইসলাম বিগত দিনেও সাসপেন্ড হয়। এমনকী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার ক্ষমতায় আসার পর গ্রেফতার হয়। দলের শৃঙ্খলার উর্ধ্বে কেউ নয়। শান্তনু সেন ডাক্তার। উনি যদি আলাদা করে কোনও কর্মসূচিকে সমর্থন করতে চায় করবেন। রাজনৈতিক দল হিসাবে তৃণমূল তাকে সাসপেন্ড করতে পারে। তবে সে তো স্বাধীনচেতা মানুষ। নিজের কাজ করবে। আমি যতটুকু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিনি ছোট থেকে দেখেছি উনি সরিয়ে দাও, হটিয়ে দাও এই রাজনীতিতে বিশ্বাস করেন না। আমরা বয়কটের রাজনীতিতে বিশ্বাসী নই।”
সেই সঙ্গে যে সমস্ত নেতা এবং কর্মী ক্ষমতার দম্ভে সাধারণ মানুষকে অবজ্ঞা করছি নতুন বিভিন্ন দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ছেন তাদের উদ্দেশ্যে হুঁশিয়ারি দিয়ে অভিষেক বলেন, “তৃণমূলের এক বুথস্তরের কর্মীকেও শৃঙ্খলা মেনে চলতে হবে। দলের সম্পাদক হিসেবে আমাকেও সেই একই শৃঙ্খলা মেনে চলতে হবে। শৃঙ্খলাপরায়ণ হয়েই দল করতে হবে। মানুষ আমাদের নির্বাচন করেছেন। কিছু লোক ধরাকে সরা জ্ঞান করে নিজেদের কেউকেটা ভাবেন। আগামী দিনে তাঁদের জন্য তৃণমূলের দরজা কিন্তু বন্ধ থাকবে। যাঁরা ভাবছেন, এলাকা দখল করে মৌরসি পাট্টার মতো দল চালাব, তাঁদের কিন্তু কপালে বিপদ আছে। এই একই ভুল সিপিএম করত। একই ভুল বিভিন্ন জেলায় বিজেপি করেছে। আমরা মানুষের দল। আমাদের সঙ্গে বিজেপি, সিপিএম, কংগ্রেসের বেসিক পার্থক্য রয়েছে। এবছর কোনও নির্বাচন নেই, তাও সেবাশ্রম করছি। কারণ এটা আমাদের কাজ, দায়বদ্ধতা।”
অভিষেক জানান, সন্দেশখালি থেকে আরজি কর, কম কুৎসা হয়নি। তার পরও মানুষ তৃণমূলে ভরসা রেখেছেন। এর পরও মানুষের জন্য কাজ না করলে, কার জন্য করবেন, দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে প্রশ্ন তোলেন অভিষেক। তিনি জানান, বিজেপি, কংগ্রেস, সিপিএম ‘রাজে’ বিশ্বাস করেছেন, তাঁরা নীতিতে বিশ্বাস করেন। তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের সেটা বুঝতে হবে।
মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজের মেয়াদ উত্তীর্ণ স্যালাইন দেওয়ার ফলে মৃত্যু হয়েছে এক প্রসূতির এবং আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন আরো কয়েকজন প্রসূতি। এই প্রসঙ্গে অভিষেক বলেন, “একটা মানুষের প্রাণ মণিমুক্তর মতো। ভুলের কারণে প্রসূতির মৃত্যু ঘটে। তার বিরুদ্ধে কঠোরতম ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। এর যাতে পুনরাবৃত্তি না হয়।”