সুহানা বিশ্বাস। কলকাতা সারাদিন।
তিলোত্তমা মামলায় হাইকোর্টে প্রশ্নের মুখে সিবিআই। গণধর্ষণ নাকি একজনই অপরাধ করেছে, সোমবার হাইকোর্টে শুনানির শুরুতেই জানতে চান বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ। বিচারপতির প্রশ্ন, গণধর্ষণ না শুধু প্রমাণ নষ্ট? সিবিআই এখনও পর্যন্ত তদন্তে কী জানতে পেরেছে? আর জি কর মামলায় সিবিআইকে কেস ডাইরি আনার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি। এই মামলার তদন্ত কোন পর্যায়ে দাঁড়িয়ে এই মুহূর্তে, তা জানতে চায় আদালত।
শুনানির শুরুতেই বিচারপতি সিবিআই-এর কাছে জানতে চান, এটা গণধর্ষণ না ধর্ষণ? গণধর্ষণ হলে সন্দেহভাজন কারা? সিবিআই-কে বিচারপতি প্রশ্ন করেন, “আমরা এই আদালতে এটা জানতে চাইছি, পরে আর কী তদন্ত করলেন? একটা চার্জশিটের পর আর কোনও চার্জশিট দেননি।” বিচারপতি সিবিআই-কে বলেন, “রিপোর্ট দরকার নেই। দরকার কেস ডায়েরি।”
সিবিআই তদন্তে অনাস্থা প্রকাশ করে আরজি কর মামলায় নতুন করে তদন্তের আর্জি জানিয়েছিল নির্যাতিতার পরিবার। সুপ্রিম কোর্টের অনুমতির পর আজ সেই মামলারই শুনানি শুরু হয় কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের এজলাসে। নির্যাতিতার পরিবারের আইনজীবী শামিম আহমেদ এবং সুদীপ্ত মৈত্র সওয়াল করতে গিয়ে বলেন, ‘সিসিটিভি ফুটেজ নেই, তদন্তে অনেক ফাঁকও রয়েছে।’ সিবিআই-এর পরবর্তী তদন্তে আদালত যাতে নজরদারি চালায়, সেই আর্জিও জানানো হয় নির্যাতিতার পরিবারের তরফে। তদন্ত সঠিক না হলে পুনরায় তদন্তের নির্দেশ যাতে আদালত দেয়, সেই আর্জিও জানানো হয়।
বিচারপতির তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য, “যেহেতু এই মামলায় একজনের সাজা হয়েছে, সেখানে কোন কোন ধারায় চার্জ গঠন করা হয়েছে ? সাজা প্রাপ্ত ব্যক্তিই কি একমাত্র অভিযুক্ত , নাকি আর কেউ আছে ?” সিবিআই-এর তরফে আইনজীবী রাজদীপ মজুমদার বলেন, “আমাদের আরেকটু সময় দেওয়া হোক।” তখনই বিচারপতি প্রশ্ন করেন, “সব অফিসাররা তৈরি থাকলে আবার কী সমস্যা আপনাদের?” এর মাঝেই সওয়াল করেন লিগল এডের সঞ্জয়ের আইনজীবী কৌশিক গুপ্ত। তিনি বলেন, “যাকে দোষী করা হল, তাকে বলতে দিতে হবে।”
রাজ্যের তরফে আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দেন, নতুন কোনও তদন্তে রাজ্যের আপত্তি নেই। তবে তাঁর প্রশ্ন, “আদালত কী ট্রায়ালের পর কাউকে ফের তদন্তের কথা বলতে পারে? ট্রায়াল কোর্টের কাছে যাননি।” রাজ্যের প্রশ্ন, “এক বছর ধরে সিবিআই কী করছে, সেটা মানুষ জানতে চায়। পনের দিনের মধ্যে শেষ করতে চাইলে আমাদের কোন আপত্তি নেই। বিশেষ আদালত কি এর অনুমতি দিতে পারে ?” রাজ্যের প্রশ্ন, “পরিবার হাইকোর্টে কেন এসেছে? বিশেষ আদালতে আবেদন জানাচ্ছে না কেন?” তিলোত্তমার পরিবারের আইনজীবী সুদীপ্ত মৈত্র আদালতে আবদেন করেন, “পরবর্তী তদন্ত আদালতের নজরদারিতে হোক। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদমর্যাদার আধিকারিকদের দিয়ে বিশেষ তদন্তকারী দল গঠন করা হোক।”
তিলোত্তমার পরিবার আদালতে জানান, প্রায় সাড়ে সাত মাস হয়ে গিয়েছে। কিন্তু এখনও নিরাপত্তারক্ষী এবং নার্সদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি। অতিরিক্ত সুপারকে এখনও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি। আদালত যাতে সিবিআই-এর কাছে স্ট্যাটাস রিপোর্ট চায়, তার আবেদন জানায় পরিবার। আগামী ২৮ মার্চ পরবর্তী শুনানি। সিবিআই-এর পক্ষ থেকে এ দিন আদালতে উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি সলিসিটর জেনারেল রাজদীপ মজুমদার। তিনি জানান, শুক্রবার আদালতে কেস ডায়েরি পেশ করবে সিবিআই। শুক্রবারই বিকেল সাড়ে তিনটের সময় ফের শুনানির জন্য মামলাটি উঠবে হাইকোর্টে।
প্রসঙ্গত, প্রথম থেকেই তিলোত্তমার পরিবার দাবি করে আসছিলেন, এই ঘটনার কারোর একার পক্ষে করা সম্ভব নয়, এই ঘটনার সঙ্গে আরও অনেকে জড়িত থাকতে পারে। প্রকৃত দোষীদের আড়াল করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছিলেন। সিবিআই তদন্ত প্রক্রিয়ার মধ্যে সকলকে যুক্ত করছেন না বলেও অভিযোগ করেন তিলোত্তমার বাবা-মা। এদিন প্রথম শুনানিতেই বিচারপতির গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের মুখে সিবিআই।