সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে চাকরি হারানো 2016 সালের এসএসসি প্যানেলের প্রায় 26000 শিক্ষক শিক্ষিকা ও অশিক্ষক কর্মচারীদের চাকরি ফেরানোর আবেদন জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে রিভিউ পিটিশন দায়ের করল রাজ্য সরকার এবং স্কুল সার্ভিস কমিশন। গত ৩ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না এবং বিচারপতির সঞ্জয় কুমারের ডিভিশন বেঞ্চ বাংলা প্রায় ২৬০০০ চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছিলেন।
সেই নির্দেশের পরেই মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছিলেন এই রায় পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রিভিউ পিটিশন দায়ের করবে রাজ্য সরকার। সেই মতোই এবারে দেশের সর্বোচ্চ আদালতে আবেদন জানালো রাজ্য সরকার এবং স্কুল সার্ভিস কমিশন।
সুপ্রিম কোর্ট সূত্রে জানা গিয়েছে, আগামী ৮ মে এই রিভিউ পিটিশনের শুনানি হতে পারে। সেক্ষেত্রে শুনানি হবে প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না এবং বিচারপতি সঞ্জয় কুমারের বেঞ্চে। জানা গিয়েছে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে সুপ্রিম কোর্টে দায়ের করা এই রিভিউ পিটিউশনে প্রথমেই দাবি জানানো হয়েছে, কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাকের নেতৃত্বাধীন ডিভিশন বেঞ্চের যে রায় সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ রেখে বাংলার প্রায় ২৬০০০ চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছে, সেই দুই রায়ের ক্ষেত্রেই স্পষ্ট করে বলা রয়েছে আদালতের কাছেই যোগ্য এবং অযোগ্যের সঠিক তালিকা রয়েছে।
তারপরেও কেন যোগ্য এবং অযোগ্য বাছাই করা সম্ভব হয়নি বলে প্রথমে কলকাতা হাইকোর্টের রায় এবং পরবর্তীকালে সুপ্রিম কোর্টের রায় নথিভুক্ত করে সকলের চাকরি বাতিল নির্দেশ দেওয়া হল তা বোধগম্য হয়নি। তাই অবিলম্বে সুপ্রিমকোর্ট যেন সিবিআই তদন্তের রিপোর্টের প্রেক্ষিতে যোগ্য এবং অযোগ্যদের তালিকা আলাদা ভাবে প্রকাশ করার পাশাপাশি কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাকের দেওয়া রায় বহাল না রেখে পুনর্বিবেচনা করে।
জানা গিয়েছে, সম্প্রতি দিল্লি যান এসএসসি-এর চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদার। আইনজীবীদের সঙ্গে পরামর্শ করেন। তারপরই সুপ্রিম কোর্টে রিভিউ পিটিশন দাখিল করা হয়। যোগ্য চাকরিহারারাও জেলাওয়াড়ি তালিকা তৈরি করছেন। তারপর তাঁরাও রিভিউ পিটিশন দাখিল করতে পারেন। তবে যোগ্য চাকরিহারাদের একাংশের ইচ্ছা, যেহেতু সুপ্রিম কোর্টের বর্তমান প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার বেঞ্চে এই মামলা ছিল এবং কয়েকদিনের মধ্যেই তিনি অবসর নেবেন তাই নতুন প্রধান বিচারপতির বেঞ্চে তাঁদের মামলা উঠুক। প্রসঙ্গত, আগামী ১৩ মে অবসর নেবেন সুপ্রিম কোর্টের বর্তমান প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না।
প্রসঙ্গত, গত ৩ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টের রায় বাংলার প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক শিক্ষিকা এবং অশিক্ষক কর্মচারীদের চাকরি বাতিলের নির্দেশ দেওয়ার পরেও সেই রায় মডিফিকেশন বা সামরিক পরিবর্তনের আর্জি জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিল মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত কাজ চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হোক, এই মর্মে আবেদন করেছিল পর্ষদ। এরপর পর্ষদের দাবি ছিল, একসঙ্গে প্রায় ২৬০০০ শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মীদের চাকরি চলে গেলে অসুবিধায় পড়তে পারে রাজ্যের স্কুলগুলি।
এই মর্মে সুপ্রিম কোর্টে আদালতে গিয়েছিল পর্ষদ। তার প্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি নির্দেশ দেন, নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত আগামী 31 ডিসেম্বর পর্যন্ত আপাতত কাজ চালিয়ে যাবেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। তবে গ্রুপ-সি ও গ্রুপ ডি-র পরীক্ষায় দুর্নীতির অভিযোগ বেশি থাকার কারণে শিক্ষাকর্মীদের আপাতত কাজ চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয়নি কোর্ট। এই সকল কর্মীদের একেবারে নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়াতেই বসতে হবে বলে জানায় সুপ্রিম কোর্ট। তবে মমতা এই সকল শিক্ষাকর্মীদের পরিবারের কথা ভেবে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে ঘোষণা করেছেন, মামলার নিষ্পত্তি হওয়া পর্যন্ত তাদের মাসে মাসে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে একটি ভাতা দেওয়ার।