সুহানা বিশ্বাস। কলকাতা সারাদিন।
“প্ল্যান করে বাংলাতে ডোবানো হচ্ছে। এটা ম্যান মেড বন্যা। নিজেদের রাজ্যকে বাঁচাতে জল ছেড়ে দেওয়া হয়।” হুগলি এবং পশ্চিম মেদিনীপুরের বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শনে বেরিয়ে এভাবেই ডিভিসিকে তীব্র আক্রমণ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
তিনি বলেন, ‘সাড়ে তিন লক্ষ কিউসেকের বেশি জল ছেড়েছে ডিভিসি। জল ছেড়ে ডুবিয়েছে। আমি ডিভিসি এবং ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি।’ শুধু তাই নয় এদিন কেন্দ্রকে আক্রমণ করেছেন মমতা। বললেন, ‘ কেন্দ্র ড্রেনেজ করে না। নিজেদের রাজ্যগুলোকে বাঁচাচ্ছে। আর বাংলার ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে। এই ঘটনা পুরোটাই ম্যান মেড।’
ডিভিসি’র জল ছাড়ার কারণে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায় দেখা দিয়েছে বন্যা পরিস্থিতি। বুধবার বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শনে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃষ্টিতে বাংলার বন্যা পরিস্থিতির জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকেই দায়ী করেছেন তিনি। জানিয়েছেন এই বন্যা ‘ম্যান মেড’।
বুধবার হুগলির পুরশুড়া ব্লকের বন্যা কবলিত পরিস্থিতি দেখতে যান মুখ্যমন্ত্রী। সেখান জানিয়েছেন, কেন্দ্রের অসহযোগিতা এবং উদাসীনতায় বাংলায় প্লাবন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। মমতা আঙুল তুলেছেন ডিভিসি-র দিকেও। তিনি বলেন, ”সাড়ে তিন লক্ষ কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে ডিভিসি থেকে। আমি নিজে ডিভিসি-র সঙ্গে কথা বলেছি। ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। এত জল এর আগে ছাড়া হয়নি।”
তাঁর সংযোজন, ”যখন ৭০-৮০ শতাংশ জল ভরে যায়, তখন কেন জল ছাড়ে না ডিভিসি? কেন্দ্র ‘ড্রেনেজ’ করে না। নিজেদের রাজ্যগুলোকে বাঁচাচ্ছে। আর সবটা বাংলার উপরে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাংলা আর কত বঞ্চনা সহ্য করবে?” মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, ”পরিকল্পিত ভাবে বাংলাকে ডুবিয়েছে।”
নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছিল বৃহস্পতিবার ঘাটালের বন্যা কবলিত এলাকা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে যাবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার কারণে বুধবারই প্ল্যান চেঞ্জ করে মুখ্যমন্ত্রী পৌঁছে যান ঘাটালে।
এদিন হাওড়া, হুগলির বন্যা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার পর মেদিনীপুরে রাত্রিবাসের কথা ছিল মুখ্যমন্ত্রীর। কিন্তু পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার কারণে এক মুহূর্ত দেরি না করে বেরিয়ে পড়েন তিনি।
রাজ্যের অনান্য জেলার মতো পশ্চিম মেদিনীপুরের হালও যথেষ্ট খারাপ। কাঁসাই নদীর বাঁধ ভেঙে ইতিমধ্যে প্লাবিত হয়েছে জেলার একাধিক প্রান্ত। আর সেই জলের তোড়ে ভেসেই মৃত্যু হল কেশপুরের এক শিশুর। বুধবার সকালে শেখ গিয়াসুদ্দিন নামে ১০ বছর বয়সি ওই শিশুর দেহ উদ্ধার হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী যখন ঘাটাল ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখছেন তখন পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশপুরেই শিশু মৃত্যুর ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। পাশাপাশি দাসপুরে একটি দোতলা বাড়িও ভেঙে পড়েছে।
গত কয়েকদিনের টানা বৃ্ষ্টি এবং মাইথন ও পাঞ্চেত জলাধার থেকে ছাড়া জলের ফলে দুই মেদিনীপুর, হাওড়া, হুগলি, ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া, বর্ধমান-সহ দক্ষিণবঙ্গের বহু জেলায় নতুন করে বন্যা পরিস্থিতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এরপরই বুধবার বন্যা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে ঘটনাস্থলে পৌঁছন মুখ্যমন্ত্রী।
হাওড়া, হুগলির একাধিক জায়গা পরিদর্শনের পর তিনি সোজা পৌঁছে যান পশ্চিম মেদিনীপুরে। জেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলার পাশাপাশি কোন কোন এলাকা প্লাবিত, জলবন্দি কত মানুষকে উদ্ধার করা হয়েছে, তাঁদের ত্রাণের ব্যবস্থা-সবকিছুরই খোঁজ নেন।