সুমন তরফদার। কলকাতা সারাদিন।
“ধর্ষিতাদের নিয়ে মিডিয়া ট্রায়াল করা যায় না। ক্রাইম ইস ক্রাইম। যে অপরাধ করবে তার বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমাদের এখানে তিনটে ফাঁসির অর্ডার হয়েছে। আমি চাই কুলতলির ঘটনাটাও পুলিশ পকসো কেসে তুলে তিন মাসের মধ্যে ফাঁসির অর্ডার দেবে।” কুলতলির ঘটনার প্রেক্ষিতে রবিবার পুজো উদ্বোধনে গিয়ে এভাবেই নিজের অবস্থান স্পষ্ট করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
আরজি কর কাণ্ডের আবহের মধ্যেই শুক্রবার জয়নগরে চতুর্থ শ্রেণিতে পাঠরত এক নাবালিকার ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধার হয়। মৃতার পরিবারের দাবি, তাঁদের মেয়েকে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে। এই ঘটনায় ফের তোলপাড় গোটা রাজ্য়। ইতিমধ্যে পুলিশ এক অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে। এই ঘটনার তিনদিনের মাথায় মুখ খুললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মমতা বলেন, “দু’একটা ঘটনা কখনও-কখনও ঘটে গেলে বাংলায় চিৎকার-চেঁচামেচি হাহাকার বেশি হয়। তা হওয়া উচিৎ। অধিকার আছে। কিন্তু অন্য জায়গায় যখন ঘটনা ঘটে তখন মুখে লুকোপ্লাস্টার দিয়ে রাখে। একটা প্রতিবাদ করে না।” তিনি আরও বলেন, “কেউ ইচ্ছা করে ঘটনা ঘটায় না। আজকের দিনে এআই বেরিয়েছে। আমার ছবি দেখবেন, আমার শরীর দেখবেন, আমার বক্তৃতা শুনবেন কিন্তু ওইটা আমি নই। ফেক। এটাই এআই। এখন সাইবার ক্রাইম বেশি হচ্ছে। আর সাইবার ক্রাইম করে তারাই এদের বেশি মদত দিয়ে চলে।”
ফেক ভিডিয়ো ছড়ানো নিয়েও ক্ষোভ উগরে দেন মমতা। তিনি বলেন, “যাঁরা ভিডিয়োতে বসে ব্যবসা করছেন, তাদের মনে হয় না? ধর্ষিতাদের নিয়ে মিডিয়া ট্রায়াল করা যায় না। ক্রাইম ইস ক্রাইম। যে অপরাধ করবে তার বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমাদের এখানে তিনটে ফাঁসির অর্ডার হয়েছে। আমি চাই কুলতলির ঘটনাটাও পুলিশ পকসো কেসে তুলে তিন মাসের মধ্যে ফাঁসির অর্ডার দেবে।”
মমতা বলেন, “তবে এটাও ঠিক। যারা রাস্তায় আন্দোলন করেন আমি সমর্থন করি তাদের। তবে এটাও প্রচার করুন ইউটিউবে যে খারাপ ভিডিয়ো দেওয়া হয় সেটা দেখে বাচ্চারা খারাপ জিনিস শিখছে। ছোটদের মধ্যেও প্রবণতা বেড়েছে, তাদের দোষ দিই না। যত সিরিয়াল দেখবেন ক্রাইম দেখায়। আমি বারবার বলি ক্রাইম দেখাবে না। এই অপরাধ দেখে অন্যরা ফলো করে। শুধু আমায় গালিগালাজ আর পুলিশকে গালিগালাজ করলেই হবে? আপনাদের দায়বদ্ধতা নেই? যত সিনেমার সিন ক্রাইমে ভর্তি। আমি সিনেমাকে ছোট করছি না। তবে ক্রাইম সিন এত দেখানোর কী আছে?” প্রশ্ন করেন মমতা।”
কলকাতা ও বেঙ্গল পুলিশকে ঢালাও সার্টিফিকেট দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়। মমতা বলেন, ‘গ্রেট স্টার হচ্ছেন আপনারা। যারা ঘরে বসে কাজ করেন। যারা সমাজটাকে ভালো চেনেন। আপনাকে বলব। আপনারা দায়িত্বটা নিন। বাংলা পুলিশ, কলকাতা পুলিশ সহ যে মেয়েরা এই অপরাধীদের ধরে দিতে পারবে ক্রাইমটাকে আইডেনটিফাই করবে ফার্স্ট, ফেক লিখে পুলিশের কাছে পাঠাবে তাদের জন্য একশোটা পুরস্কার থাকবে। তারা চাকরিও পাবে দরকার হলে। সাইবার ক্রাইম এদের দিয়ে…করাবে…যারা রাঁধে তারা চুলও বাঁধে। সব কিছু সবার দ্বারা হয় না। এই কাজটা ওদের দ্বারা সম্ভব। ওয়েলফেয়ার কমিটির কাছে আমি গ্রেটফুল। তারা অনেক কাজ করছে। অনেক কথা বলতে আসে। কেউ কেউ আবার ফেক ওয়েলফেয়ার কমিটির নামে বদনাম করে বেড়ায়। আমি পরিস্কার বলছি, সিপিএমের আমলে রাজনৈতিক ওয়েলফেয়ার কমিটি ছিল।’
তবে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল পুজোর বাজারে পুরস্কারের ঘোষণা করেছেন খোদ বাংলার মুখ্যমন্ত্রী।
মমতা বলেন, ‘হাজারটা কাজের মাধ্যমে একটু ভুল ত্রুটি হয়ে গেলে অযাচিতভাবে অজানা ভাবে, সেটা নিয়ে অনেক কথা বলে, কুৎসা করে। অথচ তারা জানে না আর্মির যে সম্মান, সেন্ট্রাল ফোর্সের যে সম্মান, বেঙ্গল পুলিশের, কলকাতা পুলিশের যে সম্মান তার থেকে একাংশ কম নয়। বরঞ্চ বেশি। একটা কিছু ভুল হলে…কাজ করতে গেলে আমাদের কি ভুল ত্রুটি হয় না। একবারও তো বলিনা ট্রাফিক পুলিশের বর্ষাকালে গল গল করে গা দিয়ে জল পড়ছে..এমার্জেন্সি ডিউটি, দিন নেই রাত নেই। পুলিশের কীসের রোস্টার! মহিলা পুলিশ ফোর্স হয়েছে। আরও উইনার্স ফোর্স তৈরি করব। দু একটা ঘটনা হয়ে গেলে বাংলায় চিৎকার চেঁচামেচি বেশি হয়…করা উচিত, অন্য জায়গায় কিছু হলে মুখে লিউকোপ্লাস্ট দিয়ে থাকলে। আজকের দিন আর্টিফিসিয়াল ইনটেলিজেন্স হয়ে গিয়েছে। আজকের দিনে সাইবার ক্রাইম যারা করে তারা এদের মদত দেয়…ধর্ষিতাদের নিয়ে মিডিয়া ট্রায়াল করা যায় না। ক্রাইম ইজ ক্রাইম…আমি চাই কুলতলির ঘটনাটা পুলিশ পকসো কোর্টে করে তিন মাসের মধ্যে ফাঁসি দেবে। ইউটিউবে যে বাজে বাজে ভিডিয়ো দেওয়া হয় সেটা দেখে বাচ্চারা খারাপ জিনিসটা দেখছে। সিরিয়ালে ক্রাইম দেখায়। এই ক্রাইম দেখে ক্রাইম ফলো করে। তাদের দায়িত্ব নেই? সিনেমা সিন ক্রাইমে ভর্তি। মেয়েদের দায়িত্ব দিয়ে যাচ্ছি ফেক লিখে সাইবার ক্রাইমে পাঠিয়ে দিন। আপনারাই পারেন। জোট বাঁধুন তো…’বললেন মমতা।
কথামৃতের কথাও উল্লেখ করলেন মমতা।
পুলিশ ফুলিশ নয়। আপনার বাড়ির সামনে ক্রাইম হলে তখন পুলিশই যায়। কেউ যদি অন্যায় করে তবে তার পানিসমেন্ট দরকার।
আগামীদিনে আরও উইনার্স বাহিনী তৈরির আশ্বাস দিয়ে মমতা বলেন, আমি চাই মেয়েরা পুলিশের কাজে ভালো করে অংশগ্রহণ করুন। আপনারা জোট বাঁধুন। মেয়েরাই পারে এই অন্যায় রুখতে। মমতা বারবার মনে করিয়ে দেন, আজকের দিনে আর্টিফিশিয়াল ইন্টালিজন্সের যুগে সবকিছুই হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি হচ্ছে সাইবার ক্রাইম। যারা ভিডিও বানিয়ে ব্যবসা করছেন তাঁদের একবারও মনে পড়ে না নির্যাতিতাদের নিয়ে এত মিডিয়া ট্রায়াল করা যায় না। এতে তদন্ত প্রভাবিত হতে পারে।
মমতা এরপরই হুঁশিয়ারির সুরে বলেন,যারা দোষ করবে তাদের কড়া শাস্তি হবেই। রাজ্যে ইতিমধ্যে ৩টি ফাঁসির অর্ডার ইতিমধ্যে হয়েছে। আমি চাই কুলতলির ঘটনাতেও আগামী ৩ মাসের মধ্যে পুলিশ ফাঁসির অর্ডার দেবে। বাংলাকে এগিয়ে দিতে যাও। ফোর্সকেও এগিয়ে দিতে যাও। ঠাকুরের কাছে প্রার্থনা করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।