সুমন তরফদার। কলকাতা সারাদিন।
আরজি কর দুর্নীতি মামলার ট্রায়াল দেরি হওয়া নিয়ে বড় পর্যবেক্ষণ জানাল কলকাতা হাইকোর্ট।
আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের আর্থিক দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলায় ফের সিবিআইকে ভর্ৎসনা আলিপুরের বিশেষ সিবিআই আদালতের। কলকাতা হাই কোর্ট আর জি কর দুর্নীতি মামলায় ৭ দিনের মধ্যে চার্জ গঠন করে বিচার প্রক্রিয়া শুরু করার নির্দেশ দিয়েছে। তবে তা সত্ত্বেও শুক্রবার বিশেষ সিবিআই আদালতে ১০০ শতাংশ নথি আনতে ব্যর্থ কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকরা। সে কারণে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার বিরুদ্ধে তদন্তে ‘গাফিলতি’র অভিযোগ তোলা হয়েছে। কেন সম্পূর্ণ নথি ছাড়াই সিবিআই আদালতে এল, সে প্রশ্ন করেন বিচারক।
শুক্রবার ওই মামলা সংক্রান্ত এক শুনানিতে কলকাতা হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ, ‘আরজি কর দুর্নীতির মামলায় বিচারে সিস্টেমেটিক ডিলে করা হচ্ছে। কে করছে, কেন করছে আমি সেই দিকে যাচ্ছি না। কিন্তু গত নভেম্বরে চার্জশিট দেওয়ার পরেও ট্রায়ালে দেরি হচ্ছে এটা লক্ষ্য করেছি।’
গত বছরের ৮ অগস্ট গভীর রাতে আরজি করের সেমিনার হলে ডাক্তারি ছাত্রীকে ধর্ষণ-খুনের অভিযোগ ওঠে। সেই সূত্রেই সামনে আসে আরজি কর হাসপাতালের আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ। সেই মামলায় আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ, বিপ্লব সিং, আফসার আলি , সুমন হাজরা, আশিস পাণ্ডেকে গ্রেফতার করে সিবিআই। গত ২৯ নভেম্বর এই দুর্নীতি মামলায় আলিপুর আদালতে চার্জশিটও দাখিল করেছিল সিবিআই। তবে অভিযুক্তদের মধ্যে সন্দীপ ঘোষ রাজ্য সরকারি কর্মচারী হওয়ায়, এক্ষেত্রে তাঁর বিরুদ্ধে চার্জগঠনের জন্য সরকারের অনুমোদন প্রয়োজন। আদালত সূত্রের খবর, গত ২৭ নভেম্বর এ বিষয়ে রাজ্য প্রয়োজনীয় অনুমতিও দিয়ে দিয়েছে। অথচ সিবিআই তা আদালতকে জানায়নি বলে অভিযোগ। এ নিয়েই বৃহস্পতিবার আদালতের প্রশ্নের মুখে পড়ে সিবিআই। কেন রাজ্য চার্জ গঠনের অনুমতি দেওয়া সত্ত্বেও আদালতকে তা জানানো হল না, তার কারণ জানতে চেয়ে সিবিআইকে এদিন শোকজ করেন আলিপুর আদালতের বিচারক। পরে সাতদিনের মধ্যে চার্জগঠনের নির্দেশ দেয় আদালত। ওই নির্দেশ পরিমার্জন করার আবেদন জানিয়ে এদিন বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের এজলাসে দ্রুত শুনানির আবেদন করেন মামলার অন্যতম দুই অভিযুক্ত সন্দীপ ঘোষ ও আশিস পাণ্ডে। তাদের বক্তব্য, ‘হাইকোর্টের ওই নির্দেশের ফলে সিবিআই তিন দিনের মধ্যে চার্জ ফ্রেম করতে চাইছে। যা বাস্তবে অসম্ভব।’
সিবিআইয়ের আইনজীবী বলেন, “আজ ৭০ শতাংশ নথি নিয়ে আদালতে এসেছি।” তাতেই ক্ষুব্ধ হন বিচারক। বিচারক পালটা বলেন, “আপনাদের জন্য প্রতিদিন অভিযুক্তদের আদালতে হাজিরা দিতে হবে? তাদের নিরাপত্তার দায়িত্ব কে নেবে? আপনারা তো নেবেন না। পুলিশকে দায়িত্ব নিতে হচ্ছে। কেন প্রস্তুত হয়ে আসছেন না?” সিবিআই আদালতে জানায়, “হাজার হাজার পাতার নথি জেরক্স করতে সময় লাগছে।”
বিচারক তাতে আরও ক্ষুব্ধ হন। বলেন, “কেন জেরক্স করছেন? নথি স্ক্যান করে পেন ড্রাইভে দিতে পারেন।” জবাবে সিবিআই বলে, “আমাদের একদিন সময় দেওয়া হোক।” শনিবার সমস্ত নথি আদালতে জমার নির্দেশ দেন বিচারক। নথিপত্র জমার পর আগামী মঙ্গলবার এই মামলায় চার্জ গঠনের সম্ভাবনা।