সুমনা মিশ্র। কলকাতা সারাদিন।
বাংলার খাবারের স্বাদ ও গন্ধ সবসময়ই এক অদ্ভুত মিশ্রণ, যা দেশীয় সংস্কৃতির একটি অমূল্য অংশ। কিন্তু সম্প্রতি স্কুলের টিফিনে কেক মিষ্টি নিষিদ্ধ করা এবং অন্য ধরনের খাবারের পরিবর্তে পুরি-সবজি খাওয়ার নির্দেশিকা নতুন বিতর্কের সৃষ্টি করেছে।
কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্যের নতুন ফতোয়া, যা সারা দেশে আলোচনার সৃষ্টি করেছে, তাতে বিদ্যালয়ের টিফিনে নিরামিষ খাবারেই বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে।
কলকাতার একাধিক সিবিএসই এবং আইসিএসই স্কুলে কেক এবং তেলে ভাজা খাবার নিষিদ্ধ করার একটি নির্দেশিকা ইতিমধ্যেই জারি হয়ে গেছে। এতে একদিকে যেমন ছাত্র-ছাত্রীদের খাবারের স্বাদ পরিবর্তন হতে চলেছে, অন্যদিকে বাঙালি খাদ্যাভ্যাসের উপর সরকারের এই আক্রমণ কিছুটা অস্বস্তির সৃষ্টি করেছে।

📌 কেন এই পরিবর্তন?
খাবারের অভ্যেসে পরিবর্তন আনার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের নতুন উদ্যোগের লক্ষ্য হলো ছাত্র-ছাত্রীদেরকে স্বাস্থ্যকর এবং নিরামিষভোজী খাদ্যাভ্যাসে অভ্যস্ত করা। জানা গেছে, কলকাতার বিডি মেমোরিয়াল স্কুল, হেরিটেজ স্কুল, এবং আওয়ার লেডি কুইন অফ দ্য মিশন সহ একাধিক নামী স্কুলে ইতিমধ্যে নোটিশ টাঙানো হয়েছে। নির্দেশনা অনুযায়ী, এখন থেকে স্কুলে টিফিনে পুরি, রুটি এবং সবজি রাখতে হবে, কিন্তু সেই সবজি অবশ্যই তেলের পরিমাণ কম হবে এবং নিরামিষ হতে হবে।
📌 কী ধরনের খাবার নিষিদ্ধ?
এই নতুন নির্দেশিকায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, ছাত্র-ছাত্রীদের টিফিনে কেক, মিষ্টি, সিঙ্গারা, জিলিপি, এবং তেলে ভাজা খাবার আনতে নিষেধ করা হবে। এটি সিগারেটের প্যাকেটের মতো বিপদ সংকেত লাগানো খাবারের তালিকায় যোগ হয়েছে। এছাড়া তেলের গুণগত মান যাচাই করার জন্য প্রতি স্কুলে পুষ্টি বিশেষজ্ঞ রাখারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তেল কম ব্যবহার করেই পুষ্টিকর সবজি রান্নার ব্যবস্থা করা হবে।
📌 স্কুলের নতুন খাদ্যনীতি
এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে, প্রত্যেকটি স্কুলে পুষ্টি বিশেষজ্ঞ এবং স্বাস্থ্য বিষয়ক পরামর্শদাতা রাখা হবে। তাদের দায়িত্ব হবে ছাত্র-ছাত্রীদের খাবার সম্পর্কিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা এবং খেয়াল রাখা যাতে কোনো ধরনের ভাজা খাবার বা চিনি যুক্ত খাবার স্কুলে না আনা হয়। শিক্ষকদের নিত্য নতুন অভ্যাসে শিক্ষার্থীদের অভ্যস্ত করতে প্রচার এবং কর্মসূচি চালানো হবে।
বাঙালি খাবারের প্রতি কেন্দ্রের নীতি: বিরোধিতা
বাঙালির খাবার হল একটি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। সিঙ্গারা, জিলিপি, কেক মিষ্টি—এসব বাংলার জনপ্রিয় খাবারগুলির তালিকায় রয়েছে এবং ছোটবেলা থেকে এসব খাবারই বাঙালি ছেলেমেয়েরা পছন্দ করে আসছে। কিন্তু, কেন্দ্রীয় সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, ‘বাংলার সংস্কৃতির উপর কেন্দ্রীয় সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ তারা মেনে নেবেন না’।
তবে, বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের পদক্ষেপ ছাত্র-ছাত্রীদের স্বাস্থ্যসম্মত এবং পরিমিত খাদ্যাভ্যাসে অভ্যস্ত করতে সহায়ক হতে পারে। তবে, খাদ্যাভ্যাসের সংস্কৃতি পরিবর্তন করতে কিছুটা সময় লাগবে এবং এমন উদ্যোগের ফলাফল একেবারে তৎক্ষণাৎ আসবে না। বিশেষ করে বাঙালির প্রিয় কেক, সিঙ্গারা এবং জিলিপি খাওয়ার অভ্যেস বড় পরিবর্তন হিসেবে দেখা যেতে পারে।
‘স্কুলে কেক মিষ্টি নিষিদ্ধ করা’ এবং ‘পুরি-সবজি খাওয়ার নির্দেশনা’ নতুন বিতর্ক তৈরি করেছে, যা আমাদের দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাসে গভীর প্রভাব ফেলবে। যদিও এটি সরকারের এক ধরনের স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক পদক্ষেপ, কিন্তু অনেকেই এই পরিবর্তনকে ‘খাদ্য সংস্কৃতির উপর হস্তক্ষেপ’ হিসেবে দেখছেন। সবারই এই পরিবর্তনের প্রতি অনেক রকমের মতামত থাকতে পারে, তবে সময়ই বলে দেবে এই নতুন উদ্যোগের কতটা সফলতা পাওয়া যায়।