রাহুল সিংহ মজুমদার। কলকাতা সারাদিন।
বাংলা জুড়ে দ্রুত হারে জলাভূমি ভরাটের প্রবণতা ক্রমশ বাড়ছে। পরিবেশবিদরা বারবার সতর্ক করলেও পরিস্থিতি বদলাচ্ছে না। অবশেষে জলাভূমি সংরক্ষণে (Prevent the filling of Swamp) বড় পদক্ষেপ নিল কলকাতা হাইকোর্ট (Calcutta High Court)। জঙ্গিপুরের এক পুকুর ভরাট মামলার প্রেক্ষিতে বিচারপতি সুজয় পাল ও বিচারপতি স্মিতা দাস দে-র ডিভিশন বেঞ্চ বুধবার নির্দেশ দিয়েছে—স্থানীয় বিডিওর (BDO) নেতৃত্বে এক বিশেষ কমিটি গড়তে হবে।
আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, আবেদন পাওয়ার এক মাসের মধ্যে কমিটি গঠন বাধ্যতামূলক। এই কমিটি জলাভূমি ভরাট সংক্রান্ত প্রতিটি অভিযোগ খতিয়ে দেখবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। আদালত জানিয়েছে, ২০১২ সালে জলাভূমি রক্ষার জন্য রাজ্য সরকার বিশেষ বিজ্ঞপ্তি জারি করলেও তা কার্যকর হয়নি। দীর্ঘ ১৩ বছর পর ফের একবার নতুন করে কমিটি গঠনের নির্দেশ দিল হাইকোর্ট।
নাগরিকদের অভিযোগ জানানোর সুযোগ বাড়ল
এর আগে সাধারণ মানুষ জলাভূমি ভরাটের অভিযোগ জানাতে গেলেও প্রায়শই পুলিশ ফিরিয়ে দিত। পুলিশ কর্তৃপক্ষের যুক্তি ছিল—ব্লক ভূমি আধিকারিক অভিযোগ না করলে মামলা নেওয়া যাবে না। ফলে বহু বেআইনি জলাভূমি ভরাট বিনা বাধায় চলতে থাকত। তবে সম্প্রতি হাইকোর্টের একক বেঞ্চ জানিয়েছে, এখন থেকে যেকোনও নাগরিক থানায় জলাভূমি ভরাটের অভিযোগ জানালে পুলিশকে তা নিতেই হবে। প্রাথমিক তদন্ত চালাতে হবে এবং পরে ভূমি আধিকারিকের মতামত নিতে হবে।
আইনজীবী অরিন্দম দাসের মন্তব্য, “এই রায়ের ফলে জঙ্গিপুরে বেআইনি জলাভূমি ভরাট রোখা সম্ভব হবে। প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরের মধ্যে একে অপরকে আড়াল করার প্রবণতাও কমবে।”
জলাভূমি সংরক্ষণের গুরুত্ব
পরিবেশবিদদের মতে, জলাভূমি শুধু প্রাকৃতিক সম্পদ নয়, বরং মানুষের জীবিকা ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার এক অপরিহার্য অংশ। এগুলো বন্যা নিয়ন্ত্রণ করে, ভূগর্ভস্থ জলের স্তর বজায় রাখে এবং জলজ প্রাণী ও পাখির আবাসস্থল হিসেবে কাজ করে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ডেও জলাভূমি সংরক্ষণকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। রামসার কনভেনশন অনুযায়ী, প্রতিটি দেশকে জলাভূমি রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
২০১০ সালে ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনাল (NGT) জলাভূমি রক্ষায় একাধিক নির্দেশ দিয়েছিল। তবুও রাজ্যে তার সঠিক প্রয়োগ হয়নি।
পশ্চিমবঙ্গ জলাভূমি আইন ২০১৭ অনুযায়ী, যে কোনও জলাভূমি ভরাট বেআইনি এবং এর জন্য প্রশাসনিক ও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যায়।
বিশেষজ্ঞদের দাবি, সাম্প্রতিক বছরগুলিতে কলকাতা ও শহরতলির আশেপাশে প্রায় ৪০% জলাভূমি কমে গিয়েছে। এর অন্যতম কারণ নির্মাণ শিল্প ও রিয়েল এস্টেটের চাহিদা।
হাইকোর্টের এই নির্দেশ নিঃসন্দেহে জলাভূমি সংরক্ষণের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এখন দেখা যাবে, স্থানীয় প্রশাসন কত দ্রুত কমিটি গঠন করে এবং কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়। সাধারণ মানুষও অভিযোগ জানানোর সুযোগ পেলে জলাভূমি রক্ষার আন্দোলন আরও জোরদার হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।