সুমনা মিশ্র। কলকাতা সারাদিন।
ঝাড়খণ্ডের পরে এবারের রাজধানী দিল্লিতেও বাঙালি ভোটব্যাঙ্ক টানার জন্য বিজেপির ভরসা বাংলার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। ২০১১ সালের আদমশুমারি রিপোর্ট অনুযায়ী, দিল্লির মোট জনসংখ্যার প্রায় দেড় শতাংশ অর্থাৎ ২ লক্ষের অধিক বাসিন্দা বাঙালি। এই রিপোর্টের পর আর জনগণনা করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু যে হারে দেশে জনসংখ্যা বেড়েছে সেই ভিত্তিতে ধরা যেতেই পারে যে গত এক দশকের বেশি সময়ে দিল্লিতেও কমপক্ষে দু’গুণ বেড়েছে বাঙালির সংখ্যা। আর এবার সেই বাঙালি ভোটকেই হাতিয়ার করতে ময়দানে নেমে পড়েছে বিজেপি।
আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি হতে চলা দিল্লি বিধানসভা ভোটে বিজেপিকে জেতাতে ময়দানে নামলেন নন্দীগ্রামের বিধায়ক। পশ্চিম দিল্লির নজফগড় কেন্দ্রে বিজেপির নীলম পেহেলওয়ানের হয়ে জনসভা করলেন শুভেন্দু। এই আসনেই গত দু’বার জিতেছিলেন আম আদমি পার্টির প্রার্থী তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী কৈলাশ গেহলেট। কিন্তু আচমকা ভোটের অরবিন্দ কেজরিওয়ালের সঙ্গে বিবাদের পর কৈলাশ গেহলেট আপ ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন। নিজে বিজেপির প্রার্থী না হলেও এতদিন বিজেপির কড়া সমালোচনা করা কৈলাশ এবার পদ্ম প্রার্থী নীলমকে জেতাতে পরিশ্রম করছেন। আপ সমর্থকরা কৈলাশ গেহলেটকে বলছেন বিশ্বাসঘাতক। সেই ‘বিশ্বাসঘাতক’-এর কেন্দ্রেই প্রচার করলেন তৃণমূল সমর্থকরা যাকে বিশ্বাসঘাতক বলে কটাক্ষ করেন সেই শুভেন্দু।
জার্সি বদলে বিজেপিতে যোগ দেওয়া কৈলাশের পরিবর্তে এবার নজফগড়ে আপ প্রার্থী করা হয়েছে তরুণ যাদবকে। কংগ্রেসের টিকিটে দাঁড়িয়েছেন সুষমা যাদব। দেশের রাজধানী শহরের ভোটপ্রচারে শুভেন্দুর মুখে শোনা গেল, বাংলার অপশাসনের কথা, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের তীব্র সমালোচনা। আম আদমি পার্টি-কে হারানোর ডাক দিয়ে শুভেন্দু তুলোধনা করলেন, মমতা ও কেজরিওয়ালের ঘনিষ্ঠতাকে।
দিল্লির মানুষকে ভোটের মাধ্যমে আপকে ‘জবাব’ দেওয়ার কথা বলেন তিনি। পাশাপাশি, সেই একই সুরে তোপ দাগেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধেও। তাঁর কথায়, “ইন্ডি জোটের অন্যতম ছিল তৃণমূল। ২০২১ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আমি নন্দীগ্রামে হারিয়েছি। মমতা এখন মুখ্যমন্ত্রী নন। কম্পার্টমেন্টাল সিএম। ২৬ সালে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী করব। তার আগে আপনারা দিল্লিতে জবাব দিন।” তবে এখানেই থেমে থাকেননি তিনি। দিল্লির নির্বাচনে জিততে বাংলার সদ্য ‘ক্ষত’ আরজি কর-কাণ্ডকেও হাতিয়ার করে ভোট প্রার্থনা করেন শুভেন্দু। তিনি বলেন, “আপনারা যদি আরজি করের ঘটনায় ব্যাথিত হন, তা হলে বিজেপিকে জেতান।” এরপরই দুর্নীতি, পরিবারবাদ ও তুষ্টিকরণের কথা টেনে কেজরীবাল ও মমতার বিরুদ্ধে একই সুরে আক্রমণ শানান নন্দীগ্রামের বিধায়ক।
তিনি বলেন, “দেশের যেখানেই এদের সরকার আছে, সেখানেই এরা ব্যর্থ হচ্ছে। চোরে চোরে মাসতুতো ভাই।” হিন্দিবলয়ের ভোটে বরাবরই বিজেপির অন্যতম হাতিয়ার হিসাবে ভাল ফল হিন্দু-হিন্দুত্ব রাজনীতি। গতকাল দিল্লিতে প্রচারে এসে সুকান্তর মুখে শোনা যায় হিন্দু নির্যাতনের কথা। এদিন আবার একই সুর শোনা যায়, শুভেন্দুর গলাতেও। তিনি বলেন, “দু কোটি বাঙালি হিন্দু বাংলাদেশে বিপন্ন। রোজ মন্দির ভাঙছে। বাংলাদেশ নিয়ে কেজরিওয়ালের বক্তব্য পেয়েছেন? অতিশি দিদিমনিকে কিছু বলতে শুনেছেন?”