সুমন তরফদার। কলকাতা সারাদিন।
বারে বারে দ্বিতীয়বার। গতবারের মতো এবারও দলের বিধানসভা শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির কাছে ক্ষমা চেয়ে এ যাত্রায় রক্ষা পেলেন ভরতপুরের তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবীর। বললেন, “পুরনো কথা আর মনে করতে চাই না! যা বলেছি ভুলে যান। এবার থেকে দলের শৃঙ্খলা মেনে চলব!”
শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটির সঙ্গে বৈঠকের পর বিধানসভার বাইরে দাঁড়িয়ে হুমায়ুন বলেন, “বৈঠকে আমাকে কী বলা হল, তা জানতে শোভনদেববাবুর কাছে জিজ্ঞাসা করুন, উত্তর পেয়ে যাবেন।” সংবাদমাধ্যমকে দুষে হুমায়ুন বলেন, ” যে মন্তব্য ১২ তারিখে আমি করেছিলাম, ১১ তারিখ বিরোধী দলনেতার মন্তব্যের প্রেক্ষিতে, তা বৈদ্যুতিন কয়েকটি চ্যানেল গত ১৩ তারিখ থেকে দেখিয়ে এসেছে। সেই ব্যাপারটা ক্লোজ। আমাকে দলের শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটির তরফ থেকে ডাকা হয়েছে। খুব আলোচনা হয়েছে। ওনারা আমাকে কয়েকটি উপদেশ দিয়েছেন। আমিও ওনাদের কাছে কিছু আবেদন রেখেছি। ওনারা আমাদের কথা দিয়েছেন, আমার কথাটা গুরুত্ব দিয়ে দেখবেন, আমিও কথা দিয়েছি, আগামী দিয়ে দলের শৃঙ্খলার প্রশ্নে আমি খুব সজাগ থাকব।”
ঘটনার সূত্রপাত, গত মঙ্গলবার বিধানসভার বাইরে দাঁড়িয়ে তৃণমূল সরকারকে নিশানা করে শুভেন্দু অধিকারীর বক্তব্য ছিল, ”এরা (তৃণমূল) বাংলার হিন্দু জনগণকে উপড়ে ফেলতে চাইছে। তাই আগামী বছর বাংলার ক্ষমতায় আসার পর ওদের দলের যে সব মুসলিম বিধায়ক জিতে আসবে তাদের চ্যাংদোলা করে ১০ মাস পরে এই রাস্তায় ফেলব!”
যার জবাবে হুমায়ুন বলেছিলেন, ‘মারতে এলে রসগোল্লা খাওয়াবো নাকি? ঠুসে দেব! দলের থেকে আমার কমিউনিটি আগে!’ প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন তিনি। হুমায়ুন বলেন, “আমরা যখন কিছু বলি তখন প্রশাসন তড়িঘড়ি ব্যবস্থা নেয়। আর আজ প্রশাসন চুপ কেন?” এরপরই দলের কোপে পড়েন হুমায়ুন। শোকজ করা হয় ভরতপুরের বিধায়ককে। তবে তাঁর জবাবে সন্তুষ্ট না হওয়ায় তাঁকে মঙ্গলবার শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির সামনে সশরীরে হাজির হওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছিল।
সূত্র মারফত জানা যাচ্ছে, বৈঠকে হুমায়ুনকে সতর্ক করা হয়েছে, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিঘ্নিত হয়, এমন কোনও কথা বলা যাবে না। অভিযোগ থাকলে নির্দিষ্ট জায়গায় জানাতে হবে। বৈঠকে হুমায়ুনকে স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে, দলের করলে, দলের যে নীতি আদর্শ তা অবশ্যই মেনে চলতে হবে। এমন কথা বলা যাবে না, যাতে দলকে অস্বস্তিতে পড়তে হয়। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের বক্তব্য, হুমায়ুনকে হুঁশিয়ারি দেওয়ার মাধ্যমে আসলে তৃণমূল দলের সমস্ত বিধায়কদের কাছেই একটা বার্তা পৌঁছে দিল, যে ছাব্বিশের নির্বাচনের আগে কোনও ধরনের বিতর্কিত মন্তব্য করা যাবে না।
দলের পরিষদীয় মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ওকে অনেক বুঝিয়ে বলা হল। তুমি কিন্তু দলের বাইরে না। তোমার মনে ক্ষোভ থাকবে, দুঃখ থাকবে, অভিযোগও থাকবে, কিন্তু সেটা জানানোর জায়গা অন্য। কিন্তু পাবলিকলি একথা বলতে পারো না। ওকে প্রশ্ন করি, তুমি কি সংবিধানের কাছে দায়বদ্ধ হও নি? ও বলল, হ্যাঁ হয়েছি।তাহলে তো সংবিধান মেনে চলতেই হবে। সেটাই ওকে বুঝিয়ে বলা হয়েছে।”
এদিনের শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটিতে ছিলেন ফিরহাদ হাকিম, শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। ১২ মার্চের মন্তব্যের পরই দল যখন তাঁকে সতর্ক করেছিলেন, তখন হুমায়ুন বলেছিলেন, “উনি সঠিক কথাই বলেছেন। দলে থাকতে গেলে নিয়ম মানতেই হয়। কিন্তু সেটা কি শুধু আমার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য? ববি দার ক্ষেত্রে বা বাকিদের ক্ষেত্রে নয়? নাকি দিদির বাড়ির ৬০০ মিটার দূরে বাস করে বলে শৃঙ্খলা মানতে হবে না!”
যে ‘ববি দা’-র বিরুদ্ধে মুখ খুলেছিলেন, এদিন তাঁর সামনে বসেই জবাব দিতে হল তাঁকে।
কমিটির তরফে এও মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে, এই নিয়ে দু’বার শোকজ হলেন হুমায়ুন। শেষবারের মতো সতর্ক করা হল। অর্থাৎ বার বার তিনবার শোকজ হওয়ার অর্থ সাসপেন্ড! ফলে হুমায়ুন সত্যি কি শুধরে যাবেন নাকি কয়েক মাসের ব্যবধানে আবার ‘বিদ্রোহী’ ভূমিকায় ধরা দেবেন, তা নিয়েও কৌতূহলী দলের অনেকে।