সুষমা পাল মন্ডল। কলকাতা সারাদিন।
”পশ্চিমবঙ্গে সবচেয়ে বড় গুণ, মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটা গতিশীল সরকার চলছে। এখানে একটি শ্রমদিবসও নষ্ট হয় না।” জানালেন টিটাগড় ওয়াগনের উমেশ চৌধুরী।
বণিক সভা ফিকির প্রেসিডেন্ট হর্ষ আগরওয়াল বলেন, ”বাংলায় আমাদের অভিজ্ঞতা সবচেয়ে ভালো। মুখ্যমন্ত্রী লগ্নির জন্য নিজে উদ্যোগী।”
বেঙ্গল অম্বুজা গ্রুপের কর্ণধার হর্ষ নেওটিয়ার কথায়, ”বাংলা আজ সবার গন্তব্য। আমরা নিশ্চিন্তে এই রাজ্যে ব্যবসা করছি। বিপুল কর্মসংস্থান হচ্ছে।”
রিলায়েন্স গোষ্ঠীর পূর্বাঞ্চলীয় কর্তা তরুণ ঝুনঝুনওয়ালিয়া বলেন, ”বাংলায় আমরা ১৫ বছর কাজ করছি। এই মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে যেটা দেখছি তা হল, সরকারের সঙ্গে মানুষের সরাসরি যোগাযোগ। আমাদের তো মানুষের মধ্যেই কাজ করতে হয়।”
ডেস্টিনেশন বেঙ্গল। ডেস্টিনেশন কলকাতা। ভারতের প্রত্যেক প্রথম সারির শিল্পপতিদের মুখে এভাবেই উঠে এল বদলে যাওয়া বিনিয়োগ বান্ধব বাংলার ছবি।
রাজ্যে পালাবদলের পর থেকেই দেশ সহ গোটা বিশ্বের সামনে বাংলাই শিল্পের ডেস্টিনেশন এই বার্তা তুলে ধরতে চেয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর সেই লক্ষ্যেই প্রত্যেক বছর বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন হয় বাংলায়। যেখানে দেশ-বিদেশের একাধিক শিল্পপতি এবং কুটনীতিক সহ শীর্ষ আধিকারিকরা উপস্থিত থাকেন। গতবার রিলায়েন্স কর্তা মুকেশ আম্বানি-গৌতম আদানির মতো শিল্পপতিরাও উপস্থিত থেকেছেন। যদিও এবার তাঁরা থাকবেন কিনা স্পষ্ট নয়।
তবে সম্মেলন যাতে সফল হয় সেজন্য ময়দানে নেমে পড়েছেন ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অ্যান্ড কোং’। এদিন একদিকে দিল্লিতে অমিত মিত্ররা বৈঠক সারলেন অন্যদিকে কলকাতায় এই সম্মেলনের সূচনা করে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
শুক্রবার আলিপুরের সৌজন্য গৃহে বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের প্রস্তুতি বৈঠক ছিল। সেখানে রাজ্যের একেবারে শীর্ষস্তরের শিল্পপতিরা হাজির ছিলেন। সেই সঙ্গেই উপস্থিত ছিলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্য়ায়। বিদেশ থেকে আসা শিল্পোদ্যোগীদের কীভাবে অভ্যর্থনা জানানো হবে তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে এদিন। কলকাতায় থাকা একাধিক দূতাবাসের কনসালরাও হাজির ছিলেন এই প্রস্তুতি বৈঠকে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় তাঁর এক্স হ্যান্ডেলে এই প্রস্তুতি সম্মেলনের কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি লিখছেন, ”আসন্ন ‘বেঙ্গল গ্লোবাল বিজনেস সামিট 2025’ – এর আয়োজন উপলক্ষ্যে আজ আমাদের ‘সৌজন্য’ সভাগৃহে দেশের বিশিষ্ট শিল্পপতিগণ, বিভিন্ন চেম্বার্সের কর্ণধারগণ এবং কলকাতায় উপস্থিত বিভিন্ন দেশের ডিপ্লোম্যাটদের সঙ্গে খুব ফলপ্রসূ আলোচনা হল। বাংলায় বিনিয়োগ নিয়ে সবার আগ্রহ দেখে আমি মুগ্ধ। বিনোদন ও ক্রীড়াজগতের গুণী মানুষরাও এই আলোচনায় যোগ দিয়েছিলেন। ফলে বাংলার নিজস্ব ‘ক্রিয়েটিভ ইকনমি’ নিয়েও ইতিবাচক কথা হল”।
স্থায়িত্ব এবং লগ্নির পরিবেশ – এটাই যে বাংলা সম্পর্কে তাদের আগ্রহ দিনকে দিন বাড়িয়েছে, সেকথা এদিনও আরও একবার বলে দিলেন সঞ্জীব গোয়েঙ্কা, হর্ষ নেওটিয়া থেকে শুরু করে রিলায়েন্স, বিড়লা, আইটিসি, ইমামি, চর্মশিল্পের মতো বড় বড় সংস্থার শিল্পসংস্থার কর্তারা। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ”ক্ষুদ্রশিল্পে আমরা নম্বর ওয়ান। বাংলায় এত ব্যবসা হচ্ছে যে কোনও হোটেলে জায়গা নেই। হোম স্টে-তে বিপ্লব হয়ে গিয়েছে। আইটি সেক্টরে ইনফোসিসের মতো সংস্থা আবার বিনিয়োগ করবে। বাংলা এখন লগ্নির সেরা গন্তব্য। সব কিছুতে রাজ্য এখন এগিয়ে গিয়েছে। আপনারা সবাই আরও লগ্নি করুন। সরকার পাশে আছে।”
এদিনের বৈঠকে যে সমস্ত শিল্পপতিরা ছিলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম হর্ষ নেওটিয়া, সঞ্জীব গোয়েঙ্কা, রমেশ জুনেজা, উমেশ চৌধুরী, উজ্জ্বল সিনহা, সত্যম রায়চৌধুরী, দিলীপ দুগার, রুদ্র চট্টোপাধ্য়ায়, মেহুল মোহাঙ্কা সহ অন্যান্য শিল্পোদ্যোগীরা। বিভিন্ন দফতরের মন্ত্রী ও আমলারাও এদিন উপস্থিত ছিলেন। সেই সঙ্গেই আন্তর্জাতিক কলকাতা চলচিত্র উৎসবের চেয়ারম্যান তথা পরিচালক গৌতম ঘোষ উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, ১৮ ডিসেম্বর নিউটাউনে ইনফোসিসের নতুন দপ্তরের উদ্বোধন করবেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিন মুখ্যমন্ত্রী একইসঙ্গে গুরুত্ব দিলেন আমেরিকা ও জাপানের প্রতিনিধির বক্তব্যে। কলকাতার মার্কিন কনসাল জেনারেল জানালেন, বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে আমেরিকা থেকে একটি বড় বাণিজ্যিক দল আসবে। বাংলাকে লগ্নির জায়গা হিসাবে বাড়তি গুরুত্ব দিচ্ছে মার্কিন প্রশাসন। অনুষ্ঠানের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র জানালেন, জাপান সম্ভবত এবারের সম্মেলনের থিম কান্ট্রি হতে যাচ্ছে। ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগে আবার আসছেন বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে যোগ দিতে। যথারীতি এবারে জোর দেওয়া হচ্ছে ক্ষুদ্রশিল্প, তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্র, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, ভ্রমণ, হোটেল, হোমস্টে, চর্মশিল্প-সহ কর্মসংস্থানমুখী বিষয়কে। এদিনের প্রস্তুতি বৈঠকে সেই কথাগুলি বারবার উচ্চারিত হল।
সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় জানালেন, তাঁর তৃতীয় ইস্পাত কারখানা শীঘ্রই সামনে আসবে। তিনি বলেন, ”আমি ক্রিকেটার। কিন্তু আমাদের পরিবার ব্যবসায়ীর পরিবার। তবে সঞ্জীবদের মতো অত বড় নয়। আমি ক্রিকেট খেলে ৪০০ টাকা পেতাম। আর সঞ্জীব দুমাসের জন্য ২৭ কোটি টাকা দিচ্ছে ঋষভ পন্থকে। আসলে খেলাও এখন ব্যবসার অঙ্গ। প্রচুর কর্মসংস্থান সেখানেও হয়।”
বক্তব্য রাখেন আরপিজির কর্ণধার সঞ্জীব গোয়েঙ্কা। তিনি বলেন, ”২২টি রাজ্যে আমাদের লগ্নি। কিন্তু সবচেয়ে ভালো পরিবেশ এই পশ্চিমবঙ্গে। আগামী দিনেও আরও লগ্নি করব।” ইউনিভার্সাল সাকসেসের প্রধান প্রসূন মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ”পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক স্থায়িত্বই লগ্নির দুর্দান্ত পরিবেশ তৈরি করেছে। আমরা অনেকক্ষেত্রেই ইনভেস্ট করছি।” আইটিসি-র সঞ্জীব পুরী বলেন, ”মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বহু সংস্কার করেছেন রাজ্যে যেগুলো শিল্পায়নে কাজে লাগবে। দারুণ লগ্নির পরিবেশ তৈরি হয়েছে। বাংলা হয়েছে গন্তব্য।”
টেকনো ইন্ডিয়ার কর্ণধার সত্যম রায়চৌধুরি বলেন, ”দিদি মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর বাংলাই হয়ে উঠেছে ফোকাস।”
চর্মশিল্পে রাজ্য কীভাবে এগিয়ে চলেছে সেকথা তুলে ধরেন বিশিষ্ট শিল্পকর্তা রমেশ জুনেজা। হোটেল ইন্ডাস্ট্রিতে উত্তরবঙ্গে তাঁদের কাজের তথ্য তুলে ধরেন শিল্পকর্তা দিলীপ দুগার।
তিনি বলেন, ”উত্তরবঙ্গের হোমস্টে এবং নতুন নতুন টুরিস্ট স্পট সৃষ্টি করার যে উদ্যোগ মুখ্যমন্ত্রী নিয়েছিলেন, তা সাফল্যের মুখ দেখেছে।”