সুহানা বিশ্বাস। কলকাতা সারাদিন।
সিপিএম নেতা তথা প্রাক্তন বিধায়ক তনময় ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ করলেন এক তরুণী সাংবাদিক। ফেসবুক লাইভে এসে ওই তরুণী সাংবাদিক সিপিএমের এই বর্ষীয়ার নেতার বিরুদ্ধে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ তুলেছেন । তিনি তন্ময় ভট্টাচার্যকে ‘পোটেনশিয়াল রেপিস্ট’ বলে অভিহিত করেছেন।
ভিডিওটি সন্দীপন মিত্র নামে জনৈক এক ব্যবহারকারী শেয়ার করে লিখেছেন, ‘সিপিআই(এম) নেতা ও প্রাক্তন বিধায়ক তন্ময় ভট্টাচার্য আজ এক মহিলা সাংবাদিককে হেনস্থা করার চেষ্টা করলেন।’
তরুণী সাংবাদিককে বলতে শোনা যায়, ‘চার বছরে বেশি সময় ধরে আমি সাংবাদিকতা করছি। অনেক লড়াই গেছে, কিন্তু কখনো কম্প্রোমাইজ করিনি। কিন্তু আজকে যা ঘটলো! অনেকবারই বিষয়টা ঘটেছে কিন্তু আমি ইগনোর করে গেছি। আমার ইগনোর করা ঠিক হয়নি এবার আমি বুঝতে পারছি। নাম নিয়েই বলছি আমি… আজ সকালে সিপিআইএম নেতা তন্ময় ভট্টাচার্যের ইন্টারভিউ ছিল। ওনার অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়েছিলাম। সকালে যাই। এর আগে অনেকবার এরকম হয়েছে। উনি ইয়ার্কি করেন। ইন্টারভিউ দেবার সময় ওনার গায়ে হাত দেওয়ার অনেক প্রবণতা আছে। এর আগেও অনেকবার এরকম করেছেন। হাতে হাত দিয়েছেন বা….।’
কিছুটা সংকোচ করে তিনি ফের বলেন, ওনার আচরণ আমার একদম ভালো লাগেনি । কিন্তু আজকে যা ঘটলো… আমার ক্যামেরা পার্সেন ঠিক করে দেয় কে কোথায় বসবে বা ফ্রেমটা কি হবে ইত্যাদি। প্রত্যেকবারই উনি এরকম করেন… এখানে বসবো না ওখানে বসবো। কিন্তু আজকে… কথাগুলো বলতে বলতে আমি রীতিমতো কাঁপছি… আমি এরকম নই… হয়তো আপনারা বুঝতে পারছেন না আমার হাত পা কাঁপছে। আমি এমনিতেই মেন্টালি খুবই স্ট্রং।’ এর পরই তরুণী সাংবাদিক বলেন, উনি (তন্ময় ভট্টাচার্য) আজকে আমার কোলে বসে পড়েন । আমার ক্যামেরা পার্সেন্ট যখন বলেন ‘এইখানে বসুন’। তখন উনি বলেন, ‘কোথায় বসব…এখানে বসবো… এ কথা বলে আমার আমার কোলে বসে পড়েন।’
সাংবাদিক এর পর বলেন, আমি বিষয়টা কোনরকম ভাবে কন্ট্রোল করে নিয়ে আমি ইন্টারভিউটা নিই। কারণ আমার মাথায় সর্বদা এটা থাকে যে এটাই আমার কাজ এবং আমাকে করতে হবে। সেই কারণে তাৎক্ষণিকভাবে আমি তখন ইন্টারভিউটা নিয়েছি । কিন্তু মানসিকভাবে এত ইরিটেশন হচ্ছিল না তার ব্যাখ্যা আমি এই মুহূর্তে করতে পারবো না।’
তিনি বলেন, তন্ময় ভট্টাচার্যের যখন আমার কোলে বসে পড়ে তখন আমি ওনাকে বলি এগুলো করবেন না আমি পছন্দ করি না। আপনি ইয়ার্কি করেন ঠিক আছে কিন্তু এভাবে করবেন না। কিন্তু উনি আমার কোলে বসে পড়েন।’
যদিও সাংবাদিক জানিয়েছেন যে সেই সময় ক্যামেরা অন ছিল না। তিনি বলেন, ‘এর বিরুদ্ধে সিপিএম কোন পদক্ষেপ দেবে কিনা আমি জানিনা। তবে এটা কোন রাজনৈতিক দলের বিষয় নয়। সমাজে এরকম অনেক মানুষ থাকে যারা পোটেনশিয়াল রেপিস্ট হয়। তারা মেয়েদেরকে এরকম ভাবে। তারা ভাবে যে মেয়েদেরকে কোন রকম ভাবে ছোঁয়ার চেষ্টা করব। আসলে সব পুরুষরা দোষী হয় না। কিন্তু কিছু কিছু এরকম থাকে।
যদিও সিপিএম নেতা তন্ময় ভট্টাচার্যের সাফাই হল, ‘একটা বাচ্চা মেয়ে। ওকে আমি মা বলে ডাকি। ও একথা বলবে ভাবতে পারছি না।’ তিনি বলেছেন, ‘আমি ওকে চিনি। একাধিকবার সাক্ষাৎকার নিয়েছে। বরাবরই ঠাট্টা করি। কথা প্রসঙ্গ আমি ওর বাঁদিকের পায়ের উপর আঙুল রেখে বলেছি, এখানে ? তাতে ও পোটেনশিয়াল রেপিস্ট বলে মন্তব্য করল ! এত মানুষের সঙ্গে মিশি…এতজনের সঙ্গে ইয়ার্কি -ফাজলামি করি…কেউ কোনওদিন কিছু বলেনি।’
সাসপেন্ড করল সিপিএম
মহিলা সাংবাদিকের শ্লীলতাহানির অভিযোগ ওঠার পরেই কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হলো তন্ময় ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে। দলের তরফে তাঁকে সাসপেন্ড করা হল বলে জানিয়েছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেন, “আমি শুনেছি এক তরুণী সাংবাদিক অভিযোগ করেছেন। তন্ময় বাড়ি থেকে সাক্ষাৎকার দেয়। কেন এটা করে জানি না। তবে যা অভিযোগ পেয়েছি তা খতিয়ে দেখা হবে।”
তবে অভিযোগ যে ধরনের এসেছে তাকে দল কখনোই সমর্থন করে না। তাই সিপিএম নেতা তন্ময় ভট্টাচার্যকে আপাতত দল থেকে সাসপেন্ড করা হচ্ছে। এর পাশাপাশি মোঃ সেলিম এও বলেন বুঝতে পারছি না কেন তিনি এই ধরনের সাক্ষাৎকারগুলো বাড়িতে ডেকে দিতেন। তদন্ত প্রক্রিয়া শুধু হতে কিছুটা সময় লাগবে এটা সিপিএম দল আভ্যন্তরীণ টিমকে দিয়ে করাবে। কিন্তু ততদিন দলের যাবতীয় কর্মসূচি থেকে দূরে থাকতে হবে তন্ময় ভট্টাচার্যকে। সাসপেন্ড হওয়ার দরুন কোন কর্মসূচিতে তিনি অংশগ্রহণ করতে পারবেন না।