সুমন তরফদার। কলকাতা সারাদিন।
“নবরাত্রি চলছে। আমি সেজন্যও শুভকামনা দেব। কিন্তু আমি চাই না এজন্য আপনি দাঙ্গা করুন। সাধারণ মানুষ এসব করে না। একটা রাজনৈতিক দল করে। লজ্জার কথা, দুঃখের কথা, যে লাল পার্টি আগে ধর্মনিরপেক্ষতার বড় বড় কথা বলত, আজ লাল আর গেরুয়া এক হয়ে গিয়েছে। হতে দেও। আমি একাই লড়াই করব। আমি একাই একশো।” এভাবেই আজ কলকাতায় রেড রোডে ঈদের নামাজ থেকে একযোগে সিপিএম এবং বিজেপিকে তীব্র আক্রমণ করে লন্ডনে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় বক্তব্য রাখার সময় ঝামেলা করার জন্য দায়ী করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বাম-রামকে একযোগে কটাক্ষ করে মমতা বলেন, “বাম-রাম একসঙ্গে টিকিট কেটে গিয়ে আমাকে প্রশ্ন করছে, আপনি কি হিন্দু। আমি বলেছি, আমি হিন্দু, আমি মুসলিম, আমি খ্রীস্টান, আমি শিখ, আমি ভারতীয়? তুমি কী করতে পারবে?”
প্রতি বছরের মতো এবারও ইদের সকালে রেড রোডে হাজির হন মুখ্যমন্ত্রী। সোমবার সকাল ৯টা নাগাদ রেড রোডে যান মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর সঙ্গে ছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ অভিষেক এবং মন্ত্রী জাভেদ খান। মমতা এবং অভিষেক সমাবেশে বক্তৃতাও করেন। দু’জনের বক্তব্যের সিংহভাগ জুড়েই ছিল রাজ্যে এবং দেশে সম্প্রীতিরক্ষার আহ্বান। একই সঙ্গে ‘গোলমাল’ পাকানোর চেষ্টা করার জন্য কেন্দ্রের শাসকদলকেও নিশানা করেন তাঁরা। মমতা এক ধাপ এগিয়ে সিবিএম-বিজেপিকে একই বন্ধনীতে ফেলে আক্রমণ করেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘লাল আর গেরুয়া এক হয়ে অশান্তি করছে। আমরা বিভাজনের রাজনীতি করি না। ধর্মের নামে ব্যবসা করে কিছু রাজনৈতিক দল।’
রেড রোডে ইদের নমাজ পাঠের অনুষ্ঠানে গিয়ে বিরোধীদের নিশানা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিরোধীরা বাংলাকে অশান্ত করার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করলেন মুখ্যমন্ত্রী। বিরোধীদের ফাঁদে পা না দেওয়ার আর্জি জানান তিনি।
নাম না করে বিজেপিকে আক্রমণ করে মমতা বলেন, ‘আমি রামকৃষ্ণ – বিবেকানন্দের ধর্মকে মানি। জেনেশুনে একটা নোংরা ধর্ম এই ভুয়ো রাজনৈতিক দল বানিয়েছে তাকে আমি মানি না। ওরা হিন্দু ধর্মের বিরুদ্ধে। সমস্ত হিন্দু আপনাদের বিরুদ্ধে নয়। সমস্ত খ্রীস্টান আপনাদের বিরুদ্ধে নয়। কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা আছেন। যারা এসব নিয়ে ব্যবসা করেন। ওদের দোকান আমি বন্ধ করে দেব। আপনারা যদি সবাই একজোট থাকেন।’
বাম- বিজেপিকে একসঙ্গে নিশানা করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমি বিদেশ থেকে ফিরেছি। বাম এবং রাম বিভাজনের রাজনীতি চায়। আমি অশান্তি চাই না। কেউ কিছু বলতে এলে বলবেন দিদি আছে, অভিষেক আছে, সরকার আছে।’
মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘যারা উল্টোপাল্টা বলছে, বলতে দিন। কিন্তু তাতে কান দেবেন না। তাতে গুরুত্ব পেয়ে যাবে। লাল আর গেরুয়া এক হয়ে গিয়েছে। নিজেদের ইজ্জত রক্ষায় আমরা একাই একশো। আপনাদের সবকা সাথ, সবকা বিকাশের স্লোগান মিথ্যে। আমাকে যত পারুন গালাগালি দিন। আমার সঙ্গে আপনারা আছেন, আমি আর কিছু পরোয়া করি না। কোনও দাঙ্গা করতে দেবেন না। ওদের স্লোগান দাঙ্গা করো, আমাদের স্লোগান দাঙ্গা রোখো। ওদের ফাঁদে পা দেবেন না।’
মুখ্যমন্ত্রীর সুরেই বিরোধীদের নিশানা করেন অভিষেকও। এদিন অভিষেকের গলায়ও শোনা গেল সর্বধর্ম সমন্বয়ের বার্তা। বললেন, চাঁদের কোনও ধর্ম হয় না। তৃণমূল সেনাপতির কথায়, “মৃত্যু পর্যন্ত একতা বজায় রাখতে হবে। সবাইকে মিলে মিশে থাকতে হবে।” এরপরই বিজেপিকে এক হাত নিয়ে হুঙ্কার ছেড়ে বললেন, “জীবন দিয়ে দেব, আদর্শ থেকে সরব না।” রেড রোডে অনুষ্ঠান থেকে সোজা পার্ক সার্কাস চলে যান মুখ্যমন্ত্রী ও অভিষেক। লাল মসজিদ, সাদা মসজিদ এলাকা পায়ে হেঁটে ঘোরেন তাঁরা। কথা বলেন স্থানীয়দের সঙ্গে।