সুমন তরফদার। কলকাতা সারাদিন।
স্পেশাল ইন্টেন্সিভ রিভিশন বা এসআইআর প্রক্রিয়ায় ভোটার তালিকার সংশোধনের নামে একজন বৈধ প্রচারের নাম যদি বাদ পড়ে তাহলে পুরো প্রক্রিয়া বাতিল করতে বাধ্য হবে সুপ্রিম কোর্ট। তাই সময় থাকতে সতর্ক থাকুন। এভাবেই জাতীয় নির্বাচন কমিশনকে বিহারের ভোটার তালিকায় স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন প্রক্রিয়া নিয়ে চরম হুঁশিয়ারি দিল সুপ্রিম কোর্ট। অন্যদিকে সুপ্রিম কোর্টে লিখিত হলফনামা জমা দিয়ে জাতীয় নির্বাচন কমিশন জানিয়ে দিল খুব তাড়াতাড়ি গোটা দেশে ভোটার তালিকা সংশোধনের জন্য ২০২৬ সালের জানুয়ারির প্রথম দিনকে কাট অফ তারিখ ধার্য করে স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন প্রক্রিয়া শুরু করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
গত সপ্তাহেই সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে জাতীয় নির্বাচন কমিশন কে স্পষ্ট ভাষায় নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল কমিশনের নির্ধারিত ১১ নথির পাশাপাশি দ্বাদশ নথি হিসেবে নাগরিকদের পরিচয় পত্র হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে আধার কার্ডকে। কিন্তু তারপরেও বিহারে বেশ কিছু ক্ষেত্রে আধার কার্ড নিতে নির্বাচন কমিশনের আধিকারিকরা অস্বীকার করছেন বলে অভিযোগ করেন মামলাকারীদের আইনজীবীরা। সে ক্ষেত্রেও কমিশনকে তীব্র ভর্ৎসনা করে সুপ্রিম কোর্ট। আজ আরো একবার জাতীয় নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে সুপ্রিম কোর্টে আপত্তি তুলে বলা হয় গোটা দেশে যেভাবে লক্ষ লক্ষ আধার কার্ড চাল হচ্ছে বলে প্রকাশ্যে এসেছে তার প্রেক্ষিতে আধার কার্ডের ভিত্তিতে ভোটার তালিকায় নাম সংশোধন করা যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের সেই বক্তব্য উড়িয়ে দিয়ে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সূর্যকান্ত বলেন, আপনার এই বক্তব্য আজ নতুন কিছু নয়। কিন্তু এটাও মনে রাখবেন আপনারা বারবার যুক্তি দিচ্ছেন আধার কার্ড জাল হচ্ছে বলে। বার্থ সার্টিফিকেট অথবা প্যান কার্ড বা রেশন কার্ড এর মত ভারতীয় সমাজ ব্যবস্থার অত্যন্ত জরুরী যে নথিগুলো সেগুলোও কিন্তু বিপুল সংখ্যায় জাল হচ্ছে। তাহলে তো সেই সমস্ত নথিকেও বাদ দিয়ে দিতে হয়। আধার সম্পর্কে আমরা যে নির্দেশ দিয়েছি তা বহাল থাকবে।
আজ সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সুর্যকান্ত এবং জয়মাল্য বাগচির বেঞ্চ নিজেদের পর্যবেক্ষণে জানায়, আপাতত আমরা ধরে নিচ্ছি, নির্বাচন কমিশন একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে আইন এবং বাধ্যতামূলক নিয়ম মেনেই কাজ করছে। তবে কোনও গাফিলতি বা বেআইনি পদক্ষেপ সামনে এলে সংশোধন প্রক্রিয়া মান্যতা পাবে না। যদি নির্বাচনী কমিশনের গৃহীত পদ্ধতিতে কোনও রকম অসঙ্গতি পাওয়া যায়, তবে পুরো প্রক্রিয়াটিই বাতিল করে দেওয়া হবে।
শুধু তাই নয়, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সূর্যকান্ত এবং বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চ আজ স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেয়, বিহারের এসআইআর মামলায় বিচ্ছিন্নভাবে নানারকম মতামত এখনই দিতে রাজি নয় সুপ্রিম কোর্ট। কারণ এই মামলার রায় শুধুমাত্র বিহারের জন্য নয়, সারা দেশের নির্বাচনী তালিকা সংশোধন প্রক্রিয়ার উপরেই প্রভাব ফেলতে পারে। তাই এই বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায় হবে সর্বভারতীয় প্রেক্ষাপটে। এই মামলার চূড়ান্ত শুনানি আগামী ৭ অক্টোবর। সব ঠিক থাকলে, সেদিনই বিশেষ রিভিশন প্রক্রিয়ার বৈধতা নিয়ে চূড়ান্ত রায় দেবে দেশের সর্বোচ্চ আদালত।
মামলাকারীদের আইনজীবীরা অনুরোধ করেছিলেন, যাতে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশের দিন অর্থাৎ ১ অক্টোবর-এর আগে এক দিন শুনানি হয়। তবে দশেরার জন্য আদালতে ছুটি থাকার কারণে সেই অনুরোধ গ্রহণ করেনি সুপ্রিম কোর্ট। তবে সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট করে দিয়েছে, চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ হলেও কোনও সমস্যা হবে না। ভোটার তালিকা চূড়ান্ত হোক বা না-হোক, কোনও বেআইনি প্রক্রিয়া ধরা পড়লেই আদালত গোটা প্রক্রিয়া বাতিল করে দেবে।