সুষমা পাল মন্ডল। কলকাতা সারাদিন।
বাংলার মাটির সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক চিরন্তন। এই মাটির গন্ধ, এই মাটির স্পর্শেই গড়ে ওঠে মানুষের আবেগ ও সংস্কৃতি। এর একটি উজ্জ্বল উদাহরণ হল বাঁকুড়া জেলার জয়পুর থানার অন্তর্গত বৈতল গ্রামের ঝগড়াই চণ্ডী মন্দির প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত ঐতিহ্যবাহী কাদা খেলা। প্রতি বছর বিজয়া দশমী উপলক্ষে এই অনুষ্ঠানকে ঘিরে হাজির হন হাজারো মানুষ।
উৎসবের মূল রূপ
বিজয়া দশমীর দিন সকাল থেকেই বৈতল গ্রামের ঝগড়াই চণ্ডী মন্দিরে ভক্তদের ভিড় জমতে থাকে। মন্দিরে বিশেষ পূজা-অর্চনা, হোম-যজ্ঞ সম্পন্ন হয়। এরপরে শুরু হয় সেই বহুল পরিচিত কাদা খেলা। পুরুষ, মহিলা, শিশু—সবাই এই খেলায় অংশ নেন। মন্দির চত্বরের আশেপাশে জমে ওঠা জলে ও কাদায় একে অপরকে কাদা ছুঁড়ে খেলার মাধ্যমে আনন্দে ভাসেন গ্রামের মানুষজন এবং বাইরের দর্শনার্থীরা।
ঐতিহ্য ও ধর্মীয় তাৎপর্য
স্থানীয় বিশ্বাস অনুযায়ী, মা চণ্ডীর আশীর্বাদ লাভ ও অশুভ শক্তি দূর করতে এই কাদা খেলার আয়োজন করা হয়। বিজয়া দশমী মূলত মা দুর্গার বিজয় দিবস—অসুর বধের প্রতীক। এই দিন কাদা খেলায় অংশগ্রহণকে অনেকে নতুন সূচনা, অকল্যাণ মোচন এবং গ্রামীণ ঐক্যের প্রতীক হিসেবে দেখেন।
সামাজিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব
এটি কেবল ধর্মীয় আচার নয়, বরং সামাজিক সম্প্রীতি ও লোকসংস্কৃতির এক অমূল্য অংশ। গ্রামবাসী ছাড়াও আশেপাশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মানুষ এই অনুষ্ঠানে যোগ দেন। ফলে এটি এক প্রকার লোকোৎসবে পরিণত হয়। ছোট বড় নির্বিশেষে সবাই সমানভাবে এই খেলায় অংশ নিয়ে মেতে ওঠেন আনন্দে।
পর্যটন সম্ভাবনা
আজকের দিনে বৈতল গ্রামের এই কাদা খেলা শুধু গ্রামবাংলার নয়, সমগ্র পশ্চিমবঙ্গের জন্য একটি সাংস্কৃতিক আকর্ষণ হয়ে উঠেছে। প্রতিবছর বহু পর্যটক ও ফটোগ্রাফার এখানে ভিড় করেন। ঝগড়াই চণ্ডী মন্দির, এর ঐতিহ্যবাহী পূজা এবং কাদা খেলা মিলিয়ে এটি এখন এক জনপ্রিয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য।
যদি সঠিকভাবে প্রচার করা যায় তবে Traditional Mud Festival Jaipur Bankura আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও আলোচনার বিষয় হয়ে উঠতে পারে।
বিশেষ তথ্য
স্থান: বৈতল গ্রাম, জয়পুর ব্লক, বাঁকুড়া জেলা, পশ্চিমবঙ্গ।
প্রধান কেন্দ্র: ঝগড়াই চণ্ডী মন্দির।
সময়: প্রতি বছর দুর্গাপূজার বিজয়া দশমীর দিন।
আকর্ষণ: পূজা, হোম-যজ্ঞ, কাদা খেলা, লোকোৎসব।
গুরুত্ব: ধর্মীয় ভক্তি, সামাজিক ঐক্য, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ।
বিজয়া দশমীর দিনে বৈতল গ্রামের ঝগড়াই চণ্ডী মন্দিরে অনুষ্ঠিত এই কাদা খেলা গ্রামীণ বাংলার সংস্কৃতি, বিশ্বাস ও আনন্দের এক অনন্য প্রকাশ। এটি একদিকে যেমন ভক্তির বহিঃপ্রকাশ, তেমনই আবার গ্রামীণ মানুষের সামাজিক ঐক্য ও মিলনের প্রতীক। এভাবেই বাংলার লোকজ ঐতিহ্য এখনও বেঁচে আছে মাটির গন্ধে, বিশ্বাসের শক্তিতে এবং আনন্দের উৎসবে।