প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতার রহস্য আজও বিশ্বের গবেষকদের টানে। Tutankhamun Mummy Mystery এই কৌতূহলকে আরও বাড়িয়ে দেয়। মাত্র ১৮ বা ১৯ বছর বয়সে মৃত্যুর পর ফ্যারাও তুতেনখামেনকে মমি করা হয়েছিল, কিন্তু তাঁর দেহে পাওয়া যায় এক অদ্ভুত বৈশিষ্ট্য—তাঁর পুরুষাঙ্গ ইরেক্ট বা লিঙ্গোত্থিত অবস্থায় সংরক্ষিত ছিল। এই ঘটনাই শতবর্ষ ধরে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।
তুতেনখামেন কে ছিলেন?
খ্রিস্টপূর্ব ১৩৩২ থেকে ১৩২৩ অবধি মিশর শাসন করেছিলেন তুতেনখামেন। মাত্র নয় বছর বয়সে তিনি সিংহাসনে বসেন। তাঁর নামের অর্থ “Living Image of Amun”। অল্প বয়সেই মৃত্যু তাঁকে ঘিরে অসংখ্য রহস্য তৈরি করেছে। ১৯২২ সালে ব্রিটিশ প্রত্নতত্ত্ববিদ হাওয়ার্ড কার্টার তাঁর সমাধি আবিষ্কার করেন। সেই সমাধি থেকে প্রায় পাঁচ হাজারেরও বেশি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, সোনা ও মূল্যবান সম্পদ উদ্ধার হয়।
মমি তৈরির অস্বাভাবিক প্রক্রিয়া
সাধারণত মিশরীয় মমি তৈরির সময় মৃতদেহে resin, linen এবং natural oils ব্যবহার করা হত। কিন্তু তুতেনখামেনের দেহে ব্যবহার করা হয়েছিল এক বিশেষ কালো পদার্থ—bitumen (natural tar)। এ কারণে তাঁর দেহ আংশিকভাবে দগ্ধ হয়েছিল। পাশাপাশি দেহের নির্দিষ্ট অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে, বিশেষত পুরুষাঙ্গের ক্ষেত্রে, মমিফিকেশন ছিল ব্যতিক্রমী।
কেন ইরেক্ট অবস্থায় মমি?
মিশরবিশারদ সালিমা ইকরানের মতে, এর পিছনে ধর্মীয় প্রতীক রয়েছে। প্রাচীন মিশরের মৃত্যুদেবতা Osiris ছিলেন পুনর্জন্ম, উর্বরতা ও কৃষির দেবতা। কিংবদন্তি অনুসারে, ওসিরিসের দেহ খণ্ডিত করা হয়েছিল, কিন্তু তাঁর স্ত্রী Isis তাঁর দেহ পুনর্গঠন করেছিলেন এবং তাঁকে পুনর্জীবিত করেছিলেন। তবে একটি অঙ্গ—পুরুষাঙ্গ—হারিয়ে যায়। তাই উর্বরতা ও পুনর্জন্মের প্রতীক হিসেবে ওসিরিসকে প্রায়শই erect penis সহ দেখানো হয়।
Tutankhamun Mummy Mystery গবেষকদের মতে, তুতেনখামেন চেয়েছিলেন মৃত্যুর পর নিজেকে ওসিরিস রূপে প্রতিষ্ঠা করতে। ইরেক্ট পুরুষাঙ্গ সেই প্রতীকী ক্ষমতা ও উর্বরতার চিহ্ন।
নীল নদের সঙ্গে সম্পর্ক
Osiris শুধু পুনর্জন্মের দেবতা নন, তিনি কৃষি ও নীল নদের বন্যার সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। নীল নদের কালো পলি জমে ফসল ফলাত, তাই একে উর্বরতার প্রতীক মনে করা হত। তুতেনখামেনের দেহে ব্যবহৃত কালো bitumen-ও ছিল নীল নদের উর্বরতার প্রতীক।
আধুনিক গবেষণার দৃষ্টিকোণ
২০১৪ সালে মিশরের কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় বলা হয়, তুতেনখামেনের দেহে আগুন লাগার মতো প্রমাণ পাওয়া যায়। ধারণা করা হয়, bitumen এর সঙ্গে অক্সিজেনের রাসায়নিক বিক্রিয়ায় তাঁর মমি দগ্ধ হয়েছিল। এই ঘটনাও তাঁকে আরও রহস্যময় করে তোলে।
কেন আজও আলোচনায় তুতেনখামেন?
Tutankhamun tomb discovery প্রত্নতাত্ত্বিক ইতিহাসের অন্যতম বড় আবিষ্কার। তাঁর সোনার মুখোশ আজও বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। কিন্তু তাঁর দেহের এই বিশেষত্ব তাঁকে ভিন্ন মাত্রায় পৌঁছে দিয়েছে।
গবেষকদের মতে, এটি প্রমাণ করে মিশরীয়রা মৃত্যুর পর জীবনের প্রতি কতটা গুরুত্ব দিতেন।
এটি দেখায় কীভাবে ধর্মীয় প্রতীক (fertility, rebirth, agriculture) শাসক শ্রেণির মমি তৈরিতে প্রতিফলিত হত।
এবং আজকের দিনে এসে এই রহস্য বিজ্ঞান, ইতিহাস ও পুরাণকে একসঙ্গে যুক্ত করেছে।
Howard Carter’s discovery কেবল মিশর নয়, গোটা বিশ্বের প্রত্নতাত্ত্বিক ইতিহাসকে পাল্টে দেয়।
তুতেনখামেনকে প্রায়শই বলা হয় “The Boy King” কারণ অল্প বয়সেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
প্রাচীন মিশরীয়রা বিশ্বাস করতেন, মৃত্যুর পর আত্মা (Ka) পুনর্জন্ম লাভ করে। তাই মৃতদেহ সংরক্ষণ ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
Tutankhamun curse নামক একটি কিংবদন্তি প্রচলিত আছে—যে সকল প্রত্নতত্ত্ববিদরা তাঁর সমাধি উন্মোচন করেছিলেন, তাঁদের অনেকেই রহস্যজনকভাবে মারা যান। যদিও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা অনুযায়ী, সমাধির ভিতরে থাকা ছত্রাক বা ব্যাকটেরিয়ার কারণে এমনটা হতে পারে।
Tutankhamun Mummy Mystery আজও বিশ্ববাসীর কাছে অমোঘ আকর্ষণ। তাঁর erect penis শুধুমাত্র এক অদ্ভুত ঘটনা নয়, বরং প্রাচীন মিশরের ধর্মীয় বিশ্বাস, উর্বরতা ও পুনর্জন্মের প্রতীকের প্রতিফলন। তিন হাজার বছর পরেও এই কিশোর ফ্যারাও যেন নতুন করে ইতিহাসে জীবিত হয়ে ওঠেন।