সুমন তরফদার। কলকাতা সারাদিন।
‘পাহাড়ে বন্যা ম্যান-মেড, এটা পরিকল্পিত বন্যা। সব রাজ্যেই অতিবৃষ্টি হচ্ছে। কিন্তু নৌকায় মতো বাংলায় সব জল এসে জড়ো হয়। কলকাতা বন্দর, ফারাক্কা ড্রেজিং করলে এই সমস্যা কম হত। মাইথন, ডিভিসি এবং পাঞ্চেতে পলি সরিয়ে দিলে সমস্যা কম হত।’ এভাবেই উত্তরবঙ্গের ভয়াবহ পরিস্থিতি ম্যান-মেড বলে হাসিমারা যাওয়ার পথে বিষ্ফোরক অভিযোগ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এদিন সংবাদ মাধ্যমের সামনে তিনি বলেন, ‘উত্তরবঙ্গের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। উত্তরবঙ্গে অতিরিক্ত বৃষ্টি হয়েছে। ভূটান এবং সিকিমের জল এসে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বিহারে বৃষ্টি হলে এ রাজ্যে জল চলে আসছে। উত্তরপ্রদেশে বৃষ্টি হলেও জল চলে আসছে। এতে গঙ্গার জল ভর্তি হয়ে যাচ্ছে। আমাদের জলটা যাবে কোথায়। ডিভিসি তো ইচ্ছামতো জল ছাড়ছে। মাইথন, ডিভিসি এবং পাঞ্চেতে জল ধারনা ক্ষমতার কোনও জায়গা নেই। এর থেকে বাঁধ না রাখলেই ভালো হত। দুর্গাপুর ব্যারেজ থেকে জল ছেড়ে দিচ্ছে। মাটিগাড়া, দার্জিলিং, মিরিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। যা জল ছাড়া হয়েছে তাতে নাগড়াকাটা বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ভলভো বাসে পর্যটকদের নিয়ে আসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিডিও, অফিস পুলিশ স্টেশন সব জলের তলায়। আমরা চেষ্টা করব নাগরাকাটা যাওয়ার। সেখানে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলির সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করব। আগামীকাল মিরিকে যাওয়ার চেষ্টা করব।’
মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, ‘পাহাড়ে বন্যা ম্যান-মেড, এটা পরিকল্পিত বন্যা। সব রাজ্যেই অতিবৃষ্টি হচ্ছে। কিন্তু নৌকায় মতো বাংলায় সব জল এসে জড়ো হয়। কলকাতা বন্দর, ফারাক্কা ড্রেজিং করলে এই সমস্যা কম হত। মাইথন, ডিভিসি এবং পাঞ্চেতে পলি সরিয়ে দিলে সমস্যা কম হত। গঙ্গা সংস্কারের নাম ভাষণ চলেছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। আমাদের সব প্রকল্পের টাকা বন্ধ করে দিয়েছে। আমাদের প্রাপ্য টাকাও দেওয়া হয়নি। মানুষের সাহায্যে আমরা সরকার চালাচ্ছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘সন্দেশখালিতে প্রচুর ঘরবাড়ি ভেঙে গিয়েছিল। পরেরদিনই ঠিক করে দিয়েছি। ২৩ জন পাহাড়ে বন্যায় মারা গিয়েছেন। এদের প্রত্যেকের পরিবারকে ৫ লাখ টাকা আর্থিক সাহায্য দেওয়া হবে। প্রতি পরিবারকে একজনকে স্পেশাল হোম গার্ডের চাকরি দেওয়া হবে। এই সাহায্য পরিবারগুলিকে করা হবে। ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান কেন্দ্রীয় সরকার করেনি। আমরা সেটা করছি। আমরা চাই বাঁধের দরকার নেই। এটা থেকে কী লাভ হল!’ উত্তরবঙ্গে পৌঁছেই নাগরাকাটায় দুর্গতদের সঙ্গে দেখা করেন তিনি। বার্তা দেন পাশে থাকার। সেখান থেকেই মমতার স্পষ্ট বার্তা, ‘রাজনীতি ভুলে এই সময় দুর্গতদের পাশে দাঁড়াতে হবে।’
নাগরাকাটায় বন্যা পরিস্থিতি দেখতে গিয়ে এদিন আক্রান্ত হতে হয় শিলিগুড়ির বিজেপি বিধায়ক শংকর ঘোষ এবং বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মুকে। তাঁদেরকে লক্ষ্য করে চলে ইটবৃষ্টি। ইটের আঘাতে একেবারে রক্তাক্ত অবস্থা হয় বিজেপি সাংসদের। শুধু তাই নয়, আহত হন শংকর ঘোষও। তাঁদের সঙ্গে থাকা নিরাপত্তারক্ষীদেরও মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তাল হয়ে ওঠে নাগরাকাটা এলাকা। ইতিমধ্যে ঘটনায় শাসকদল ঘটনার কিছুক্ষণ পরেই নাগরাকাটায় পৌঁছন মুখ্যমন্ত্রী। সেখান থেকেই এই ইস্যুতে কথা বলেন তিনি। বলেন, ‘কোনও ঘটনা ঘটুক আমি চাই না। তবে কেউ যদি প্লাবন এলাকায় ৩০/৪০ টা গাড়ি নিয়ে চলে যায় তাহলে জনতার ক্ষোভ হয়। রাজনীতি করতে আমি ওই এলাকায় যেতে চাই না।’ তবে ডিজি পুলিশকে ঘটনাস্থলে পাঠিয়েছিলাম। সবার সঙ্গে তিনি কথা বলে এসেছেন বলেও এদিন জানান মুখ্যমন্ত্রী।
একই সঙ্গে নাগরাকাটা থেকেই মানুষের প্রতি তাঁর আহ্বান, ‘শান্ত থাকুন, সংযত থাকুন। দুর্যোগের সময় সবাইকে মিলেমিশে সঙ্কটের মোকাবিলা করতে হবে। এটাই আমাদের মনুষ্যত্ব এবং মানবিকতা।’ অন্যদিকে স্থানীয় মানুষজনকে সতর্ক করে মুখ্যমন্ত্রী আরও জানান, ‘আগামী দু, একদিনের মধ্যে ফের জোয়ার আসতে পারে। ওই সময়টা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এখানে রাস্তার ধারে সরকারের তরফে ত্রাণশিবির খোলা হয়েছে। যাঁরা এসেছেন, তাঁরা ভালো করেছেন। যাঁরা এখনও নিজের বাড়ি আঁকড়ে রয়েছেন, আপনারা দ্রুত এখানে চলে আসুন। নিরাপদে থাকবেন। খাওয়াদাওয়া নিয়ে ভাবতে হবে না।’
ত্রাণ শিবির পরিদর্শনের ফাঁকে শান্তি বজায় রাখার বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মুখ্যমন্ত্রী ফেসবুক বার্তায় লিখেছেন, ‘আমার আন্তরিক আবেদন, এই দুর্যোগে বহু মানুষ মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। তাঁদের কষ্ট আমরা গভীরভাবে অনুভব করছি। তবুও, এই কঠিন সময়েও আমাদের মনে রাখতে হবে , একতা ও ধৈর্যই আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি। সবার কাছে অনুরোধ, সাহস হারাবেন না, সংযম ও সতর্কতা বজায় রাখুন। সরকার ও প্রশাসন সর্বাত্মকভাবে মানুষের পাশে আছে, এবং আমরা সবাই মিলে এই দুর্যোগ কাটিয়ে উঠব। দয়া করে শান্ত থাকুন, গুজবে কান দেবেন না, এবং চারপাশের মানুষকে সহযোগিতা করুন। এই সময় কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা কাম্য নয় , আমরা একে অপরের পাশে থেকে, একসাথে এই সংকটের মোকাবিলা করব।’ বিভিন্ন ত্রাণ শিবির ঘুরে দেখার ফাঁকে মুখ্যমন্ত্রী প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে নিহতদের পরিবারের সদস্যদের হাতে ৫ লক্ষ টাকার চেক তুলে দেন।