ভারতে রিয়েল এস্টেট সেক্টর সবসময়ই অন্যতম আকর্ষণীয় বিনিয়োগ ক্ষেত্র। বাড়ি, ফ্ল্যাট কিংবা জমি কিনলেই আমরা মনে করি কেবল রেজিস্ট্রেশন দলিল থাকলেই মালিকানা নিশ্চিত হয়ে গেল। কিন্তু সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের একটি গুরুত্বপূর্ণ রায়ে পরিষ্কার জানানো হয়েছে — শুধু রেজিস্ট্রি থাকলেই আইনি মালিকানা প্রমাণ হয় না।
এই রায় রিয়েল এস্টেট ক্রেতা ও বিনিয়োগকারীদের জন্য নতুন বার্তা দিয়েছে। এখন থেকে Property ownership documents in India নিয়ে আরও সচেতন থাকা জরুরি।
কেন শুধু রেজিস্ট্রি যথেষ্ট নয়?
অনেক সময় দেখা যায়, কোনো সম্পত্তির রেজিস্ট্রি থাকলেও সেটি অন্য কারও দখলে থাকে, কিংবা সেই জমি বা বাড়ি নিয়ে আইনি মামলা চলছে। ফলে কেবল রেজিস্ট্রি থাকলেই তা সম্পূর্ণ মালিকানা দেয় না।
আইন অনুযায়ী মালিকানা নিশ্চিত করতে গেলে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি থাকা আবশ্যক।
মালিকানা প্রমাণের জন্য প্রয়োজনীয় ১২টি নথি
১. বিক্রয় দলিল (Sale Deed)
এটি সবচেয়ে জরুরি নথি। বিক্রেতা থেকে ক্রেতার কাছে মালিকানা স্থানান্তরের একমাত্র আইনি দলিল হলো Sale Deed।
২. মাদার ডিড (Mother Deed)
এই নথিতে সম্পত্তির পূর্ববর্তী মালিকানার পূর্ণ ইতিহাস থাকে। অর্থাৎ, আগে কে মালিক ছিলেন, কীভাবে সেই মালিকানা স্থানান্তরিত হয়েছে ইত্যাদি সব বিবরণ এতে উল্লেখ থাকে।
৩. বিক্রয় ও ক্রয় চুক্তি (Sale & Purchase Agreement – SPA)
কেনাবেচার শর্তাবলী, মূল্য, অর্থপ্রদানের ধাপ — সবকিছু এই চুক্তিতে বিস্তারিত লেখা থাকে।
৪. বিল্ডিং প্ল্যান অনুমোদন
বাড়ি বা ফ্ল্যাটের ক্ষেত্রে অনুমোদিত বিল্ডিং প্ল্যান অত্যন্ত জরুরি। এটি না থাকলে ভবিষ্যতে আইনি জটিলতা দেখা দিতে পারে।
৫. দখলপত্র (Possession Letter)
কোনো সম্পত্তির উপর প্রকৃত দখল হস্তান্তরের প্রমাণপত্র। ডেভেলপার থেকে ফ্ল্যাট ক্রেতার কাছে হস্তান্তরের ক্ষেত্রেও এটি গুরুত্বপূর্ণ।
৬. কমপ্লিশন সার্টিফিকেট
এই নথি ছাড়া কোনো ভবন আইনি স্বীকৃতি পায় না। এটি প্রমাণ করে যে নির্মাণ কাজ স্থানীয় কর্তৃপক্ষের নিয়ম মেনে হয়েছে।
৭. অ্যাকাউন্ট সার্টিফিকেট (Revenue Records)
এতে জমির আয়তন, অবস্থান, খতিয়ান, দাগ নম্বর ইত্যাদি বিবরণ থাকে। মালিকানা যাচাইয়ে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
৮. অ্যালটমেন্ট লেটার
প্রথম বুকিংয়ের সময় ডেভেলপার যে অ্যালটমেন্ট লেটার দেয়, সেটিও মালিকানার একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হিসেবে বিবেচিত হয়।
৯. এনকামব্র্যান্স সার্টিফিকেট (Encumbrance Certificate)
এই সার্টিফিকেট প্রমাণ করে যে সম্পত্তির উপর কোনো আর্থিক দায় নেই। যেমন: ঋণের বোঝা বা আইনি আটকে থাকা।
১০. নো অবজেকশন সার্টিফিকেট (NOC)
যদি কোনো ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে সম্পত্তি কেনা হয়, তবে লোন শোধের পর ব্যাংক NOC দেয়। এটি ছাড়া মালিকানা দাবি করা যায় না।
১১. পরিচয় ও ঠিকানার প্রমাণ
ক্রেতা ও বিক্রেতার উভয়ের বৈধ পরিচয়পত্র (আধার, প্যান, ভোটার কার্ড) এবং ঠিকানার প্রমাণপত্র আবশ্যক।
১২. রেয়ারার (RERA) সম্মতি
ভারতে রিয়েল এস্টেট আইন অনুসারে প্রতিটি প্রকল্পকে RERA-তে নিবন্ধিত হতে হবে। এর মাধ্যমে স্বচ্ছতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়।
ক্রেতাদের জন্য সতর্কবার্তা
কোনো সম্পত্তি কেনার আগে সব নথি ভালোভাবে যাচাই করতে হবে।
বিশেষজ্ঞ আইনজীবীর সাহায্য নেওয়া সবসময়ই নিরাপদ।
কেবল দাম দেখে তাড়াহুড়ো করে কেনাকাটা করলে ভবিষ্যতে বড় ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন।
সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক রায় স্পষ্ট করেছে যে, Property ownership documents in India শুধু রেজিস্ট্রির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। মালিকানা নিশ্চিত করতে হলে উল্লিখিত সব নথি থাকা জরুরি। এতে একদিকে সম্পত্তি প্রতারণা কমবে, অন্যদিকে রিয়েল এস্টেট বাজারে স্বচ্ছতা বাড়বে।
রিয়েল এস্টেট বিনিয়োগের আগে তাই নিজের সুরক্ষার জন্য সব নথি খুঁটিয়ে যাচাই করুন, তারপরেই সিদ্ধান্ত নিন।