সুহানা বিশ্বাস। কলকাতা সারাদিন।
বিজেপি টাকার বস্তা নিয়ে নেমেছিল। ভোট কিনতে। চার-পাঁচজনের সঙ্গ কথা হলো দিল্লিতে। একেকটি ভোট কিনতে ১৫-২০ কোটি টাকা খরচ করেছে। বিক্রি হয় তো পণ্য বা দ্রব্য। ভোটে নির্বাচিত হয়ে জনপ্রতিনিধি মানুষের কথা বলতে সংসদে গিয়ে মানুষের আবেগকে বিক্রি করতে চাইছেন। জনপ্রতিনিধি বিক্রি হতে পারে তবে জনতা নয়। বিজেপি টাকার খেলায় নেমেছে। এভাবেই গতকাল উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ইন্ডিয়া জোটের একাধিক শরিক রাজনৈতিক দলের সাংসদরা বিজেপির টাকার কাছে বিক্রি হয়ে গিয়ে ক্রস ভোটিং করেছে বলে বিস্ফোরক অভিযোগ তুলে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ইন্ডি জোটের প্রার্থী বি সুদর্শন রেড্ডির যতগুলি ভোট পাওয়ার কথা ছিল তা পাননি। তাতেই সামনে এসেছে ক্রস ভোটিংয়ের সম্ভাবনা। ডায়মন্ড হারবারের তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ক্রস ভোটিংয়ের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেননি। তবে সামনে এনেছেন কয়েক কোটি টাকা দিয়ে ভোট কেনার চাঞ্চল্যকর দাবি। আর দিল্লি থেকে ফেরার পথে কলকাতা বিমানবন্দরে দাঁড়িয়ে অভিষেক বলেন, আমাদের বসিরহাটের সাংসদ হাজি নুরুল প্রয়াত হওয়ায় লোকসভায় আমাদের ২৮ জন সাংসদ আছেন, রাজ্যসভায় আছেন ১৩ জন। এই ৪১ জনই গতকাল ভোট দিতে উপস্থিত ছিলেন। সকলেই বিরোধী জোটের বি সুদর্শন রেড্ডিকে ভোট দিয়েছেন। অসুস্থতা সত্ত্বেও দিল্লিতে গিয়ে ভোট দিয়েছেন সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, সৌগত রায়। গোপন ব্যালটে ভোট হয়। ফলে চর্চা চলতেই পারে। ক্রস ভোটিং হয়েছে, নাকি বিরোধীদের ভোট বাতিল হয়েছে সেটা দেখতে হবে। যে যার মতো স্পেকুলেশন করছেন। ধরা যাক, ৩১৫টি ভোট পাওয়ার কথা। ১৫টা বাতিল হলে তো ক্রস ভোটিং হয় না। তবে ৫-৭টা ক্রস ভোটিং হতেও পারে।
সেই সঙ্গে সরাসরি বিজেপির বিরুদ্ধে টাকা দিয়ে ভোট কেনার অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, ক্রস ভোটিং হতেই পারে। কয়েকটি দলের কিছু সাংসদ বিজেপির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ। বিশেষ করে আম আদমি পার্টির রাজ্যসভার এক সাংসদ সরাসরি বিজেপিকে সাপোর্ট করেন। কেজরিওয়ালের বিরুদ্ধে সরব আপের মহিলা সাংসদ তো বিজেপিতে কার্যত নাম লিখিয়ে ফেলেছেন। বিজেপি টাকার বস্তা নিয়ে নেমেছিল। ভোট কিনতে। চার-পাঁচজনের সঙ্গ কথা হলো দিল্লিতে। একেকটি ভোট কিনতে ১৫-২০ কোটি টাকা খরচ করেছে। বিক্রি হয় তো পণ্য বা দ্রব্য। ভোটে নির্বাচিত হয়ে জনপ্রতিনিধি মানুষের কথা বলতে সংসদে গিয়ে মানুষের আবেগকে বিক্রি করতে চাইছেন। জনপ্রতিনিধি বিক্রি হতে পারে তবে জনতা নয়। বিজেপি টাকার খেলায় নেমেছে। একুশে দেখেছি বিধানসভা ভোটে। মহারাষ্ট্রে ভুরি ভুরি টাকা দিয়ে এমএলএ কেনাবেচা করে সরকার ভেঙে দেওয়া হয়েছে। ওরা উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দেয় না। ২০২৪ সালে লোকসভা ভোটের আগের দিন পোলিং এজেন্ট কিনতে হাজার হাজার টাকা ছড়িয়েছিল। ৫-১০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে। মানুষের টাকা। বাংলার মানুষ তা নিয়েছেন, নিয়ে বিজেপিকেই যোগ্য জবাব, উচিত শিক্ষা দিয়েছেন।
পুজোর পরেই আগামী অক্টোবর মাস থেকে বাংলা সহ গোটা দেশে ভোটার তালিকায় বিশেষ মিলির সংশোধনী প্রক্রিয়া নির্বাচন কমিশন শুরু করতে চায় বলে জানা গিয়েছে বিভিন্ন সূত্রে। সেই প্রসঙ্গে প্রশ্নের প্রেক্ষিতে অভিষেক বলেন, এসআইআর নিয়ে কোর্টের বাইরে, ভিতরে লড়াই করব। আমাদের প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেনি কমিশন। পরশু যেভাবে ধাক্কা খেয়েছে, দ্বাদশ নথি হিসেবে আধারকে মান্যতা দিতে হবে, এখানেই তো কমিশন হেরে গিয়েছে। আসলে উদ্দেশ্যই ঠিক নয়। এই ইলেক্টরাল রোলের ভিত্তিতে উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচন হলো। সেটি কি তাহলে অবৈধ? যদি ভোটার তালিকায় ভুয়োদের নাম থাকে তাহলে তার ভিত্তিতে ২০২৪ সালে কেন্দ্রীয় সরকার ক্ষমতায় এসেছে। প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থেকে রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতি- সব তো এই তালিকার ভিত্তিতেই। তাহলে প্রধানমন্ত্রী রিজাইন করুন। সরকার ভেঙে দিয়ে কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারিকার বুথে, গ্রামে, এলাকায় এসআইআর হোক। আমাদের আপত্তি নেই। লোকসভা ভোট অবৈধ হলে আমিও তো সাংসদ থাকব না। আমি তো ভয় পাচ্ছি না। তৃণমূল তো এসআইআর করে ভোট করতে বারণ করছে না। আমরা আমাদের কথা মানুষের কাছে রাখব। আমরা পালাচ্ছি না। বিজেপিই মানুষকে ফেস করতে চাইছে না।
অন্যদিকে শিলিগুড়িতে বসে নেপালের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নেপালের বর্তমান পরিস্থিতি প্রসঙ্গে অভিষেক জানান, আমরা শান্তির পক্ষে। নেপাল দ্রুত স্বাভাবিক হোক। প্রতিবেশী রাষ্ট্রের কোনওরকম ক্ষতি চাই না। বাংলাদেশ, নেপাল, শ্রীলঙ্কা ভালো থাকুক, শান্তিতে থাকুক। আমাদের নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, বিদেশ মন্ত্রক তথা কেন্দ্রীয় যে অবস্থান নেবে দেশের স্বার্থে, তাকে দলগতভাবে এবং রাজ্য সরকারের তরফে সমর্থন করা হবে। যেমনটা আমরা করেছিলাম পহেলগাঁওয়ের ক্ষেত্রেও।